থিয়েটারে: মঞ্চ ও অভিনেতার সম্পর্ক
দৈনিক সিলেট ডট কম
আরিফ হাসান :একটি শিশু যখন জন্মায় তারপর সে ধীরে ধীরে ইন্দ্রিয় শক্তির দ্বারা তাড়িত হতে থাকে আর এই ইন্দ্রিয়ই তাকে শিশু থেকে বালক, বালক থেকে যুবক, যুবক থেকে প্রাপ্ত বয়স্ক এবং জীবনের এক সময় বৃদ্ধরূপ দান করে। শিশু থেকে যুবকে পরিনত হওয়া সে বুঝতে শিখে প্রেম, কাম, তাপ, দ্রোহ। সে ছুটে যেতে চায় এক গ্রহ থেকে আর এক গ্রহে। যৌবনকে হাতের মুঠোয় রেখে ধর্ম নিরপেক্ষ হয়ে উড়িয়ে দিয়ে মৌলবাদকে সে ভালবাসার কথা জানতে থাকে। প্রখর আর তীব্র অনুভূতি তাকে তাড়া করে। সে বুঝে উঠার আগেই হয়তো কিছু করে ফেলে আবার যুবক বুঝে বুঝেই তার কাজ করবে। মন্দ ভালো সবকিছুই তাকে ডাকে তাকে তাড়া করে। তাকে আলো ডাকে অন্ধকারও ডাকে। কিন্তু যুবক কোথায় যাবে..? যুবক একটা সময় আত্মা, সত্তা, জ্ঞান চেতনা মুক্তচিন্তা সম্পর্কে জানতে পায়। কিন্তু সে বুঝতে পারে এটা চর্চার বিষয়। যুবক খেলার মাঠে বসে ফুটবল আর ক্রিকেট বলকে পৃথিবীর চিহ্নের মতোই দেখে। হ্যাঁ, এটাতো গোলই। সে নিজেকে খুজতে থাকে ভরা পদ্মায় অনন্ত যৌবনা হয়ে কিংবা রুক্ষ শুষ্ক সাহারা মরুভূমি হয়ে। সংস্কৃতি চর্চার এক প্রতিষ্ঠানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় হুট করে এক চিৎকার… ভিরু বা সাহসী উদ্যোগে কাছে গিয়ে দেখতে পায় কিছু মানুষ চিৎকার করে সংলাপ আওড়াচ্ছে। যুবকের বিষ্ময় সংলাপ…! জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে যুবক ব্যাক্তিকে জিজ্ঞাস করেন… … কি করছেন আপনারা.. ?
ব্যক্তি বলে “নাটক”। না, এই শব্দটি যুুবক এর আগে কখনই শোনেনি। হ্যাঁ, সে রবীন্দ্রনাথ নজরুলের নাম শুনেছে। কিন্তু “নাটক” কি.. ! মানুষ এটা কেন করে ! এটাতো ফুটবলের মতো গোল ও না আবার নজরুলের শক্ত শব্দের কবিতাও না। কি এই নাটক..! যুবক কি থানায় যাবে, নাকি তার মায়ের কাছে এমনকি পাশের বাড়ীর বড় দাদার কাছে যাওয়ারও চিন্তা মগজে আসে তাঁর। কি এই নাটক তাকে যে জানতেই হবে। খুজতে থাকে জ্ঞান পিপাসু যুবক। যেভাবে মানুষ খুঁজে গুপ্তধন কিংবা হারিয়ে গেলে দলিল। ইন্টারনেট, ফেইসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, দোকানের বই, ফুটপাতের বই সবকিছুতেই যুবক চালাতে থাকে অপারেশন থান্ডারবোল্ট। কিছু একটা তাকে টানছে তার কেন্দ্রের দিকে। সব বাধা বিপত্তিকে দুমড়ে মুচড়ে আলো অন্ধকারকে কালো প্যাকেটে পায়ের নিচে মেড়ে সে এগিয়ে যেতে থাকে। নিরঙ্কুষ সন্ধানের এক পর্যায়ে এসে সে জানতে পারে..“একটি নির্দিষ্ট সময়, নির্দিষ্ট স্থানে, নির্দিষ্ট সংখ্যক কিছু মানুষ যখন নির্দিষ্ট একটি বিষয় নিয়ে দর্শকের সামনে কিছু তুলে ধরে তখন তাকে বলা হয় নাটক”। নাটক করে যারা তাদের বলা হয় অভিনেতা। আচ্ছা, অভিনেতা কি…!
