উভয় জগতের সফলতা ধৈর্যের ওপর নির্ভরশীল
মদিনার মসজিদে নববির ইমাম ও খতিব শায়েখ ড. খালিদ আল-মুহান্না গত শুক্রবার জুমার বয়ানে মহান আল্লাহর আনুগত্যে ধৈর্যের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করেছেন এবং উভয় জগতের সফলতা অর্জন ধৈর্যের ওপর নির্ভরশীল বলে উল্লেখ করেছেন।
শায়েখ ড. খালিদ আল-মুহান্না বলেন, হে আল্লাহর বান্দারা, ধৈর্য হলো সকল ইবাদতের মূল ভিত্তি। এটিই প্রতিটি কল্যাণের বীজ, যার ফল বান্দা দুনিয়া ও আখেরাতে অর্জন করে। উভয় জগতে সফলতা এর ওপর নির্ভরশীল। জান্নাতে প্রবেশ এর বাস্তবায়নের ওপর এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি এই গুণ দ্বারা চরিত্রবান হওয়ার ওপর শর্তযুক্ত।
তিনি আল্লাহর বাণী উদ্ধৃত করেন, ‘আর ফেরেশতারা তাদের কাছে প্রতিটি দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। বলবে, তোমাদের প্রতি সালাম, যেহেতু তোমরা ধৈর্যধারণ করেছ। আখেরাতের এই আবাস কতই না উত্তম।’ (সুরা রাদ ২৩-২৪)
খতিব ব্যাখ্যা করেন, আল্লাহর হেকমত এটাই দাবি করে যে, ধৈর্য ছাড়া কোনো কল্যাণ অর্জিত হয় না। মানুষ স্বভাবতই এটা উপলব্ধি করে। জীবিকা অর্জনের চেষ্টা এবং ক্ষতিকর বিষয় থেকে আত্মরক্ষা তারই প্রমাণ। তিনি উল্লেখ করেন, পবিত্র কোরআনের প্রায় একশ স্থানে ধৈর্যের বিষয়ে তাগিদ দেওয়া হয়েছে যে, ধৈর্যধারণ করা আল্লাহর আদেশ। ধৈর্যধারণকারীর ওপর মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য আসে। মহান আল্লাহ ধৈর্যশীলদের মর্যাদা ও সম্মান সম্পর্কে জানিয়েছেন। তিনি তাদের বিজয়, সুরক্ষা ও তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে বিশেষ সাহায্য প্রদানের কথা বলেছেন।
খতিব জোর দিয়ে বলেন, দুনিয়া হলো পরীক্ষা ও ফেতনার স্থান। যে এখানে আসে, তাকে এর কঠোর পরীক্ষার সম্মুখীন হতেই হবে। ধৈর্য নামক দুর্গ ছাড়া বান্দাকে রক্ষা করার আর কোনো দুর্গ নেই। যে বান্দা সেই দুর্গে আশ্রয় নেয় এবং নিজেকে রক্ষা করে, সে মুক্তি পায়, সফল ও জয়ী হয়। আর কঠিন দিনে দয়ালু আল্লাহ ধৈর্যশীলদের জন্য যে পূর্ণ প্রতিদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা দ্বারা সে সান্ত্বনা লাভ করে।
খতিব আরও যোগ করেন, যে ব্যক্তি ধৈর্যের গুণে চরিত্রবান হয়েছে, মহান আল্লাহ তাকে এমন শক্তি দান করেছেন, যা তার প্রবৃত্তির কামনাকে দমন, আত্মাকে পরাভূত এবং এর ওপর শাসন প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। যখন বান্দা এই শক্তি লাভ করে, তখন তার নফস তাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারে না।
তিনি স্পষ্ট করেন, ধৈর্যের শক্তি দৃঢ় সংকল্প ও স্থিরতা ছাড়া অর্জন করা যায় না। এর জন্য বান্দাকে তার নফসের সঙ্গে সংগ্রাম করতে হয়, যাতে ধৈর্য তার পথপ্রদর্শক হয় এবং প্রভুর কাছে পৌঁছানোর পথ আলোকিত করে।
খতিব বলেন, মুমিনের জন্য ধৈর্য অবশ্যই প্রয়োজন, যতক্ষণ পর্যন্ত তার ওপর শরিয়তের বিধান বহাল থাকে। তিনি ব্যাখ্যা করেন, মহান আল্লাহর ইবাদত, ওয়াজিব ও সুন্নতগুলো পালন এবং তার নিষিদ্ধ বিষয়গুলো এড়িয়ে চলা, এই সবকিছুই ধৈর্য অবলম্বন, এই গুণে সজ্জিত হওয়া, এতে অটল থাকা এবং নফসকে এর ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখার ওপর নির্ভরশীল।
তিনি আল্লাহর এই বাণী উল্লেখ করেন, ‘তিনি আসমান-জমিন এবং এ দুয়ের মাঝে যা আছে সবকিছুর রব। অতএব তার ইবাদত করো এবং তার ইবাদতে ধৈর্যশীল থাকো।’ (সুরা মারইয়াম ৬৫)
খতিব ইঙ্গিত করেন, জান্নাতের পথ আবৃত রয়েছে এমন সবকিছু দিয়ে যা বান্দারা অপছন্দ করে। যেমন ভালো-মন্দ দ্বারা পরীক্ষা, আদেশ-নিষেধ এবং আল্লাহর দেওয়া কষ্টদায়ক তকদির, যেখানে বান্দার কোনো হাত নেই। আর জাহান্নামের পথ আবৃত রয়েছে এমন সবকিছু দিয়ে, যা মানুষ কামনা করে। যেমন নফসের প্রবৃত্তি ও শয়তানের প্ররোচনার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা।
খুতবার শেষে খতিব বলেন, আল্লাহ যাকে ধৈর্য দান করেছেন, তিনি তাকে এক বিশাল কল্যাণ দান করেছেন। ধৈর্য হলো অস্থির আত্মার ওষুধ। যখন বান্দা এর তিক্ততা সামান্য পান করে, তখন সে বহুলাংশে শান্তি লাভ করে। ফলে সে বিপদের সময় হতাশ হয় না এবং নেয়ামত ও কল্যাণের সময় কৃপণতা করে না।
২৮ নভেম্বর শুক্রবার, মসজিদে নববির জুমার খুতবা। সৌদি প্রেস এজেন্সি থেকে অনুবাদ করেছেন মুহাম্মদ আতিকুর রহমান







