মৃত্যুর পর আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ার গল্পগুলো কোথায় যাবে?
আমরা জীবনের একটি অদৃশ্য অংশ ডিজিটাল জগতে ছড়িয়ে দেই—ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, গুগল, টুইটার—সব জায়গায়। প্রতিদিনের ছবি, পোস্ট, চ্যাট, মেসেজ, এমনকি স্মৃতিময় ভিডিও—সবই আমাদের ডিজিটাল উত্তরাধিকার হয়ে থেকে যায়। কিন্তু আমরা কি ভেবেছি, মৃত্যুর পর এসব আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের কী হবে?
১. উত্তরাধিকারী বা লিগ্যাসি কনট্যাক্ট
ফেসবুকের মতো অনেক প্ল্যাটফর্মে আছে ‘লিগ্যাসি কনট্যাক্ট’ ব্যবস্থা। এটি একটি নির্দিষ্ট ব্যক্তি নির্বাচন করার সুযোগ দেয়, যিনি মৃত্যু হওয়ার পর আপনার অ্যাকাউন্ট স্মৃতিস্মরণীয় করে রাখতে পারবেন। এর মাধ্যমে প্রিয়জনরা আপনার পোস্ট, ছবি, ভিডিও দেখে শ্রদ্ধা জানাতে পারেন।
২. ডিজিটাল উইল তৈরি করার প্রয়োজন
ডিজিটাল উইল বা অনলাইন উত্তরাধিকার হলো এমন একটি পরিকল্পনা, যা মৃত্যুর পর আপনার ডিজিটাল তথ্য, অ্যাকাউন্ট এবং অনলাইন প্রোফাইল ব্যবস্থাপনার নির্দেশনা দেয়। কেউ চাইলে আপনার অ্যাকাউন্ট মুছে দিতে পারে, আবার কেউ চাইলে তা সংরক্ষণও করতে পারে। এটি পরিবার বা বন্ধুদের জন্য বিভ্রান্তি কমায় এবং গোপনীয়তা রক্ষা করে।
৩. গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার গুরুত্ব
আমাদের অনেক ব্যক্তিগত তথ্য—ব্যাংক অ্যাপ, ইমেইল, মেসেজ—ডিজিটাল জগতে থাকে। মৃত্যুর পর এগুলো অরক্ষিত থাকলে সাইবার নিরাপত্তার ঝুঁকি থাকে। তাই ডিজিটাল উইল তৈরি করা এবং অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত প্রয়োজন।
৪. আমাদের দায়িত্ব ও সচেতনতা
অনেকেই আজও সচেতন নয়, যে তাদের ডিজিটাল উপস্থিতি মৃত্যুর পরও থেকে যাবে। জীবনের পরিকল্পনার মতোই ডিজিটাল উত্তরাধিকারও গুরুত্বপূর্ণ। এটি কেবল স্মৃতি সংরক্ষণ নয়, প্রিয়জনদের নিরাপত্তা এবং শান্তিও দেয়।
৫. ছোট পদক্ষেপ, বড় পরিবর্তন
ফেসবুকে লিগ্যাসি কনট্যাক্ট নির্বাচন করুন। গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড পরিবারের সঙ্গে ভাগ করুন। ডিজিটাল উইল তৈরি করে অনলাইনে কোথায় কী হবে তা লিখে রাখুন। ডিজিটাল জগতে আমরা যেমন নিজের উপস্থিতি ছড়িয়ে দিই, তেমনি মৃত্যুর পরও আমাদের স্মৃতিগুলো সংরক্ষিত থাকে। সচেতন পরিকল্পনা করলে আমাদের ডিজিটাল উত্তরাধিকার শুধু স্মৃতির অংশই হবে, ঝুঁকির নয়। এটি আমাদের জীবনকে আরও পূর্ণ করে, এবং প্রিয়জনদের জন্য একটি নিরাপদ উত্তরাধিকার রেখে যায়।