‘‘দুর্বোধ্য এবং পরস্পর বিরোধী শোনালেও বলতে বাধা নেই, মানুষ মাত্রই অভিনেতা। সবাই আমরা অভিনয় করছি। যে যেখানে যে অবস্থায় আছি। মনোবিজ্ঞানীরা অবশ্য এদিকটা দেখেন সম্পর্ণ ভিন্ন দৃষ্টিতে। তাঁরা বলেন, মানুষ নিজেকে আড়াল করে প্রধানত তার অবচেতন মনে যে অপরাধবোধ থাকে, হিপোকক্রেসির যে বীজ উপ্ত থাকে সেসবকে ধামাচাপা দিয়ে রাখার জন্য। সে জন্যই তাকে নানা রকম ছলচাতুরীর আশ্রয় নিতে হয়। এটাকে কিন্তু আমি অভিনয় অর্থে অভিনয় বলছি না। এ কথাটা উল্লেখ করলাম, আমার ওই মন্তব্যের স্বপক্ষে- মানুষ মাত্রই অভিনেতা। অর্থাৎ না জেনেও আমরা কোন না কোনভাবে ছলচাতুরী করছি, ভান করছি।
এই ছলচাতুরী কিংবা ভান কোনটাই প্রকৃতপক্ষে অভিনয় নয়। কেননা এসব অভিনয় সচেতনতা নিয়ে করা হয় না। তার মানে হচ্ছে অভিনয় সচেনতভাবে করতে হয়। এই দিকটা আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে যে বাস্তব নয় কিন্তু বাস্তবের মতো সুন্দর, গ্রহণযোগ্য যৌত্তিক উপস্থাপনই হচ্ছে অভিনয়। এটা সৃষ্টির এক আদিমতম শিল্প। মানুষের অস্তিত্বের মাঝেই অভিনয় ইচ্ছা সুপ্ত থাকে’’। (আবদুল্লাহ আল- মামুন ১৯৯১:১৭)পৃ:১
‘‘জগৎ সংসারে যা কিছু ঘটছে, যারা যেভাবে সেগুলো ঘটাচ্ছে, তাই কন্ঠে, বাহুতে, বক্ষে, পদযুগলে ধারন করে হুবহু উপস্থাপন করা যদি অভিনয় হয়, তাহলে ট্রেনের কামরায় একজন ক্যানভাসার কিংবা ব্যস্ত চৌমাথায় জনতার জটলার মাঝখানে মাদারীর খেল দেখাচ্ছে যে খেলোয়াড় তাকে কি বলা যাবে? এরা উভয়ইতো গধশব ইবষরাব অর্থাৎ যা আসলে নয় তাই বিশ^াসযোগ্য করে তুলে ধরে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে। তবে আর এদের অভিনেতা বলতে অসুবিধা কোথায়? এদের হয়তো মঞ্চ নেই, বাঁধাধরা সংলাপ নেই, মেপে-মেপে চলাফেরা নেই, আলোক সম্পাত নেই, সাউন্ড ইফেক্ট নেই– নিয়মিত অভিনয়ে যা যা না থাকলেই নয়। তাই বলে এরা কেন অভিনেতা-অভিনেত্রীর সংজ্ঞা পাবে না? উল্টো যুক্তি খারা করলে বলতে হবে এরাইতো বরং পেশাদার অভিনেতা। হ্যাঁ, এরা এক অর্থে অভিনয়ই করছে। তাই ঐ অর্থে এরা অভিনেতাও।
কিন্তু এর মধ্যে একটা বড় রকমের ফাঁক আছে। এরা অভিনয়টা জেনেশুনে করছে না। শিখে পড়ে করছে না। এরা কোন প্রক্রিয়ার মাঝখান দিয়ে আসেনি। একান্তই জীবিকার তাড়নায় এরা কন্ঠে তুলে নিয়েছে কিছু চটকদার কথা এই কথাও বলছে মেজাজ-মর্জি যখন যেমন থাকছে। এদের কথাবার্তার কোন শিল্পিত চরিত্র নেই। এদের উদ্দেশ্য একটাই দর্শক ভজিয়ে অর্থ উপার্জন করা। অর্থাৎ পুরো ব্যাপারটার মধ্যে কোন শৈল্পিক তাগিদ নেই। যেহেতু শিল্প এখানে অনুপস্থিত তাই এরা আর যাই হোক অভিনেতা নন। তবে একটু আগে নিরুক্ষণ বা ঙনংবৎাধঃরড়হ প্রসঙ্গে যে আলোচনা করা হয়েছে তার সূত্র ধরে এটুকু নির্দ্বিধায় বলা যায়, নিরুক্ষণ বা ঙনংবৎাধঃরড়হ এর জন্য এরা অত্যন্ত উৎকৃষ্ট উপাদান। তাহলে মূল ব্যাপারটা দাঁড়াচ্ছে কোথায়? অভিনয় ব্যাপারটা হতে হবে সজ্ঞানে। সজ্ঞানেই নয়, অভিনয় হতে হবে পরিশীলিত মর্যাদায়। এর যে শিল্পিত রূপ আছে অভিনেতা-অভিনেত্রীরা অভিনয়কালীন সেটাকে সারাক্ষণ উষ্কে যাবেন। তবেই তিনি বা তাঁরা অভিনেতা-অভিনেত্রী’’। (আবদুল্লাহ আল- মামুন ১৯৯১:২৩,২৪)
