ইসরায়েলকে নিষিদ্ধ করতে ৫০ খেলোয়াড়ের চিঠি
চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে জাতিসংঘের একদল বিশেষজ্ঞ ও স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ এ দাবি তুলেছিলেন। তুরস্ক ফুটবল ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম হাজিওসমানোউলুও ফিফা, উয়েফা ও জাতীয় ফুটবল সংস্থাগুলোর প্রধানদের কাছে চিঠি লিখে ইসরায়েলকে ফুটবল প্রতিযোগিতা থেকে নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এবার নতুন করে আওয়াজ তুলেছেন ৫০ জন সাবেক ও বর্তমান খেলোয়াড়। তাঁরা সবাই মিলে সই করা একটি চিঠি পাঠিয়েছেন ইউরোপিয়ান ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা উয়েফায়। দাবি একটাই—উয়েফার প্রতিযোগিতা থেকে ইসরায়েলকে নিষিদ্ধ করা হোক।
এ তালিকায় আছেন ইংল্যান্ডের সাবেক অলরাউন্ডার মঈন আলী, ব্রিটিশ বক্সার জ্যাক চেল্লি, মোনাকোর ফরাসি মিডফিল্ডার পল পগবা, ব্রিটিশ ঘোড়দৌড়ে প্রথম হিজাবধারী জকি খাদিজা মেল্লা, ক্রিস্টাল প্যালেসের মালিয়ান মিডফিল্ডার চিয়েক ডৌকুরে, চেলসির সাবেক মরোক্কান উইঙ্গার হাকিম জিয়েশ, অ্যাস্টন ভিলার ডাচ উইঙ্গার আনোয়ার এল ঘাজি এবং লেস্টার সিটির সাবেক কোচ নাইজেল পিয়ার্সন।
আনোয়ারের গল্পটা আলাদা করে বলার মতো। ২০২৩ সালে তিনি যোগ দিয়েছিলেন জার্মান ক্লাব মেইঞ্জে। কিন্তু ফিলিস্তিনের পক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করায় নভেম্বরে তাঁর সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে ক্লাবটি। পরে জার্মান আদালত রায় দেন, মেইঞ্জ অন্যায় করেছে আনোয়ারের সঙ্গে। বর্তমানে তিনি খেলছেন কাতারের আল সাইলিয়ায়।
উয়েফাকে পাঠানো চিঠিতে ফিলিস্তিনের প্রয়াত ফুটবলার সুলেইমান আল-ওবেইদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। ‘ফিলিস্তিনি পেলে’ নামে খ্যাত সুলেইমান গত আগস্টে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। চিঠিতে লেখা হয়, ‘বেঁচে থাকতে খেলাধুলার মাধ্যমে আশার সঞ্চার করেছেন তিনি। মৃত্যুর মাধ্যমে তিনি মনে করিয়ে দিলেন, কেন খেলাধুলার সংস্থাগুলোর এখনই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।’
চিঠিতে জাতিসংঘের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনও যুক্ত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ও নিরাপত্তা বাহিনীর উদ্দেশ্য হলো গাজার ফিলিস্তিনিদের আংশিক বা পুরোপুরি ধ্বংস করার গণহত্যামূলক অভিপ্রায় বাস্তবায়ন করা। ইসরায়েল অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
অ্যাথলেটদের বক্তব্য, খেলাধুলার সংস্থাগুলোর দায়িত্ব হলো এমন দেশকে প্রতিনিধিত্ব করা দলগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, যাদের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ নিশ্চিত করেছে যে তারা গণহত্যা চালাচ্ছে।
চিঠি পৌঁছে দেওয়ার কাজটি করেছে ব্রিটেনভিত্তিক সংগঠন নুজুম স্পোর্টস। ‘অ্যাথলেটস ফর পিস’ ব্যানারে উয়েফায় জমা দেওয়া এ চিঠিতে বলা হয়েছে, মুসলিম, অমুসলিম কিংবা ধর্মবিশ্বাসহীন—ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়াতে আগ্রহী নানা খেলোয়াড় তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।
চিঠির শেষ অংশে লেখা হয়, ‘আমরা উয়েফাকে আহ্বান জানাই, অবিলম্বে যেন ইসরায়েলকে সব প্রতিযোগিতা থেকে নিষিদ্ধ করা হয়। যত দিন না তারা আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলে, বেসামরিক মানুষ হত্যা ও অনাহার সৃষ্টি বন্ধ করে। অন্যায়ের মুখে খেলাধুলা নিরপেক্ষ থাকতে পারে না। নীরব থাকা মানে হলো মেনে নেওয়া যে কিছু মানুষের জীবন অন্যদের জীবনের চেয়ে কম মূল্যবান। আমরা বিশ্বাস করি, সব দেশ ও সব মানুষের জন্য একটাই মানদণ্ড থাকা উচিত—কোনো দ্বিচারিতা ছাড়া ন্যায়বিচার।’
জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলও ইসরায়েলকে ফুটবল থেকে সাময়িক বহিষ্কারের আহ্বান জানিয়েছে। সর্বশেষ দুটি ফিফা কংগ্রেসে একই দাবি তুলেছে প্যালেস্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন।
তবে যুক্তরাষ্ট্র ভিন্ন সুরে কথা বলছে। গত বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন জানায়, ২০২৬ বিশ্বকাপে ইসরায়েলকে নিষিদ্ধ করার চেষ্টা ঠেকাতে তারা কাজ করবে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বিবিসি স্পোর্টকে বলেন, ‘ইসরায়েলের জাতীয় ফুটবল দলকে বিশ্বকাপ থেকে নিষিদ্ধ করার কোনো চেষ্টা যেন সফল না হয়, সে জন্য আমরা অবশ্যই কাজ করব।’
এদিকে গাজায় সংঘাত চললেও ইসরায়েলের জাতীয় দল ও ক্লাব দলগুলো ফিফা ও উয়েফার প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে। আগামী ১১ অক্টোবর অসলোয় নরওয়ের বিপক্ষে এবং ১৪ অক্টোবর ইতালির উদিনেসেতে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ খেলবে তারা। বর্তমানে উয়েফার বিশ্বকাপ বাছাইয়ে নিজেদের গ্রুপে ৯ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছে ইসরায়েল। শীর্ষে থাকা নরওয়ের চেয়ে তারা ৬ পয়েন্ট পিছিয়ে। নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি গ্রুপের শীর্ষ দল সরাসরি বিশ্বকাপে খেলবে, আর দ্বিতীয় দল যাবে প্লে-অফে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে হামলায় ইসরায়েলি হিসাব অনুযায়ী ১ হাজার ১০০ জন নিহত হন এবং প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করা হয়। সেই ঘটনার পর থেকে ইসরায়েলে আর কোনো উয়েফা প্রতিযোগিতার ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়নি। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের হিসাবে, ইসরায়েলের স্থল অভিযানের পর থেকে গাজায় নিহত হয়েছেন ৬০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি।