লিবিয়ায় ১০৮ বাংলাদেশি আটক, মানবপাচার চক্রের দালালের বাড়িতে বিক্ষোভ
ভাগ্যবদলের আশায় ঋণ, ধার আর জমি বিক্রি করে পা বাড়িয়েছিলেন ইতালির পথে। কিন্তু সেই পথ গিয়ে থেমেছে লিবিয়ার বালুকাময় উপকূলে, ভূমধ্যসাগরের ঢেউ আর বন্দিশালার অন্ধকারে। লিবিয়া উপকূলে কোস্ট গার্ডের হাতে আটক হওয়া বরিশালের গৌরনদী উপজেলার ৬০ এবং আগৈলঝাড়া উপজেলার ১০ যুবককে ছাড়িয়ে আনার দাবিতে এখন মানবপাচার চক্রের দালালের বাড়িতে অবস্থান নিয়েছেন ভুক্তভোগী যুবকদের স্বজনরা।
গত শনিবার (১৮ অক্টোবর) থেকে আজ মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) পর্যন্ত গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ডুমুরিয়া গ্রামের ইতালি প্রবাসী ও মানবপাচার চক্রের দালাল হিসেবে পরিচিত জাকির মোল্লার বাড়ির সামনে বিক্ষোভ চলছে।
বিক্ষোভকারীদের কেউ দরজায় অবস্থান নিচ্ছেন, কেউ আবার জাকিরের মা ও বোনকে ঘরে আটকে রেখেছেন। ইতালি থেকে ছেলেদের ফেরার দাবিতে প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছেন স্বজনরা।
লিবিয়ায় আটক ১০৮ বাংলাদেশি
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, লিবিয়ার কোস্ট গার্ড তিনটি স্পিডবোট আটক করে, যাতে মোট ১০৮ বাংলাদেশি ছিলেন। এর মধ্যে ৬০ জন গৌরনদীর, ১০ জন আগৈলঝাড়ার। অপর ৩৮ জন ঢাকা, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও সিরাজগঞ্জের বাসিন্দা। আটক হওয়া যুবকদের মধ্যে থেকে ইতিমধ্যে গৌরনদীর ৩৫ জনকে মুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তাদের পরিবার।
মুক্তি পাওয়া যুবকদের পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার ১১ জন, রবিবার ৯ জন এবং সোমবার রাতে আরো ১৫ জন যুবককে মুক্ত করা হয়। মুক্তি পাওয়া কয়েকজন পরিবারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগও করেছেন। বার্থী গ্রামের লাদেন প্যাদার মা নাছিমা বেগম বলেন, ‘ছেলেকে পাঠিয়েছিলাম ভালো জীবনের আশায়। এখন জানতে পারছি, সে নাকি কারাগারে। প্রতিদিন বুক ফেটে যাচ্ছে।’ আরেক অভিভাবক ফারুক মোল্লা বলেন, ‘১৮ লাখ টাকা দিয়েছি। এখন না পাচ্ছি ছেলে, না পাচ্ছি টাকাটা।
অভিভাবকরা জানান, গৌরনদীর জামাল মোল্লার ছেলে জাকির মোল্লা, বগুড়ার ইতালি প্রবাসী সাজু, কুষ্টিয়ার লিটনসহ কয়েকজন দালালের কাছে ১৫ থেকে ১৮ লাখ টাকা করে দিয়ে তারা ছেলেদের ইতালি পাঠান।
সাগরপথে বিপর্যয়ের শুরু
গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে লিবিয়ার বেনগাজি উপকূল থেকে তিনটি স্পিডবোটে ১০৮ জন বাংলাদেশিকে ইতালির উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়। যাত্রার তিন থেকে চার ঘণ্টা পর দুটি স্পিডবোট লিবিয়া কোস্ট গার্ড আটক করে। তখন ৭০ জন বাংলাদেশি, তাদের মধ্যে ৫৮ জন গৌরনদীর যুবক ধরা পড়েন। এরপর থেকে ৩৮ জন যুবকের আর কোনো খোঁজ মেলেনি।
বন্দিদশা ও মুক্তির প্রক্রিয়া
গত ১৫ সেপ্টেম্বর মানবপাচার চক্রের দালালরা জানায়, আটক ৭০ জনকেই লিবিয়ার গাম্মুদা কারাগারে সোপর্দ করা হয়েছে। পরে খবর আসে আটকদের বাংকিনা কারাগারের পাশে একটি গোডাউনে রাখা হয়েছে। সেখানে থেকে কয়েকজন যুবক তাদের পরিবারের কাছে চিরকুট পাঠিয়ে জানান, তারা বন্দি অবস্থায় আছেন। এ তথ্য জানার পর লিবিয়া ও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় থাকা দালালরা সক্রিয় হয়। কয়েক লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে গত শুক্রবার রাতে বাংকিনা থেকে প্রথম দফায় তিনজনকে মুক্ত করা হয়।
দালাল পরিবার আত্মগোপনে
এদিকে স্পিডবোট আটকের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই জাকির মোল্লার বাবা জামাল মোল্লা, মামা ইউপি সদস্য হাবুল বেপারী, স্ত্রী ও শ্বশুর আত্মগোপনে চলে যান। তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ। এরপর থেকেই গৌরনদীর পশ্চিম ডুমুরিয়ায় জাকির মোল্লার বাড়িতে বিক্ষোভ শুরু হয়।
জাকিরের মা নুরজাহান বলেন, ‘আমার ছেলে লিবিয়ায় থাকা দুই সহযোগীর মাধ্যমে তিন দিনে ৩৫ জনকে ছাড়িয়েছে। বাকি সবাইকেও তিন দিনের মধ্যে মুক্ত করা হবে।’