সমীকরণ সামনে রেখে হামজাদের হংকং পরীক্ষা আজ
ইংলিশ ক্লাব লেস্টার সিটির ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরীকে নিয়ে এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের তৃতীয় রাউন্ড শুরু করেছিল বাংলাদেশ। সমর্থকদের প্রত্যাশা ছিল আকাশছোঁয়া। কিন্তু দুটি করে ম্যাচ শেষে নিজেদের গ্রুপে অনেকটাই কোণঠাসা অবস্থায় হাভিয়ের কাবরেরার দল। পরিস্থিতি এখন এমন যে, মূল পর্বে পা রাখতে হলে আর একটি ম্যাচেও পা হড়কানোর সুযোগ নেই। এমন সমীকরণ সামনে রেখে আজ ঘরের মাঠে হংকং চায়নার মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে রাত ৮টায়।
হংকং চায়নার বিপক্ষে ম্যাচ সামনে রেখে গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ক্যাম্প শুরু করেন বাংলাদেশ কোচ কাবরেরা। পরদিন থেকে শুরু হয় অনুশীলন। তবে ম্যাচের আগে পূর্ণ স্কোয়াড তিনি পেয়েছেন মাত্র এক দিন। গত সোমবার বাংলাদেশে পৌঁছান ইংল্যান্ডপ্রবাসী হামজা। দলের সঙ্গে তিনটি অনুশীলন সেশন করেছেন তিনি। কিন্তু কানাডাপ্রবাসী সামিত সোম মাত্র একটি অনুশীলন সেশন পেয়েছেন। কারণ ক্লাবের ব্যস্ততা থাকায় তিনি ঢাকাতেই এসেছেন মঙ্গলবার রাতে। অথচ বাংলাদেশ দলের প্রত্যাশার কেন্দ্রে এই দুজনই- হামজা ও সামিত সোম। মধ্যমাঠে খেলার সুর বেঁধে দেওয়ার পাশাপাশি সতীর্থদের দিয়ে গোল করানো, এমনি নিজেদের গোল করার দায়িত্ব নিতে হবে তাদের। অবশ্য বড় মানের খেলোয়াড় হওয়ায় তাদের যে মানিয়ে নিতে কষ্ট হবে না, সেটি বলাই যায়। বরং চ্যালেঞ্জটি বাংলাদেশের অন্য খেলোয়াড়দের। বিশেষ করে আক্রমণভাগের খেলোয়াড়দের। মার্চে ভারত ও জুনে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচে গোলমুখের সমস্যাটিই ভুগিয়েছে বাংলাদেশকে।
২৫ মার্চ শিলংয়ে ভারতের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্রয়ে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে তৃতীয় রাউন্ডে নিজেদের শুরু করে বাংলাদেশ। ওই ম্যাচেই লাল-সবুজ জার্সিতে অভিষেক হয় হামজার। মাঠে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখান ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এই ফুটবলার। এরপর জুনে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচেও তিনি দারুণ খেলেন। কিন্তু ওই ম্যাচটি ২-১ ব্যবধানে বাংলাদেশ। ওই ম্যাচ দিয়ে অভিষেক হয় আরেক প্রবাসী সামিত সোমের। সব মিলিয়ে হংকং চায়না ম্যাচের ২৮ সদস্যের প্রাথমিক দলে প্রবাসী ফুটবলারের সংখ্যা সাতজন। গতকাল পর্যন্তও কাবরেরা ২৩ সদস্যের চূড়ান্ত স্কোয়াড ঘোষণা করেননি। অতি নাটকীয় কিছু না ঘটলে চূড়ান্ত স্কোয়াডে অন্তত ছয়জনের থাকাটা নিশ্চিত। প্রথমবারের মতো চূড়ান্ত দলে জায়গা পেতে পারেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী জায়ান আহমেদ। এমনকি এদিন অভিষেকও হয়ে যেতে পারে তার।
