সুনামগঞ্জে ১৬ ঘন্টা পর পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার
সুনামগঞ্জে তিন দফা দাবি আদায়ে সুনামগঞ্জ জেলা পরিবহন শ্রমিক ঐক্য পরিষদ এর ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধ ১৬ ঘন্টা পর প্রত্যাহার করা হয়েছে। এতে করে দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেয়েছেন জনগন।
সোমবার (০৪ আগস্ট) দুপুরে জেলা প্রশাসনের আশ্বাসে তিন দফা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দেওয়া অনির্দিষ্টকালের বাস মালিক ও শ্রমিকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সুজাউল কবির।
দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নেতা,সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (সুবিপ্রবি) প্রশাসন,পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের যৌথ বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত হয়। এতে আশ্বাস দেওয়া হয়, তিন দফা দাবির বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর পূর্বে গতকাল রবিবার (৩ আগস্ট) রাত ৮টা থেকে সুনামগঞ্জ জেলা পরিবহন শ্রমিক ঐক্য পরিষদ এর ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ডাক দেয়। এতে করে সুনামগঞ্জ সিলেট আঞ্চলিক মহা সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। সকাল থেকে কোনো ধরনের যানবাহন চলাচল করতেও দেয়নি শ্রমিকরা। এতে করে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে সুনামগঞ্জ থেকে সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যেতে সুনামগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে আসা যাত্রীগন। পরে পরিবহন ধর্মঘট এর সমাধানের জন্য। সুনামগঞ্জ জেলা পরিবহন শ্রমিক ঐক্য পরিষদ এর দায়িত্বশীলদের সাথে আজ দুপুরে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আলোচনা বসে জেলা প্রশাসক ডাঃ ইলিয়াস মিয়া।
পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের তিন দফা দাবি গুলো হলো, যারা গাড়ি ভাঙচুর করে ও মারধর করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, একজন বাস চালককে পাঁচ মাস ধরে জেলে আছে, তার জামিন দিতে হবে। এছাড়াও সিএনজি শ্রমিক ইউনিয়নের প্রচার সম্পাদক আনোয়ারের উপর হামলা করে সন্ত্রাসীরা তার শরীরের হাড় ভেঙে দিয়েছে, এই মামলার আসামীদেরকে গ্রেপ্তার করতে হবে।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শক্তিয়ারখলা গ্রামের বাসিন্দা নাজিম মিয়া সিলেট যাবার জন্য সুনামগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে এসে আটকা পড়েছেন। তিনি বলেন, কোনো কিছু হলেই পরিবহণ শ্রমিককরা সড়ক অবরোধ করে ধর্মঘট ডাক দেয় আর আমাদের কে হয়রানি করে। তাদের কাছে আমরা যাত্রীরা জিম্মি হয়ে পড়েছি। প্রশাসন ও মনে হয় জিম্মি। তাদের ত অন্য পথে তাদের সমস্যার সমাধান করতে পারতো।
সুনামগঞ্জ শহরের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম জানান, পরিবহন মালিক শ্রমিক ও এর সাথে জড়িতরা নিজের মত করেই সড়ক অবরোধ করে ধর্মঘট ডাকে তারা যে অনিয়ম করে তার জন্য কেউ ত সড়ক অবরোধ ধর্মঘটের ডাক দেয়া। তাহলে সাধারণ জনগন কেন পরিবহন শ্রমিক মালিকের কারনে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। গত কাল রবিবারও দুই ঘটনা সড়ক অবরোধ করে চরম দুর্ভোগে ফেলেছে সর্বস্তরের জনগণকে।
আরেক যাত্রী বলেন, সকাল থেকে অপেক্ষার পর দুপুরে আবরোধ প্রত্যাহার করায় এখন যানবাহন চলছে। এত ক্ষন দূর্ভোগের শিকার হয়েছিলাম। কিছু হলেই পরিবহণ শ্রমিকরা যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় এর একটা বিহিত করা প্রয়োজন। তারা দের আন্দোলন সংগ্রাম যা করার করোক যানবাহন বন্ধ করে কেন।
সুনামগঞ্জ জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সুজাউল কবির জানান, প্রশাসন আমাদের দাবিগুলো পূরণের আশ্বাসে দিয়েছেন এবং ভবিষ্যতে এমন যেনো না হয় তাও বলেছেন। আমরা আশ্বাস্থ হয়ে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেছি।
প্রসঙ্গত,গত রবিবার(৩ আগষ্ট) ভাড়া নিয়ে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (সুবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের ঝগড়ার ঘটনায় সুনামগঞ্জ-সিলেট মহাসড়কের বাস-মালিক ও শ্রমিকদের কর্মবিরতির কর্মসূচি দেওয়া হয়। এতে আন্ত:জেলা বাসসহ সকল প্রকার বাস চলাচল বন্ধ যায়। কর্মবিরতির কারণে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জরুরি প্রয়োজনে গমনকারী যাত্রীরা আটকা পড়েন। সোমবার সকাল থেকে সুনামগঞ্জ বাসস্টেশনসহ বিভিন্ন এলাকায় কর্মবিরতি পালনকারী শ্রমিকরা পিকেটিং করায় যাত্রীবাহি বাস চলাচল বন্ধ হয়।
রবিবার জেলার শান্তিগঞ্জ সুবিপ্রবি’র অস্থায়ী ক্যাম্পাসে সুনামগঞ্জ থেকে কিছু শিক্ষার্থী যাবার সময় ভাড়া নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে শান্তিগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একটি গাড়ি ভাঙচুর করেছে। শ্রমিকদের মারধর করে ক্যাম্পাসে আটকে রাখে (শিক্ষার্থীরা) বলে অভিযোগ জানিয়েছে পরিবহন শ্রমিকরা। এই ঘটনার বিচারের দাবিতে রবিবার বিকাল ৩টা থেকে প্রায় দুই ঘন্টা সড়ক অবরোধ করেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। পুলিশ প্রশাসনের সাথে তাদের বৈঠকের পর অবরোধ তুলে নেয়া হলেও, কর্মবিরতি চালিয়ে যান মালিক- শ্রমিকরা। যা সোমবার দুপুরে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে যৌথ সভায় প্রত্যাহার করা হয়।