যুবক ভাবতে থাকে। নিজেকে জিজ্ঞেস করে, নিজেই উত্তর দেয়। কিন্তু এটাতো নেহাত সান্তনা। সমাধান কোথায়! নাটক করে এমন কিছু বড় ভাইদের সাথে পরিচিত হলেন যুবক। তাদের মুখের কথা সপ্তম আশ্চার্য মনে হচ্ছিল। বড় ভাইদের কথাগুলো শোনার পর যুবকের খারাপ লাগা আর ভালো লাগার এক বিশেষ বোধ তৈরি হলো। যুবক এখন মানুষের দিকে তাঁকায় না, সে পর্যবেক্ষন করে। বড় ভাইদের কাছে সে জানতে পারে থিয়েটার, স্তানিসলাভস্কি, গোডোভস্কি, ব্রেখট, মার্কসবাদ, পুঁজিবাদ ইত্যাদি। কিন্তু প্রাথমিক এ ধারনা তাকে নেশায় পরিণত করে। অবচেতনে ও যুবক ‘খোলা মঞ্চ আর সে একা দাড়িয়ে আছে’ দেখতে পায় সে। নিজেকে জিজ্ঞেস করে কেন এমন হচ্ছে তাঁর.! সব কিছু কেন এতো ভাবাচ্ছে তাঁকে? যুবক নাটকের রির্হাসেল এ প্রতিদিন যাওয়া শুরু করলো আর বড় ভাইয়েরা তাকে ধীরে ধীরে মঞ্চ, সেট, লাইট, প্রপস, কসটিউম বিশেষ করে অভিনয় সমন্ধে ধারণা দিতে থাকলো। হ্যাঁ, যুবক শান্তির নিশ^াস নিয়ে তৃপ্তির হাঁসি মুখে ফোঁটায় কারণ সে বুঝে উঠে তাঁর স্থান এখানেই। যুবক একজন দক্ষ অভিনেতা হয়ে উঠার স্বপ্ন ধারন করল। বড় ভাইয়েরা তাকে প্রাচ্য ও পাশ্চত্য অভিনয়রীতির প্রকারভেদ সম্পর্কে ধারণা দিলেন। যুবক আশ্বাস্থ হচ্ছে আর বিশ^াসী হচ্ছে কাজের প্রতি। অভিনয় যে অনুভূতি সর্বস্ব সে ক্রমেই বুঝে উঠতে থাকে। এই বুঝে উঠা তাকে পৃথিবীর দিকে তাকানোর দৃষ্ঠিভঙ্গি পরিবর্তনে সহায়ক হয়ে উঠে। এখন সে বাড়ির মানুষ গুলোর দিকে তাঁকায়- তাঁদের কথা বলা, দাঁড়িয়ে থাকা, একজনের সাথে আর একজনের বাক্য বিনিময় প্রখর দৃষ্টিতে লক্ষ করে সে। পৃ:২
থিয়েটারের বড় ভাইয়েরা তাকে একটি চরিত্র ধারণের আগে কি কি প্রস্তুতি বা পদক্ষেপ নিতে হয় তাই জানাচ্ছে- একটি স্বার্থক চরিত্র সৃজনে গভীর অন্বেষার স্বীকৃতি প্রমাণে বিশ শতকের প্রখ্যাত রুশ নাট্যাচার্য্য স্তানিলাভস্কির অভিনয় তত্ত্ব অনুসরণ ছাড়া একজন অভিনেতার পক্ষে যেকোন চরিত্রের চরিত্রায়ন করা সম্ভব নয়। বাস্তবধর্মী অভিনয় করতে গেলে স্তানিলাভস্কির অভিনয় তত্ত্ব প্রত্যেক অভিনেতাকে মেনে চলতে হবে। স্তানিলাভস্কির অভিনয় বিষয়ক আলোচিত বই-
An actor prepares
Building a character
একটি চরিত্র হয়ে উঠতে হলে অভিনেতাকে একটি পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। আত্মা বা স্বত্বা এ দুটো সবার মধ্যেই থাকে কিন্তু আমাদের লক্ষ্য বিবেক কে নাড়া দেয়া। স্তানিলাভস্কি বলেছেন-
প্রদত্ত পরিস্থিতি (Given circumstances) :
প্রদত্ত পরিস্থিতির মধ্যে অন্তর্ভূক্ত রয়েছে নাটকের কাহিনী, প্লট, ঘটনাবলী, অ্যাকশনের সময় ও স্থান, জীবনের অবস্থাদী, নির্দেশকের কথা, সেট,লাইট,প্রপস, আলো, ধ্বনি, প্রভৃতির সাথে একজন অভিনেতার সখ্যতা গড়ে উঠতে হয়। অভিনেতা এখানে নিজেকে সবকিছুর মধ্যে নিজেকে যুক্ত করে।
যাদুকরি যদি ((If) ) :
স্তানিলাভস্কির অভিনয় তত্ত্বের মধ্যে তিনি খুব গুরুত্বের সাথে আলোচনা করেছেন যাদুকরি যদি (ওভ) কথা। যে কোন অভিনেতা ‘যদি’ দিয়ে কোন কিছু কল্পনা করে তা অনুভব করে নিজের মধ্যে ধারণ করার চেষ্টা করে তাহলে সে অভিনেতা হতে সামর্থ। উদাহরনস্বরূপ- কোন অভিনেতা রাজা চরিত্রে অভিনয় করছে তখন যদি ঐ অভিনেতা যাদুকরি ‘যদি’ উপর নির্ভর করে নিজেকে রাজা ভাবতে শুরু করে যেমন আমি যদি রাজা হতাম, তাহলে এই ভাবে রাজ্য চালাতাম।
কল্পনা (Imagination) :
নাটকের কাহিনীকে শৈল্পিক রূপ দৃশ্যময় বাস্তবতা দেওয়া হচ্ছে অভিনেতার কাজ। সে কাজে কল্পনা রাখে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। শিল্পের ভিত্তি বাস্তব জীবন ও ঘটনা হলেও শিল্প কল্পনাকে নির্ভর করেই নির্মিত হয়। অভিনেতা যে চরিত্রে অভিনয় করছে তার মোটামুটি কাঠামো ও তার পারিপাশির্^ক অবস্থার সন্ধান ঐ কল্পনাই তাকে দিয়ে থাকে। এই কল্পনা করতে হয় কখনো পরোক্ষভাবে আবার কখনও প্রত্যেক্ষভাবে।
