শহীদ জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা জাতিকে পথের দিশা দিয়েছিল: মিফতাহ সিদ্দিকী
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এবং এই প্রজন্মের মেধাবী রাজনীতিক মিফতাহ সিদ্দিকী বলেছেন, মুক্তিকামী জাতি যখন ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সেনাদের নৃশংস হামলায় স্তম্ভিত, বিভ্রান্ত ও দিশাহীন হয়ে পড়েছিল, তখন জাতির কান্ডারীর ভূমিকায় এগিয়ে আসেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। তাঁর কণ্ঠে স্বাধীনতার ঘোষণা ছিল মুক্তিকামী বাঙালির জন্য সাহসের প্রেরণা, যা পুরো জাতিকে সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করেছিল।
মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর জেনারেল এমএজি ওসমানীর ১০৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) রাতে নগরীর জিন্দাবাজারস্থ নজরুল একাডেমী প্রাঙ্গণে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আলোর অন্বেষণ’-এর আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মিফতাহ সিদ্দিকী।
তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, “সেই ভয়াল রাতে শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি সেনাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে করাচি গিয়েছিলেন। কিন্তু জিয়া ছিলেন রণাঙ্গনে, যিনি জাতির সামনে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে আন্দোলনকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে রূপান্তরিত করেছিলেন।
তিনি বলেন, “জেনারেল ওসমানী ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত কমান্ডার, একজন নির্ভীক দেশপ্রেমিক ও অকুতোভয় সৈনিক। ইতিহাস বিকৃতির নামে স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠী তাঁকে অপ্রাসঙ্গিক করতে চেয়েছিল। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী, জেনারেল ওসমানী ও শহীদ জিয়া জাতির অম্লান গৌরব হয়ে বেঁচে আছেন।”
মিফতাহ সিদ্দিকী অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ সরকার ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে জাতিকে বিভ্রান্ত করেছে। “ফ্যাসিস্ট হাসিনা তার বাবাকে বড় করে দেখাতে গিয়ে প্রকৃত ইতিহাসকে ধামাচাপা দিয়েছেন। শহীদ জিয়া, জেনারেল ওসমানীসহ রণাঙ্গনের বীরদের অবদান মুছে ফেলতে চেয়ে ছিলো। কিন্তু সত্যকে কখনো চাপা দেওয়া যায় না। তারাই আজ ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে।”
তিনি আরও বলেন, “বিএনপি কখনো ইতিহাস বিকৃতিতে বিশ্বাস করে না। আমরা মনে করি মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত বীরেরা কোনো দলের সম্পদ নন, তাঁরা গোটা জাতির। তাঁদের যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা দিতে বিএনপি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে মিফতাহ সিদ্দিকী বলেন, “আমরা সম্মিলিতভাবে দেশকে ফ্যাসিবাদী সরকারের হাত থেকে মুক্ত করেছি। কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এখনো ফ্যাসিবাদের দোসররা লুকিয়ে আছে। তাদের উৎখাত করতে হবে গণতান্ত্রিক সরকার গঠন করে। এ ক্ষেত্রে সাংবাদিক এবং সাস্কৃতিক কর্মীকে ভূমিকা রাখতে হবে।
তিনি আরও জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য ৩১ দফা রূপরেখা দিয়েছেন। “এই রূপরেখার ভিত্তিতেই আগামী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। এজন্য দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষের মাঝে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তোলা অপরিহার্য।”
সভায় সভাপতিত্ব করেন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. মোজাম্মেল হক। প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন বাচিক শিল্পী সালেহ আহমদ খসরু, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহ মো. আতিকুল হক, সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সভাপতি কবি মুহিত চৌধুরী, কেমুসাস সিলেটের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক দেওয়ান মাহমুদ রাজা চৌধুরী।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ‘আলোর অন্বেষণ’-এর সভাপতি সাজন আহমদ সাজু। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এমজেএইচ জামিল ও সহ-সভাপতি জসিম উদ্দিন।
আলোচনায় অংশ নেন কবি ছয়ফুল আলম পারুল, লেখক মাওলানা শামসীর হারুনুর রশীদ, সাবেক ছাত্রদল নেতা সোহেল আহমদ, মানবাধিকার কর্মী নূরজাহান ছাদেক নূরী, নারী উদ্যোক্তা নিশাত ফাতেমা মেহের, কবি মাহফুজ জোহা, শিল্পী সুয়েজ হোসেনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নেতৃবৃন্দ।
প্রসঙ্গত, বঙ্গবীর জেনারেল এমএজি ওসমানী ছিলেন মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক। তিনি সিলেটের সন্তান হলেও জাতির ইতিহাসে তাঁর অবদান অমলিন। তাঁর জন্মবার্ষিকীতে প্রতিবছর নানা সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করে থাকে। এ ক্ষেত্রে ‘আলোর অন্বেষণ’ এর ভুমিকা সুধি মহলে প্রশংসা কুড়িয়েছে।