দেখার হাওরে সুবিপ্রবি স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের বিরোধিতা করে মানববন্ধন
সুনামগঞ্জের দেখার হাওরে প্রস্তাবিত সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের বিরোধিতা করে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সুনামগঞ্জ শহরের আলফাত উদ্দিন স্কয়ারে ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
হাওর ভরাট ও পরিবেশের ক্ষতি করে নয়’-এই স্লোগানকে সামনে রেখে আন্তঃউপজেলা অধিকার পরিষদ, সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), হাওর বাঁচাও আন্দোলন, হাউস, জীব-বৈচিত্র ও পরিবেশ উন্নয়ন ফোরাম, হাওর-নদী ও পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনসহ আরও কয়েকটি সংগঠন মানববন্ধন করেছে।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আন্তর্জাতিক মানের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান চাই,বিশ্ববিদ্যালয় চাই, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন দেখি কিন্তু সেটা হাওর ভরাট করে নয়। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র ধ্বংস মেনে নেওয়া যায় না। প্রস্তাবিত জায়গা পরিবর্তন করতে হবে। আমরা স্থান নির্ধারণ করছি না, কিন্তু বলছি-হাওর ধ্বংস করে নয়। বিকল্প জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করতে হবে। সেটা যেন জেলা সদরের আশে-পাশে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপক্ষে নন, বরং পরিবেশবান্ধব স্থানে টেকসই উন্নয়নের পক্ষে।
আন্তঃউপজেলা অধিকার পরিষদের সভাপতি ও পিস অ্যাম্বাসেডর নেটওয়ার্ক সুনামগঞ্জের সমন্বয়কারী নুরুল হক আফিন্দির সভাপতিত্বে এবং সুজন ও সুনামগঞ্জ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ফজলুল করিম সাঈদ এর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, হাওর বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায়,বাপা’র জেলা সভাপতি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাড. তৈয়বুর রহমান বাবুল, পরিবেশবাদী সংগঠন হাউস-এর নির্বাহী পরিচালক সালেহীন চৌধুরী শুভ, জীববৈচিত্র ও পরিবেশ উন্নয়ন ফোরাম-সিলেট-এর সভাপতি আবুল হোসেন, হাওর-নদী ও পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি মিজানুর রহমান রাসেল, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক আহ্বায়ক ও যুবশক্তির কেন্দ্রীয় সদস্য ইমনুদ্দোজা আহমদ, জেলা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ইজাজুল হক চৌধুরী নাছিম প্রমুখ।
বক্তারা জানান, সুনামগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় ফসলি হাওর ‘দেখার হাওর’ কৃষি ও পরিবেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই হাওরের আয়তন প্রায় ৪৫,৮৫৯ হেক্টর, যার মধ্যে কৃষিজমি রয়েছে ২৪,২১৪ হেক্টর এবং অকৃষিজমি ২১,৬৪৫ হেক্টর। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলস মৌজায় প্রস্তাবিত ১২৫ একর জমির মধ্যে অধিকাংশই বোরো ধানের আবাদি জমি,কিছু পতিত এবং একটি কবরস্থানও রয়েছে। এ জায়গা হাওরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। এর আশপাশে থাকা আহসান মারা ও জয়কলস ব্রিজের নিচ দিয়ে প্রবাহিত পানি কালনী নদীতে গিয়ে মিশে। এখানে ক্যাম্পাস নির্মাণ করা হলে জলপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে,যা বোরো জমি,জলাশয় এবং আশেপাশের জনবসতির ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।
প্রসঙ্গত, সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইনগতভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় ২০২০ সালের ১৮ নভেম্বর। এরপর ২০২৪ সালের ৩ নভেম্বর থেকে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে পাঠদান শুরু হয়। বর্তমানে প্রথম ব্যাচে (২০২৩-২৪) ১২৮ এবং দ্বিতীয় ব্যাচে (২০২৪-২৫) ১৪৩ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। শিক্ষক রয়েছেন ১৭ জন এবং স্টাফ ২৭ জন।
অস্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবে সুনামগঞ্জ জেলা সদর থেকে ১৮ কিমি দূরে টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, একটি কলেজ, মাদ্রাসা এবং কয়েকটি বাসা ভাড়া নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
সুনামগঞ্জের মানুষ উচ্চশিক্ষার সুযোগের স্বপ্ন দেখছে, কিন্তু সেটা যেন প্রকৃতি ও হাওরের জীবনবৈচিত্র ধ্বংসের বিনিময়ে না হয়-এমনটাই বলছে স্থানীয়রা। প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত বিকল্প স্থান বিবেচনা করে পরিবেশবান্ধব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।