মনোযোগ ((Concentration of Attention) :
বিজ্ঞানের সূত্র অনুসরণ করেই স্তানিলাভস্কি উপলব্ধি করেছেন যে, অভিনয়ে পূর্ণ মনোযোগ বা Concentration গুরুত্ব ও প্রয়োজন অপরিসীম। মঞ্চের বাইরে অনেক উপাদান থাকে যা অভিনেতার মনকে বিক্ষিপ্ত করতে পারে,করে থাকে, সে জন্যই তিনি মঞ্চের উপাদানের প্রতি মনোযোগ নিবদ্ধ করার উপর জোর দিয়েছেন। অভিনেতা কখনো সংলাপের সাথে সখ্যতা গড়ে, কখনো মঞ্চ, আবহ সংঙ্গিত পোশাক, আলো, প্রপসের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলবার চেষ্টা করে। এর কারণ একটাই আর সেটা হলো মনোযোগ কেন্দ্রীয়ভুত করা। পৃ:৩
পেশিশীথিল করন (Relaxation of muscles) :
শরীরে টেনশন থাকলে সু-অভিনয়ে বাধার সৃষ্টি হয়। সেহেতুই শরীরকে টেনশনমুক্ত রাখতে হয়, অর্থাৎ ¯œাযু ও পেশীসমূহকে শান্ত রাখতে হয়। দু ধরনের টেনশন আছে এক হলো শরীরের বা বাহিরের অপরটির মানসিক বা ভিতরের। এদুটি একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, অনেক সময়ই এ দুটোকে পৃথক করা যায় না। তাই এদুইটিকে শান্ত রাখতে হয়। অভিনেতার শারীরিক পেশীগুলো যদি কাজ না করে তাহলে সঠিক ক্রিয়া ঘটানো সম্ভব না। বিভিন্ন ব্যায়াম ও গেম করে এই শারীরিক শিথিলতার কাজ করার চেষ্টা করে অভিনেতা।
চরিত্র ও কাহিনীর খন্ডায়ন(Units and Objectives) :
ইউনিট হলো নাটকের কাহিনীকে ও চরিত্রের কার্যকলাপকে একাধিক অংশে ভাগ করে নেওয়া। তাতে চরিত্রের ও কাহিনীর ক্রমধারাকে বুঝতে সুবিধা হয়। ইউনিটগুলির ‘যাদুকরি যদি’ ও ‘প্রদত্ত পরিস্থিতি’র সঙ্গে সম্পর্কিত এবং সেগুলিকে কার্যকর করতে কল্পনারও প্রয়োজন। চরিত্রের সঠিক অভিনয়ের প্রস্তুতির জন্যই ছোট ছোট ইউনিটে বিভক্ত করে নিতে হয়। ছোট ছোট ইউনিট গুলিকে আবার বড় ইউনিটে পরিণত করতে হয়। নাটকের প্রতিটি সংলাপে বাক্যের মধ্যে আলাদা আলাদা ইউনিটের মতো ব্যাখা লুকায়িত আছে। এটা করতে অনেক সময় ও শ্রম ব্যয় করতে হয়। এর উদ্দেশ্য দর্শক যেন নাটকের ব্যাখাটি পরিষ্কার বুঝতে পারে।
আবেগময় স্মৃতি(Emotion memory) :
সচেনতার মধ্য দিয়ে অবচেতনে পৌঁছানোর অভিনয় পদ্ধতিকে স্তানিলাভস্কি “সাইকো-টেকনিক” বলে অভিহিত করেছেন। এই সাইকো-টেকনিকে যাবার অন্যতম উপাদান হলো আবেগময় স্মৃতি বা Emotion memory। অভিনেতার নিজ জীবনের কোন পূর্ব ঘটনা তাঁর মনে যেমন আবেগ বা অনুভূতি সৃষ্টি করে সেই স্মৃতির সাহায্যে পুনরুজ্জীবিত করা বা ফিরিয়ে আনা আবেগ স্মৃতির সার কথা।
যোগাযোগ (Communion):
যে কোন ধরনের অভিনয় করার ক্ষেত্রে একজন অভিনেতাকে সবসময় মনে রাখতে হবে যে, সে কার জন্য অভিনয় করছে, কার সাথে অভিনয় করছে, স্টো খুব ভালভাবে স্মরণ রাখতে হবে এটা একজন দক্ষ অভিনেতার কাজ বার বার মোহরা করে সেট, আলো,পোশাক, প্রপসের যোগাযোগ রক্ষা করা সু-অভিনেতার প্রথম বৈশিষ্ট্য।
সমঝোতা (Adaptation):
অভিনয় করার ক্ষেত্রে অনেক কিছুর সাথে অভিনেতাকে ধফধঢ় করতে হয়। এই adaptation ছাড়া অভিনয় হয়ে উঠে না। অভিনেতাকে কখনো চরিত্রের সাথে কখনো পোশাক,আলো,মেকআপ এর সাথে adap করে ক্রিয়া সম্পাদন করতে হয়। এই adaptationকখনো হয় নিজের সাথে নিজের কখনো চরিত্রের সাথে দর্শকের। অভিনেতা তখনি সার্থক যখন তাঁর ধফধঢ়ঃধঃরড়হ দর্শক মুদ্ধভাবে উপলব্ধি করবে।
