কুরআন: মানবজাতির জন্য একটি পথপ্রদর্শক
হাফিজ মাওলানা ফখর উদ্দিন
মানবজীবনের প্রতিটি স্তরে সঠিক পথনির্দেশের গুরুত্ব অপরিসীম। এই দিকনির্দেশনা ছাড়া মানুষ ভুল পথে পরিচালিত হয়ে সমাজ, পরিবার ও আত্মার গভীরে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে। কুরআন মানবজাতির জন্য আল্লাহর সেই পথপ্রদর্শক, যা অন্ধকার থেকে আলোর পথে পরিচালিত করে। এটি শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় গ্রন্থ নয়; বরং এটি জীবনের সর্বাঙ্গীন দিক নিয়ে একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা।
কুরআনের পরিচয়
কুরআন হল আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ সর্বশেষ গ্রন্থ, যা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর মাধ্যমে সমগ্র মানবজাতির জন্য পাঠানো হয়েছে। এটি আরবি ভাষায় নাজিল হয়েছে এবং ২৩ বছরে ধাপে ধাপে প্রেরিত হয়েছে। কুরআনের ভাষা ও বিষয়বস্তু এমন যে, এটি মানুষের মন-মানসিকতা, চিন্তা-চেতনা ও দৈনন্দিন জীবনের সকল দিককে প্রভাবিত করে।
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে দিকনির্দেশনা
কুরআন শুধুমাত্র ইবাদতের জন্য নয়; বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করে।
নৈতিকতার শিক্ষা:
কুরআন মানুষের চরিত্র গঠনের জন্য নৈতিকতার ওপর বিশেষ জোর দিয়েছে। সত্যবাদিতা, ধৈর্য, ন্যায়পরায়ণতা, দানশীলতা ও ক্ষমার মতো গুণাবলীর ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।
পরিবার ও সামাজিক জীবন:
কুরআন পরিবার ও সমাজের গুরুত্বকে অত্যন্ত মর্যাদা দিয়েছে। পিতামাতার প্রতি শ্রদ্ধা, সন্তানদের সঠিকভাবে লালন-পালন, এবং স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক অধিকার নিয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা প্রদান করেছে।
অর্থনৈতিক দিকনির্দেশনা:
কুরআন সুদকে হারাম ঘোষণা করেছে এবং সৎ উপায়ে উপার্জনের প্রতি উৎসাহ দিয়েছে। জাকাত, দান ও অর্থনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজে দারিদ্র্য দূর করার পথ দেখিয়েছে।
বিচার ও শাসনব্যবস্থা:
বিচার ও শাসনব্যবস্থার ক্ষেত্রে কুরআন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা দিয়েছে। অন্যায়-অবিচার থেকে বিরত থাকা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দিয়েছে।
আধুনিক যুগে কুরআনের প্রাসঙ্গিকতা
আধুনিক যুগে প্রযুক্তি, বিজ্ঞান ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু এই অগ্রগতির মাঝেও নৈতিক অবক্ষয়, অন্যায় ও সামাজিক বিশৃঙ্খলা মানবজাতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কুরআন এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটি সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা প্রদান করে।
বিজ্ঞান ও জ্ঞান:
কুরআনে এমন অনেক আয়াত রয়েছে, যা মানুষের চিন্তাশক্তি ও গবেষণাকে উদ্বুদ্ধ করে। পৃথিবী, আকাশ, সমুদ্র, জীববিজ্ঞান ও মহাবিশ্ব নিয়ে কুরআনের অনেক বক্তব্য আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে মিলে যায়।
আত্মশুদ্ধি:
মানবমনের শান্তি ও আত্মশুদ্ধির জন্য কুরআনের শিক্ষা অত্যন্ত কার্যকর। এটি মানুষের ভেতর আত্মিক শুদ্ধি ও আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণের শিক্ষা দেয়।
উপসংহার
কুরআন একমাত্র গ্রন্থ যা শুধু মুসলমানদের জন্য নয়, বরং সমগ্র মানবজাতির জন্য একটি পথপ্রদর্শক। এটি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে একটি পরিপূর্ণ দিকনির্দেশনা প্রদান করে। যদি মানুষ কুরআনের শিক্ষা অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করে, তবে তাদের ব্যক্তি, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। আধুনিক যুগের প্রতিটি সমস্যার সমাধান কুরআনের শিক্ষায় নিহিত। তাই কুরআনের প্রতি আমাদের মনোযোগ দেওয়া ও তার শিক্ষাকে জীবনে প্রয়োগ করা অত্যন্ত জরুরি।