সুলতান শাহজালালের সিলেট বিজয়

আকতার সাদিক চৌধুরী
২৬ শাওয়াল মুজাররদ সূফি সুলতান হযরত শাহজালাল রাহিমাহুল্লাহ’র সিলেট বিজয়ের দিন এবং প্রাচীন ঐতিহ্য লাকড়ি ভাঙ্গা উৎসব। আরবি বর্ষপুঞ্জির দশম মাস শাওয়ালের ২৬ তারিখ ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দ’র এই দিনে ধর্মপ্রচারক সিপাহসালার শাহজালালের কাছে যুদ্ধে পরাজয় বরণ করে রাজা গৌড় গবিন্দ। বাধ্য হয় শ্রীহট্র থেকে পলায়ন করতেও। সিলেট বিজয়ের পর সেই সুলতানি আমল থেকে সাতশো বছরের ধারাবাহিকতায় তিনশত ষাট আউলিয়ার প্রধান সেনাপতি শাহজালাল রহ. এর মাজার সিলেট নগরির দরগা মহল্লায় ঝাঁক ঝমক ভাবে পালিত হয়ে আসছে এই উৎসব।
যাকে কেন্দ্র করে প্রতি বছরের ২৬-ই শাওয়াল মাজার প্রান্তরে জমা হয়ে থাকেন দেশের নানাদিক থেকে ছুটে আসা হাজার হাজার ভক্ত আশেকানগন। রেওয়াজ মোওয়াফিক তারিখের কায়দায় জুমু-আ সালাতের পর দরগাহে শাহজালাল থেকে মাথায় লাল ফিতা কারো গায়ে লাল ফতুয়া বা কারো সর্বাঙ্গে লালে রঙ্গিন হয়ে থাকা কয়েক হাজার ভক্তদের আনন্দ মিছিল স্লোগান সহকারে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে লাক্কাতোরা পাহাড়ের টিলা অভিমুখে যাত্রা করে টিলায় পৌছে মিলাদ মাহফিল শেষে লাকড়ি নিয়ে দরগাহ দিকে ফিরেন জালালি আশেকগন। এসময় মজনু হওয়া জালালিদের মুখে লালে লাল শাহজালাল বা জাল্লে জালাল শাহজালাল স্লোগানে কেঁপে ওঠে শাহজালালের পূন্যভূমি সিলেটের মাটি।
লাক্কা অর্থ লাকড়ি আর তোরা অর্থ কাটা বা ভাঙ্গা লাক্কাতোরা মানে লাকড়ি ভাঙ্গা। জালালি এ উৎসবটি যুগেরপর যুগ মানুষের মাঝে নতুন এক ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে মহামিলনমেলা ঘটানোর সুযোগ করে দেয়। লাক্কাতোরা চা বাগানের নামকরন এই লাকড়ি ভাঙ্গার বদলৌতেই। শাহজালালের সিলেট বিজয়ের সাথে লাকড়ি ভাঙ্গার উৎসব সম্পর্কে ইতিহাস তথ্যে পাওয়া যায় সিলেট বিজয়ের পর শাহজালাল রান্না আয়োজনের কাজে সঙ্গীদের সাথে নিয়ে বর্তমান লাক্কাতুরা চা বাগানের টিলা থেকে লাকড়ি কেটে এনেছিলেন। ধর্মযাজক শাহজালালের সেই লাকড়ি কাটাকে প্রাচীন ঐতিহ্যে স্বরন করতেই সাতশো বছর ধরে এই আয়োজন হয়ে থাকে। লাকড়ি ভাঙ্গা উৎসবের ঠিক তিন সপ্তাহ পর পালিত হয় শাহজালাল মাজারের বার্ষিক উরস মোবারক। আর টিলা থেকে আনা ওইসব লাকড়ি উরসের শিরনি রান্না কাজে জ্বালানো হয়ে থাকে বলে জানান মাজার খাদেমগন।