এদিকে হংকং চায়না দলটিও প্রবাসী ফুটবলারে ঠাসা। বাংলাদেশের চেয়ে বরং তারা এখানে এগিয়েই। ২৫ জনের দলে তাদের ১১ জনই বিভিন্ন দেশে বেড়ে উঠেছেন। কেউ ব্রাজিল, কেউ ফ্রান্স, কেউবা ক্যামেরুনপ্রবাসী। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ১৪৬তম স্থানে থাকা দলটি এই বাছাই পর্বেও বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। দুই ম্যাচে এক জয় ও এক ড্রয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে তারা। সমান ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে সিঙ্গাপুর। দুই ম্যাচে এক ড্র ও এক হারে ১ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। সমান ১ পয়েন্ট নিয়েও চতুর্থ স্থানে আছে ভারত। সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্রয়ে বাছাই পর্ব শুরু করা হংকং চায়না পরের ম্যাচে ভারতকে হারিয়েছে ১-০ গোলে। আজ বাংলাদেশকে হারাতে পারলে গ্রুপসেরা হয়ে পরের ধাপে যাওয়ার পথ তাদের জন্য অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে হংকংয়ের। কারণ ১৪ অক্টোবর ফের বাংলাদেশের মুখোমুখি হবে তারা। সেটিও তাদের মাঠে।
বাংলাদেশকে আজ তাই জিততেই হবে। বলাই যায় দিনটি বাংলাদেশের ফুটবলের জন্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন ম্যাচের আগে বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা বলেছেন, ‘আমাদের জন্য এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। আমরা সম্পূর্ণ আত্মবিশ্বাসী। সবাই পুরোপুরি প্রস্তুত এবং সবচেয়ে রোমাঞ্চকর বিষয় হচ্ছে, স্টেডিয়ামভর্তি দর্শকের সামনে খেলার সুযোগ পাব।’ এই ভরা গ্যালারি আসলেই বাংলাদেশকে এগিয়ে রাখবে। কিন্তু সিঙ্গাপুর ম্যাচের মতো এদিনও না আবার সমর্থকদের না ভগ্ন হৃদয়ে ফিরতে হয়। এমনটি যাতে না হয়, এ জন্য বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া সতীর্থদের দিয়েছেন বার্তা। তার কথায়, ‘যদি জিততে হয় তাহলে আমাদের ৯৫ মিনিট ভালো খেলতে হবে। শুধু ২০ বা ৩০ মিনিট ভালো খেলে লাভ নেই।’
হংকং চায়নার বিপক্ষে এখন পর্যন্ত চার দেখায় কোনো জয় নেই বাংলাদেশের। দুই দলের চার দেখায় তিন ম্যাচে হার বাংলাদেশের, একটিতে ড্র। আজ ১৯ বছর পর ফের মুখোমুখি হবে দুই দল। বাংলাদেশ কি পারবে দলটির বিপক্ষে প্রথম জয় তুলে নিতে? হংকং চায়না কোচ অ্যাশলে ওয়েস্টউড নিশ্চিতভাবেই সেটি হতে দিতে চাইবেন না। বলেছেন, ৩ পয়েন্ট তুলে নিয়েই বাড়ি ফিরতে চান তিনি।
এদিকে বাংলাদেশের হামজা চৌধুরীকে নিয়ে বেশ বিস্ময়কর এক মন্তব্য করেছেন তিনি। বলেছেন, হামজা তার দলে থাকলে ‘সম্ভবত’ তাকে বেঞ্চে রাখতেন। এ কথা বলার সময় তার মুখ ছিল বেশ সিরিয়াস। এটি বলে হয়তো হামজা প্রসঙ্গে চাপমুক্ত থাকতে চাইলেন তিনি। তবে নিশ্চিতভাবেই আজ এই ইংলিশ কোচের মূল চ্যালেঞ্চ হবে হামজাই।