The Inner Creative State:
একজন অভিনয় শিল্পির অন্তর্নিহিত সৃজনশীলতার যে সব অবস্থা বিরাজ করে তার সঙ্গে শারীরিক ক্রিয়ার গভীর সম্পর্ক থাকে। যুক্তি ও সংগতি কেন ও কিভাবে এ প্রশ্নগুলি জড়িত। কেননা মঞ্চে প্রত্যেকটা ক্রিয়ারি উদ্দেশ্য যৌক্তিক। প্রতিটি অ্যাকশনের একাধিক যৌক্তিক কারণ ও প্রেষণা বিদ্যমান থাকে, যা ঐ অ্যাকশন করতে উদ্বুদ্ধ করে। পৃ:৪
স্তানিলাভস্কি তাঁর Building a Character বইটিতে একজন অভিনেতাকে অভিনয় শুরুর পূর্বে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা দিয়েছেন। আমরা অভিনেতা হয়ে উঠি। এটা একটি প্রসেস। তিনি বইটিতে চরিত্র নির্মান প্রক্রিয়া আলোচনা করেছেন। বইটির উল্লেখযোগ্য অধ্যায়গুলো হলো-
*Dressing a Character
*Restraint and Control
*Diction and Singing
*Tempo-Rhythm in Movement
Dressing a Character::
প্রত্যেক ধরনের অভিনয়ের ক্ষেত্রে চরিত্রনুযায়ী পোশাক খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চরিত্রনুযায়ী যদি পোশাক না হয় তাহলে অভিনেতার অভিনয় করতে অসুবিধা হয়।
Restraint and Control:
প্রত্যেক জিনিসের ক্ষেত্রেই সংযম ও নিয়ন্ত্রণ খুবই কার্যকারী। যে কোন জিনিসে সংযম আর নিয়ন্ত্রন থাকলে তা উচ্চস্থান দখল করে। আর থিয়েটার বা নাটকের ক্ষেত্রে এটা অধিক কার্যকারী। মঞ্চের অভিনয় করার সময় অভিনেতা তার সকল প্রয়োজনীয় জিনিসের উপর নিয়ন্ত্রন রাখবে। যদি নিয়ন্ত্রন না রাখতে পারে তাহলে সে দক্ষ অভিনেতা হয়ে উঠতে পারবে না।
Diction and Singing:
অভিনয়ে সংলাপ বা শব্দের করাঘাত নির্দিষ্ট মাত্রাঅনুযায়ী দরকার। এর যদি সঠিক মাত্রাটা নির্ধারণ করা যায় তাহলে বাক্যের সঠিক অর্থটা সহজে বুঝা যায়। সংলাপের কোন শব্দে ওসঢ়ধংবং আর কোন শব্দ ঝষড়ি উচ্চারন করতে হবে তা অভিনেতা বুঝতে পারেন। এবং সংলাপের সঠিক অর্থ দর্শকের বোধগম্য হয়। এজন্য অভিনেতাকে ভোকাল চর্চা করতে হয়।
Tempo-Rhythm in Movement:
ছন্দ,তাল,লয়,জ্ঞান না থাকলে অভিনেতা হয়ে উঠা সম্ভব না। শরীরে এবং মগজে এই সমন্ধে সম্মক ধারণা থাকা বাঞ্চনীয়। তাল,লয়,জ্ঞান না থাকলে অভিনেতা তাঁর অনুভূতি প্রকাশে বাধাগ্রস্থ হয়। ফলে দর্শক তাঁর অভিনয় বুঝে উঠতে পারে না। এবং অভিনয়টি সমৃদ্ধশীল হয় না।
একজন অভিনেতা যদি দক্ষ ও মেধাবী অভিনেতা হতে চায় তাকে এই পদ্ধতির মধ্যে দিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। এই পদ্ধতির প্রয়োগে অভিনেতা দক্ষ চরিত্রায়ন শিল্পী হয়ে উঠে। স্তানিলাভস্কি অভিনেতাকে এগুলো পাঠ ও ধারণ করতে বলেছেন।
স্তানিলাভস্কির মতো আর একজন তাত্বিক হচ্ছেন গ্রোডোভস্কি তিনি বলেছেন-
Via Negativa
Holy Actor
Trance
Clises
পৃ:৫
গ্রোডোভস্কি তাঁর অভিনেতাকে Holy Actor হবার ক্ষমতা অর্জন করানোর জন্য তিনি এমনতরো অভিনয় ট্রেনিং আবিস্কার করেছেন তা হলো, অভিনেতার শারিরীক ও মানসিক সকল প্রতিবন্ধকতা থাকে সেগুলোকে দূর করে দিতে পারে। এই প্রক্রিয়াকে Via Negativa বলে। এটা কোন দক্ষতার সমাহার নয়। এটা বাধা সমূহকে উৎপাটন করার প্রক্রিয়া। এটা অভিনেতার ক্ষেত্রে খুবই জরুরী কারণ অভিনেতা চরিত্রকে প্রকাশ করতে গিয়ে শরীর, কন্ঠ ও মানসিক জড়তার স্বীকার হয়। এই বাধা জড়তা দূর করতে না পারলে অভিনেতা দর্শকের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে পারে না। প্রতিটি মানুষই ত্রুটিযুক্ত ভূলে ভরা ও অযৌক্তিক ভাবে ক্রিয়া সম্পাদন করে থাকে কিন্তু অভিনেতাকে এই সব ত্রুটির উর্ধে অবস্থান করতে হবে। সেটা কিভাবে, গ্রোডোভস্কি তাই বলেছেন।
