আ.লীগ নেতা মাদ্রাসা শিক্ষক ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলা মাদ্রাসা শিক্ষক কর্মচারী ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগে কারাবাসকারী আওয়ামীলীগ নেতা মোঃ ফারুক আহমদকে। অভিযোগ উঠেছে সংগঠনটি আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের পদ পদবী দিয়ে এভাবে আওয়ামীলীগ পূনবার্সন করছেন।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের কলাউড়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসা হল রুমে সংগঠনটির সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সদস্য সচিব মাওলানা ছালেহ আহমদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট দোয়ারাবাজার উপজেলা মাদ্রাসা শিক্ষক কর্মচারী ফোরামের কমিটি ঘোষণা দেন।
এতে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত করা হয় ২০২৪ সালের ৪ আগষ্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার দায়ে অভিযুক্ত ও দীর্ঘদিন কারাবাস থাকা কলাউড়া মাদ্রাসার শিক্ষক ফারুক আহমদকে।
আওয়ামীলীগ নেতা ফারুক আহমদ (৪৪) তিনি বাংলাবাজার ইউনিয়নের কলাউড়া গ্রামের মৃত তৈয়ব আলী’র পুত্র ও ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি।
জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার দায়ে গত ৪ এপ্রিল রাতে উপজেলার বাংলাবাজার এলাকা থেকে তাকে আটক করে দোয়ারাবাজার থানা পুলিশ। দীর্ঘদিন কারাবাসের পর জামিনে মুক্ত হয়ে পূনরায় এলাকায় আধিপত্য বিস্তার শুরু করেন এই আওয়ামীলীগ নেতা।
অভিযুক্ত আওয়ামিলীগ নেতা ফারুক আহমদকে এমন পদ দেওয়ায় কমিটি প্রকাশের পর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। চলছে নানান সমালোচনা। অভিযোগ উঠেছে সংগঠনটি আওয়ামীলীগ পূনবার্সন করছে।
অভিযোগ রয়েছে, বিগত ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বাংলাবাজার ইউনিয়নের কলাউড়া গ্রামে বিএনপি-জামায়াতের কর্মী সমর্থকদের বাড়ীঘরে হামলা,ভাংচুর, লুটপাট ও হত্যার হুমকিদাতা আওয়ামীলীগের নেতা ফারুক আহমদ (মাষ্টার)।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, ফারুক আহমদ বিগত দিনে স্বৈরাচারখ্যাত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে ক্ষমতার প্রভাব কাটিয়ে এলাকার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদেরকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২২ সালে মাদ্রাসার প্রত্যাহিক সমাবেশে শিক্ষার্থীদের মুখে শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা বলতে বাধ্য করতেন মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা কালিম উল্লাহ, প্রভাষক ফারুক আহমদ এবং তার আরো দুই সহযোগী আওয়ামীলীগ নেতা দক্ষিণ কলাউড়া গ্রামের হাজী বশির উল্লাহ’র পুত্র মাদ্রাসার শিক্ষক শরীফুল ইসলাম ও মো.তাজুল ইসলাম। তাদের এমন কর্মকান্ডে আপত্তি দেখানোতে বিএনপি-জামায়াতের সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মাদ্রাসা হতে বহিষ্কার করেন এবং তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা দায়ের করা হয়। তখন সামনে ছিলো এসব শিক্ষার্থীদের কারো এইচএসসি পরিক্ষা কারো আবার এসএসসি বোর্ড পরিক্ষা। শিক্ষকদের এমন ষড়যন্ত্রের কারনে থেমে যায় তাদের ভবিষ্যৎ স্বপ্ন।
