আদর্শ স্বামীর গুণাবলি
দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
সুখী দাম্পত্য সবারই প্রার্থনা। দাম্পত্য জীবন সুখী করতে হলে মানতে হবে ইসলামি বিধিবিধান ও অনুশাসন। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান অনুসরণ করতে হবে। তিনি যেভাবে স্ত্রীদের সঙ্গে আচরণ করতেন, যেভাবে স্বামী-স্ত্রীকে পরস্পরের প্রতি আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। স্ত্রীরা যেভাবে তাঁর সঙ্গে আচরণ করেছেন, সেগুলো জীবনে ধারণ করতে হবে। একজন স্ত্রীকে যেমন আদর্শবতী হতে হয়, তেমনি স্বামীকেও হতে হয় আদর্শবান। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই সর্বোত্তম, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম। আমি আমার স্ত্রীদের কাছে সর্বোত্তম।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৩৮৯৫)। আদর্শবান স্বামীর কয়েকটি গুণ এখানে তুলে ধরা হলো—
স্ত্রীর পরামর্শ নেওয়া
স্ত্রীকে যথাযথ সম্মান দেওয়া সুন্নত। কোনোভাবেই তাকে অবজ্ঞা করা যাবে না। তার সঙ্গে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কাজে পরামর্শ করা প্রয়োজন। স্ত্রীর মতো আপনার জন্য কল্যাণ কামনা এ জগৎসংসারে আর কজনে করে! রাসুলুল্লাহ (সা.) গুরুত্বপূর্ণ কাজে স্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করতেন। হুদাইবিয়ার সন্ধির সময় নবিজি (সা.) স্ত্রী উম্মে সালামা (রা.)-এর সঙ্গে পরামর্শ করে সুফল পেয়েছিলেন। (বুখারি, হাদিস: ২৭৩১)
একান্ত সময় যাপন
রাসুলুল্লাহ (সা.) সব স্ত্রীকে প্রতিদিন নিয়মিত সময় দিতেন। দিনের শুরুতে সবার কাছে একটা চক্কর দিতেন। সবাইকে সালাম দিতেন, খোঁজখবর নিতেন ও কুশল বিনিময় করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন আসর নামাজ থেকে অবসর হতেন, তখন তাঁর স্ত্রীদের গৃহে প্রবেশ করতেন, তাদের মধ্য হতে কারও অন্তরঙ্গ হতেন।’ (বুখারি, হাদিস: ৫২১৬)
স্ত্রীর কাজের প্রশংসা
স্ত্রী খাদিজা (রা.) সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মানুষ যখন আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, তখন সে (খাদিজা রা.) আমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে। মানুষ যখন আমাকে বঞ্চিত করেছে, তখন সে তাঁর সম্পদ দিয়ে আমাকে সমৃদ্ধ করেছে। আল্লাহ আমাকে তাঁর গর্ভ থেকে সন্তান দিয়েছেন; যখন তিনি অন্য স্ত্রীদের সন্তান থেকে আমাকে বঞ্চিত করেছেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৪৮৬৪)
রোমান্টিকতা বজায় রাখা
রাসুলুল্লাহ (সা.) স্ত্রীদের সঙ্গে প্রেমময় সম্পর্ক রাখতেন। পাত্রের এক জায়গায় মুখ লাগিয়ে পানি পান করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি হায়েজ অবস্থায় পানি পান করে সে পাত্র রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে দিতাম। আমার মুখ লাগানো জায়গায় তিনি তার মুখ লাগিয়ে পান করতেন। আমি হায়েজ অবস্থায় হাড়ের টুকরা চুষে তা রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে দিতাম। তিনি আমার মুখ লাগানো জায়গায় তাঁর মুখ লাগাতেন।’ (মুসলিম, হাদিস: ৩০০)
ভালোবাসা সঞ্চারিত নামে ডাকা
রাসুলুল্লাহ (সা.) স্ত্রীকে নিজের পছন্দমতো নামে ডাকতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) ভালোবেসে কখনো কখনো আমার নাম হুমায়রা বা লাল গোলাপ বলে ডাকতেন।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২৪৭৪)
স্ত্রীর কাজে সহযোগিতা করা
রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘরে স্ত্রীদের সঙ্গে কী কী করতেন; এ ব্যাপারে আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘তিনি স্ত্রীদের কাজে সহযোগিতা করতেন। যখন নামাজের সময় হতো তখন তিনি নামাজে যেতেন।’ (বুখারি, হাদিস: ৬০৩৯)
স্ত্রীর মন বোঝার চেষ্টা করা
রাসুলুল্লাহ (সা.) স্ত্রীদের মন বোঝার চেষ্টা করতেন। তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ করতেন। এক সফরে রাসুলুল্লাহ (সা.) এগিয়ে যান এবং সাফিয়া (রা.) পিছিয়ে পড়েন। এতে তিনি কেঁদে ফেলেন। নবিজি (সা.) তখন নিজ হাতে তাঁর চোখ মুছে দেন এবং কাঁদতে নিষেধ করেন।’ (নাসায়ি, হাদিস: ৯১৬২)
স্ত্রীকে প্রহার না করা
রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো স্ত্রীদের প্রহার করতেন না। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) কোনোদিন কাউকে আঘাত করেননি, কোনো নারীকেও না, খাদেমকেও না, আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ ছাড়া।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১০৮২)