বিস্ময় যুবক তাকিয়ে আছে বড় ভাইয়ের মুখে তিনি কি বলছেন এগুলো..! যুবক জানতে পারে যুগে যুগে নাটক, অভিনয় এসবের ধরণ আঙ্গিক পরিবেশনা পরিবর্তন হয়েছে। সময় টেনে নিয়ে সবকিছুকে আমূল পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংকচন করেছে। প্রাচ্যে অভিনয় বর্ণনাধর্মী, পালা, একাঙ্কিকা ছাড়াও বিভিন্ন ধরন হয়ে থাকে। নাটকের প্রেক্ষাপট বর্তমান সময় অভিনেতার অবস্থা এবং দর্শকের কথা মাথায় রেখে নির্দেশক নাটক উপস্থাপন করেন। আর পাশ্চাত্যে-
রিয়েলস্টিক
ন্যাচারালস্টিক
অ্যাবসার্ড
সিম্বলিক
এখন এই ফর্মগুলোকে বিভিন্ন ধরনের ডায়াস এ ফেলে অভিনয় করে মঞ্চে তোলা হয়। তবে নির্দেশকের উপর নির্ভর করে সে কি ফর্ম ব্যবহার করবে। অভিনেতা যতো দক্ষ হবে নির্দেশক ততো সহজে এই ফর্ম গুলো ব্যবহার করে দর্শকের কাছে পৌছাতে পারবেন। মূল কথা অভিনেতাকে অনুভূতি প্রবণ হতে হবে। আবার অভিনয় নিয়ে যদি প্রাচীন বা আদিম থেকে বলা হয় তাহলে দেখা যায়, “ভরত মুনি বলেছেন” চার ধরনের অভিনয়ের কথা।
*আঙ্গিক
*বাচিক
*সাত্ত্বিক
*আহার্য্য
যুবক অভিনয় নিয়ে বেশ ভালো একটা ধারণা লাভ করে কিন্তু সে নিশ্চিত হয় যে, এটা চার্চার বিষয়। শুধু পড়াশোনা করে নয় অভিনেতা হতে চাই দক্ষ অনুশীলন আর বাস্তবধর্মী চিন্তাচেতনা। এতে সাধনা লাগে। ঐকান্তিক চেষ্টা আর একগাদা অনুভূতি দরকার হয়। পরিশ্রমী হওয়া খুব দরকার। আমি কি করছি, কেন করছি এমন ধরনের কিছু যৌত্তিক কারণ সামনে রেখে নিজেকে ছেড়ে দিতে হবে পৃথিবীর কাছে। সময় বলে দিবে কি আর কতটুকু করা উচিত এবং অনুচিত হবে। থেমে যাওয়া যাবে না।
পৃ:৬
দৃঢ় চিত্তে যুবক জিজ্ঞেস করে অভিনয় যেখানে করা হয় তাকে কি বলে? তাঁকে বুঝানো হয় যেখানে অভিনয় করা হয় তাকে বলে “মঞ্চ”। এমন একটি নির্দিষ্ট জায়গা যেখানে অভিনেতাগণ দর্শকের উপস্থিতিতে ক্রিয়া সম্পাদন করে। আদিম থেকে আধুনিকতা সময় থেকে সময়ে এই মঞ্চের হয়েছে অনেক পরিবর্তন, পরিবর্ধন। একেক দেশে এর একেক নাম আছে। সভ্যতার সাথে সাথে সমাজের যে পরিবর্তন তা মঞ্চে অনেক প্রভাব ফেলে। শুধু মঞ্চ নয় এর সাথে প্রপস,সেট এসবের ব্যবহারও শেখে যুবক। কেন এগুলো ব্যবহার করা হয় মঞ্চে সেই যুক্তিটাও স্পষ্ট হয় ধীরে ধীরে। তাহলে অভিনেতা আর মঞ্চ একটা সম্পর্ক ইঙ্গিত করে। অভিনেতা যাই করুক না কেন তাঁর স্থান মঞ্চে। মঞ্চ তাঁকে আপনভাবে কাছে নেয়। অভিনেতা মনে করেন ঈশ^র তাঁর স্থান দিয়েছেন এই মঞ্চে। দর্শককে সামনে রেখে অনুভূতির সুস্থ্য ব্যবহার দেখানোর জায়গা এই “মঞ্চ”।
নাটকের ঘটনা প্রবাহে যে অন্তর্নিহিত সত্য মঞ্চে আকার, আকৃতি, রেখা, সেট ও রং দিয়ে পরিবেশ নির্মাণের চেষ্টা করা হয়। চিত্রশিল্পির তুলি রংয়ের সাহায্যে অত্যন্ত দ্রুত অগ্রবর্তি চিন্তা করতে পারে দর্শক। আধুনিক চিত্রশিল্পের চর্চায় যে সকল পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে, নাটকের মঞ্চ পরিকল্পনায়, দৃশ্যসজ্জায় ক্ষেত্রেও মঞ্চের প্রকারভেদ মাথায় রাখতে হয়। তবে নাটক যৌথ শিল্প মাধ্যম হওয়ায় একেক ধরনের মঞ্চ দর্শকের মনে একেক ধরনের আবেগের প্রসার ঘটায়। মঞ্চ প্রধানত চার প্রকার। যথা:-
