অজুর অপচয় নিয়ে রাসুল যে সতর্কবার্তা দিয়েছেন
ফয়জুল্লাহ রিয়াদ
আল্লাহ তাআলার নাফরমানিতে যা কিছু খরচ হয়, ইসলামী শরিয়তে তাকেই ‘অপচয়’ সাব্যস্ত করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে, ‘এবং তারা যখন ব্যয় করে, তখন অপচয় করে না আবার কার্পণ্যও করে না। তাদের পন্থা হয় এতদুভয়ের মধ্যবর্তী।’ (সুরা : ফুরকান, আয়াত : ৬৭)
আল্লাহর অপছন্দ : আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে মানুষের কল্যাণে অগণিত নিয়ামত দান করেছেন।
এগুলো থেকে উপকৃত হতে মৌলিকভাবে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। তবে তা অযথা নষ্ট করা, আল্লাহর অবাধ্যতা কিংবা পাপের পথে ব্যয় করা এবং অপচয় করা সম্পূর্ণ নিষেধ। অপচয়কারীকে আল্লাহ তাআলা মোটেই পছন্দ করেন না। তিনি বলেন, ‘তোমরা খাও এবং পান করো।
অপচয় কোরো না। নিশ্চয় আল্লাহ অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৩১)
শয়তানের ভাই : অপচয়ের মূল অর্থ হলো সীমা লঙ্ঘন করা। সীমা লঙ্ঘন যেভাবেই হোক, তা অপচয়ের অন্তর্ভুক্ত।
যেমন—ভরা পেটে প্রয়োজনবিহীন অযথা আহার করতে থাকা, স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কোনো কিছু খাওয়া বা পান করা, অযথা সম্পদ বিনষ্ট করা, ভদ্রতার নামে খাবারের প্লেট পরিষ্কার না করে উঠে যাওয়া, হালাল ছেড়ে হারাম পন্থা অবলম্বন করা প্রভৃতি। এগুলো খুবই অপছন্দনীয় ও নিন্দনীয় কাজ। পবিত্র কোরআনে অপচয়কারীকে শয়তানের ভাই বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আত্মীয়-স্বজন এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকে তাদের প্রাপ্য দিয়ে দাও। কিছুতেই অপব্যয় কোরো না।
নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৬-২৭)
নিঃসন্দেহে ধন-সম্পদ আল্লাহ তাআলার এক বিশেষ নিয়ামত। এটি দিয়ে শুধু মানুষের প্রয়োজন পূরণ হয় না, বরং এর মাধ্যমে অনেক ধর্মীয় কাজে আঞ্জাম দেওয়া যায়। অসংখ্য নেক কাজের মাধ্যমও বানানো যায় এ সম্পদকে। এ জন্য এটাকে অহেতুক বিনষ্ট করা কিংবা মহান রবের অবাধ্যতায় ব্যয় করা নিঃসন্দেহে আল্লাহর প্রতি অকৃতজ্ঞতার অন্তর্ভুক্ত। তাই এটা থেকে বেঁচে থাকা অপরিহার্য।
অজুতে অপচয় : মহানবী (সা.) অজুতেও পানির অপচয় করতে নিষেধ করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, ‘একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.)-এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি অজু করছিলেন। মহানবী (সা.) তাকে দেখে বলেন, (হে সাদ!) এই অপচয় কেন? সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, অজুতেও অপচয় আছে হে আল্লাহর রাসুল? তিনি বলেন, যদি তুমি প্রবাহিত নদীতেও থাকো, তবু অজুতে অপচয় রয়েছে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪২৫)
মূলত রাসুলুল্লাহ (সা.) এটা বোঝাতে চেয়েছেন যে অজুতেও প্রয়োজন ছাড়া অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো তিনবারের বেশি ধৌত করা অপচয়ের অন্তর্ভুক্ত।
বিশিষ্ট মুহাদ্দিস আবদুল্লাহ ইবনে মোবারক (রহ.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার অজুর মধ্যে প্রয়োজন ছাড়া তিনবারের বেশি পানি ব্যবহার করবে, আমি তার গুনাহগার হওয়ার ভয় করি।’ (তিরমিজি : ১/১৭)
অজু একটা ইবাদত। এই ইবাদতেও যদি অপচয় অপছন্দ হয়, তাহলে অন্য বিষয়ে অপচয় কতটা অপছন্দের, তা বলাবাহুল্য। আল্লাহ তাআলা আমাদের অপচয় পরিহার করে মিতব্যয়ী হওয়ার তাওফিক দান করুন।