দুই লাখেরও বেশি প্রবাসীকে দেশে ফিরিয়ে নিয়েছে চীন
দৈনিক সিলেট ডট কম
দৈনিকসিলেটডেস্ক: চীনা পুলিশের সম্প্রসারিত বৈশ্বিক পুলিশিং দাবি করে, তারা বিশ্বজুড়ে টেলিকম এবং অনলাইন জালিয়াতির বিরুদ্ধে লড়াই করছে। কিন্তু আদতে এর আড়ালে তারা অবৈধ পদ্ধতি ব্যবহার করে রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বী এবং দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের ওপর নজর রাখে এবং তাদের দেশে ফিরে যেতে বাধ্য করে, যা কোন দেশের আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।
মাদ্রিদ ভিত্তিক গ্রুপ সেফগার্ড ডিফেন্ডারদের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে, বিদেশে বসবাসকারী চীনা নাগরিকদের প্রতারণা এবং টেলিযোগাযোগ জালিয়াতির ক্রমবর্ধমান সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার পর চীন দাবি করেছে, ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত তারা প্রতারণা এবং টেলিকম জালিয়াতির সন্দেহে প্রায় দুই লাখ ত্রিশ হাজার চীনা নাগরিককে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, কীভাবে চীনের সরকারী দপ্তরগুলো চীনে সন্দেহভাজনদের সন্তানদের শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে এবং আত্মীয়স্বজন এবং পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে সন্দেহভাজন ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক রাখায় তাদের দোষী সাব্যস্ত করছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, চীন নয়টি দেশকে গুরুতর প্রতারণা, টেলিকম জালিয়াতি এবং ওয়েবসংক্রান্ত অপরাধের জন্য চিহ্নিত করেছে এবং চীনা নাগরিকদের কোনো উপযুক্ত কারণ ছাড়া সেসব দেশে থাকার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।
মাদ্রিদ-ভিত্তিক ওই গোষ্ঠীর মতে, কিছু তথ্য প্রমাণ এটাই নির্দেশ করছে, চীনের এই অপারেশন পাঁচটি মহাদেশে চলমান এবং ওভারসিজ পুলিশ সার্ভিস স্টেশন ব্যবহার করে চীনাদের চোখে চোখে রাখা হচ্ছে। সেইসঙ্গে সিসিপির ইউনাইটেড ফ্রন্ট ওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত স্থানীয় ‘চাইনিজ ওভারসিজ হোম অ্যাসোসিয়েশন’র নাম ব্যবহার করেও চীনাদের ওপর নজর রাখা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের এই কার্যক্রমগুলো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি এবং এই অবৈধ পদ্ধতি ব্যবহার করে একটি সমান্তরাল পুলিশিং ব্যবস্থা স্থাপন, তৃতীয় দেশগুলোর আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে লঙ্ঘিত করতে পারে।
এ প্রসঙ্গে দ্য গ্লোব অ্যান্ড মেইল পত্রিকায় কলামিস্ট চার্লস বার্টন বলেছেন, ‘চীনা পুলিশ কানাডায় অফিস স্থাপন করে অভিযুক্ত অপরাধীদের নিজে দেশে ফিরে গিয়ে বিচারের মুখোমুখি হতে প্ররোচিত করে, যেখানে আমাদের নিজস্ব সরকার এবং নিরাপত্তা পরিষেবাগুলো দৃশ্যত অন্য উপায় ব্যবহার করে। চীনের এই কার্যক্রম কানাডার জাতীয় সার্বভৌমত্ব, আন্তর্জাতিক আইন এবং কূটনীতির নিয়মের চরম লঙ্ঘন।’
অটোয়ার ম্যাকডোনাল্ড-লরিয়ার ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো বার্টন বলেছেন, চীন এই দেশে তার পুলিশিং কার্যক্রম বাড়াচ্ছে। এতে যে কানাডার নিজস্ব জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সঙ্গে তাদের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে, সে বিষয়ে আপাতদৃষ্টিতে তাদের কোনও উদ্বেগ নেই।
তিনি বলেন, ‘বেইজিং এই বৈশ্বিক পুলিশ ফাঁড়িগুলোকে তাদের প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে বর্ণনা করছে, যেখানে চীনা নাগরিকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং অন্যান্য সেবা দিয়ে সহায়তা করা হয়ে থাকে। কিন্তু সেফগার্ড ডিফেন্ডারদের সমীক্ষায় দেখা গেছে, তারা রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বী, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা বা অভিযুক্ত অপরাধীদের এইসব অফিসের মাধ্যমে খুঁজে বেড়াচ্ছে এবং তাদের চীনে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।’
কানাডার পক্ষে কথা বলতে গিয়ে বার্টন বলেন, ‘আমরা কানাডায় চীনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতির প্রতিবেদনগুলোকে যতই উপেক্ষা করব, ততোই আমাদের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় চীনের হস্তক্ষেপ, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানে তাদের সম্ভাব্য গুপ্তচরবৃত্তি এবং আরও অনেক কিছু বাড়তে থাকবে, চীনের এজেন্টরা আরও সাহসী হয়ে উঠেবে।’
তিনি বলেন, ‘এই কাজগুলোকে যদি কোন জবাবদিহিতার প্রক্রিয়ায় আনা না যায়, তবে চীন তার অপারেশনের আকার এবং হুমকি বাড়াবে, কারণ চীনের সেই সামর্থ্য আছে।’