1. Proscenium Stage
2. Arena Stage
3. Thrust Stage
4. Black Box or Experimental Stage.
মঞ্চ পরিকল্পনার উপাদান সমূহ:-
দৃশ্য শুধুমাত্র অভিনেতা-অভিনেত্রীদের পশ্চাদপট নয়। তাই কেবলমাত্র পশ্চাদপট হিসাবে অঙ্কিত ও গঠিত বস্তু সম্ভারের মধ্যেই দৃশ্য-উপাদান সীমাবদ্ধ নয়। নানা উপাদান নিয়ে দৃশ্য রচিত হতে পারে দৃশ্য উপাদানকে মূলত পাঁচটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা যেতে পারে। যথা:-
ক. দৃশ্যের পটভূমি (Background) হিসাবে ব্যবহৃত অঙ্কিত ও গঠিত ((Constructed) বস্তু সম্ভার।
খ. আলো
গ. আসবাবপত্র-উপকরণাদি
ঘ. পোশাক পরিচ্ছদ
ঙ. অঙ্গ রচনা।
মঞ্চে সেট একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান কারণ স্থান,কাল, পরিবেশ ও অভিনয় নির্মাণে নাটকের সহায়ক হয়ে উঠে। এছাড়া মঞ্চসজ্জার ক্ষেত্রে সেট অভিনেতার অভিনয়কে দর্শকের সামনে বাস্তব ও গ্রহণযোগ্য করে তোলে। সেট নাটকের অন্তর্নিহিত বিষয়কে যেমন দৃষ্টিনন্দন করে তেমনি অভিনেতার ক্রিয়াকে যৌক্তিক রুপদিতে সহায়ক হয়। সেট ডিজাইনের মূল কিছু নীতি আছে। যেগুলোকে অভিনেতা বেশ ব্যালেন্স করে চলে।
সেট ডিজাইনের মূলনীতি:
১. হারমনি।
২. ব্যালেন্স- (ক) সেমিট্রিকাল (খ) অসেমিট্রিকাল।
৩. ইমফেসিস।
৪. রিদেম। পৃ:৭
The Elemants of set Design:-
1. Line.
2. Shape.
3. Color.
4. Texture.
5. Ornaments.
অভিনয় এই বিশাল কর্মকান্ডের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ। কিন্তু একমাত্র স্তম্ভ নয় অভিনয় নাটকের অনেক কাজের একটা কাজ। তাই বলে অভিনেতা-অভিনেত্রীরা যদি মনে করেন, এই প্রধান কাজ করেই তাঁরা ছাড়া পেয়ে গেলেন, তাঁদের দায়িত্ব শেষ, তাহলে গোড়াতে গোলদ হয়ে যাবে। এই গোড়ায় গোলদ যাতে না হয় সে জন্যই উপরের বিষয়গুলি আলাদা আলাদা ভাবে নিজের ভিতরে ধারণ করা প্রয়োজন।
সৃজনশীল মানুষই স্বপ্ন দেখে। সেই স্বপ্ন আপনা-আপনি বাস্তবে রূপ নেয় না, স্বপ্ন বাস্তবে পেতে হলে লড়াই লাগে। লড়াই একটি সার্বক্ষণিক কাজ বলে আমরা মেনে নেই। এবং লড়াইয়ে ভয় পাওয়ার চেয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়াকে আমরা ব্রত মনে করি। স্বপ্ন এমনই, যা কিনা কেবল প্রত্যাশা বাড়িয়েই তোলে। একটি স্বপ্ন পূরণ হয় আর একটি স্বপ্ন জন্ম দিতে। মানুষের ঐতিহ্যে স্বপ্ন আছে, স্বপ্ন পূরণও আছে, স্বপ্ন পূরণে ব্যর্থতাও আছে। ঐতিহ্যে মানেই গর্বের ব্যাপার নয়। ঐতিহ্যে মানে পরম্পরাগত প্রথা। সব প্রথাই শুখকর না গর্বের ও না। প্রথাকে মানবমুখি করতে পারলেই গর্ব করা যায়। ইতিহাস বলে আমাদের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিলো। আবার এই ইতিহাসও পাই সেই ভাষা রক্ষার জন্য লড়াই করেছি। মনে রাখা দরকার কেবল সামাজিক পরিবেশেই উৎপত্তি লাভ করে ভাষা এবং ভাষার মাধ্যমেই প্রকাশ পায় মানুষের ভাবনা বা চিন্তা। তাহলে অভিনেতা হিসাবে যুবকের করণীয় কি! যুবক সংস্কৃতি নির্মাণ করবে না কি পূর্ব নির্ধারিত আচার নিয়েই থাকবে।