এছাড়াও তৎকালীন সময়ে দোযারাবাজার উপজেলা জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহের অনুষ্ঠানগুলোতে জামায়াতে -বিএনপি ট্যাগদারী শিক্ষার্থীরা মেধাবি হওয়া স্বত্বেও তাদেরকে পরিকল্পিত ভাবে বঞ্চিত করা হতো। মেধা ভিত্তি, ক্লাস ভিত্তি, উপভিত্তিগুলা পাওয়ার পরেও এসব অর্থ শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছায়নি। মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মো. কালিম উল্লাহ আর অভিযুক্ত এই তিন শিক্ষকই এর কারিগর। আর এসব কর্মকান্ড পরিচালনাকারী তারা চার’জনই কলাউড়া মাদ্রাসায় শিক্ষক পদে এখনো বহাল রয়েছেন। মাদ্রাসা শিক্ষকদের এমন নির্যাতনে বাধ্য হয়ে দেশ ত্যাগ করে প্রবাসে পাড়ি দেয় এসব শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবি তারা খুবই মেধাবী ছিলো, অনেক স্বপ্ন ছিলো তাদের ও পরিবারের। কিন্তু শিক্ষকদের কর্তৃক মামলা, হামলা ও নানান নির্যাতনে বাধ্য হয়ে পরিবার ও আত্নীয় স্বজনদের নিরাপত্তার স্বার্থে আওয়ামীলীগের আমলে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হতে হয় তাদের।
সাবেক শিক্ষার্থী দ্বিন ইসলাম বলেন, আমরা কয়েকজন ক্লাসের ভালো শিক্ষার্থী ছিলাম। জামায়াত-বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার ট্যাগ দিয়ে আমাদেরকে মানুষিক ভাবে নির্যাতন করা হতো। আমাদের পরিবারের লোকজনদের মামলা, হামলার হুমকি দেওয়া ছিলো তাদের নিত্য দিনের কাজ। ২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির মিজান চৌধুরীর ধানের শীষের সমর্থনে প্রচারনা করায় এবং জামায়াতে -শিবিরের সাথে থাকার অভিযোগে মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা দায়ের করা হয়েছে আমাদের বিরুদ্ধে। বাধ্য হয়ে প্রানে বাঁচতে আমরা দেশ ছেড়ে বিদেশি আসতে বাধ্য হয়েছি। আমাদেরকে নিয়ে পরিবারের অনেক স্বপ্ন ছিলো, আমাদের নিজেদের ও অনেক স্বপ্ন ছিলো। কিন্তু আমাদেরই এসব দলীয় শিক্ষকদের প্রতিহিংসায় আমাদের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। আমরা ২৪ আন্দোলনের পরবর্তী বর্তমান সরকার ও দেশের মানুষের কাছে এর সঠিক বিচার চাই।
সাবেক শিক্ষার্থী ইউসুফ আল মাহমুদ বলেন,লেখাপড়া করে আমাদের অনেক স্বপ্ন ছিলো। কিন্তু স্বৈরাচারী মনোভাব পোষণকারী এসব আওয়ামী দলীয় শিক্ষকদের কারনে আমাদের স্বপ্নটা আজ অন্ধকার জগতে। মা-বাবার স্বপ্ন টুকুও আমাদের দ্বারা বাস্তবায়ন হয়নি। আমাদেরকে মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কার করে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার আসামী করাসহ আমাদের পরিবারকে আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে। না হয় খুনি খারাপির চেয়েও জগণ্য কাজ করার হুমকি দিতেও দ্বিধাবোধ করেননি তারা।
আত্মরক্ষার ভয়ে পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার স্বার্থে বাধ্য হয়ে দেশ ত্যাগ করেছি। ২৪শে’ ছাত্র জনতার আন্দোলনে দেশ হতে স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ সরকারের পতন ঘটলেও শিক্ষক নামের এসব দোসররা স্বপদে এখনো বহাল। আমরা,আমাদের ভবিষ্যৎ নষ্টকারীদের বিচার চাই। এসব শিক্ষকদের বিচার না হলে সম্ভাবনাময় আরো অনেক ভবিষ্যত ঝড়ে পড়।