‘‘মঞ্চ নাটক নিয়ে একাধিক বাগাড়ম্বর শ্লোগান আছে, যার একটি হলো, নাটক সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার। নাটক দিয়ে কি সমাজ পরিবর্তন করা যায়? সমাজ পরিবর্তন করবে সামাজিক ও রাজনৈতিক শক্তি, নাটক সেখানে একফোঁটা জলদান করে ক্ষুদ্র শরীক হতে পারে। যুদ্ধটা অন্য জায়গায়, প্রত্যক্ষ সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে নয়। পৃথিবীর একটি প্রাচীন, সমবায় ও প্রয়োগ শিল্পের প্রতি লগ্ন থাকার প্রতিশ্রুতি এবং এই ভালো প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ভালো মানুষ হয়ে উঠার প্রয়াসটাই আসল যুদ্ধ। নিজে ভালো মানুষ হলে অন্যকেও প্রভাবিত করা যায়। এই ভাবে মঞ্চ নাটকের মধ্যে দিয়ে মঞ্চের উপরে যারা কাজ করে এবং মিলনায়তনে বসে যারা সে কাজ প্রত্যক্ষ করে , এই দুই দলে সমন্বয়ে একদল ভালো মানুষ গড়ে তোলাটাই মঞ্চ-নাটকের অন্যতম প্রধান একটি প্রয়াস’’। (আতাউর রহমান ২০০৪:১৬২)
যুবক অভিনয় আর মঞ্চ নিয়ে ধারণা পাবার পর জিজ্ঞেস করে তাহলে “মঞ্চ” আর “অভিনয়” এই দুটি অঙ্গাঅঙ্গী ভাবে জড়িত মঞ্চ অভিনেতাকে পুর্ণতা দান করে। জীবনানন্দ দাশ বলেছেন-
‘শূন্য মনে হয়, প্রার্থনা কাজের সকল সময়’
কবিতার লাইনটির কথা মনে পড়ে যুবকের। মঞ্চে দাড়ালেই কেন যানি শূন্য অনুভূত হতে থাকে। চারপাশে এতো দর্শক, আমি কি জানি! কতোটুকু জানি তাঁর যৌক্তিকতা কি..! আমি যখন মঞ্চে তখন দর্শক পুঙ্খানুপুঙ্খ খেয়াল করে। অভিনেতা ÒBlack Hol” দেখতে পায়। এইÒBlack Hol” অভিনেতাকে এক ধরনের প্রশান্তি এনে দেয় তাঁর আত্মায়। আত্মা আর স্বত্তা মিলে একাকার হয়ে অনুভূতির সাগরে হাবুডুবু খায় অভিনেতা। আর এ অভিনয়ের নিরব বিচারক হচ্ছেন দর্শক। যা দেখাবা তাই…এই ধারনাই ভূল। দর্শক মন্দ-ভালো বুঝে। বিচারককে মাপকাঠিতে অভিনয়কে মাপে। নাম্বার দেয়, ভূল ধরে এবং সংশোধন করে। মঞ্চ নিজেকে তুলে ধরবার জায়গা। চরিত্রটি কি কি যৌক্তিক ক্রিয়া নির্দেশ করে তা অভিনেতাকে বুঝতে হয়। বুঝাবুঝির মধ্যে ফারাক থাকলে তা অন্ত:শার শূন্য অভিনয় হয়। দর্শক সব বুঝে এটা মাথায় রেখে মঞ্চে দাড়ানো উচিৎ। অভিনেতা যদি অভিনয়ের ক্রিয়া কৌশল পূর্ব প্রস্তুতিসহ মঞ্চে উঠে তাহলে মঞ্চ ক্রিয়া সম্পাদনে খুব একটা সমস্যা হবার নয়। মঞ্চ তাকে পূর্ণসহযোগী না হয়েও উঠতে পারে। যদি ব্যাপারটা হয়- “ধর তক্তা মার প্যারেক”।
পৃ:৮
রচনাপঞ্জি:
(১) আবদুল্লাহ আল- মামুন (ফেব্রয়ারি ১৯৯১) অভিনয়, সাহিত্য প্রকাশ পুরানা পল্টন লাইন, ঢাকা
(২) শম্ভুমিত্র (সেপ্টেম্বর ১৯৯১) কাকে বলে নাট্যকলা আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড কলকাতা
(৩) শম্ভুমিত্র (ফেব্রয়ারী ২০০৯) অভিনয় নাটক মঞ্চ, ৪৪ এ, চক্রবর্তীলেন,শ্রীরামপুর, হুগলি।
(৪) আতাউর রহমান (২০০৪) মঞ্চযোদ্ধার দায়বদ্ধতা থিয়েটার,(সম্পা:রামেন্দু মজুমদার) নাট্য ত্রৈমাসিক, ৩৩ তম বর্ষ, ২য় সংখ্যা সেপ্টেম্বর ২০০৪,পৃ:১৬২, ঢাকা চেম্বার ভবন,সপÍম তলা,৬৫-৬৬ মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা ,ঢাকা -১০০০ থেকে প্রকাশিত
লেখক-
নাট্যকর্মী
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ^বিদ্যালয় ত্রিশাল,ময়মনসিংহে নাট্যকলা ও পরিবেশনাবিদ্যাবিভাগে কর্মরত