অযাচিত শব্দ করা ভদ্রতাপরিপন্থী
জাওয়াদ তাহের
আমরা অনেক সময় ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় এমন কিছু অপ্রয়োজনীয় শব্দ করে থাকি, যা অন্যদের জন্য বিব্রতকর বা ক্ষতিকর। বেশি বেশি শব্দে গাড়ির হর্ন বাজানো, ঘর থেকে বের হওয়ার সময় জোরে আওয়াজ করে দরজা লাগানো, কিংবা ঘরে প্রবেশের সময় শ্রুতিকটু আওয়াজ দিয়ে তালা খোলা, মোবাইল ফোনে কর্কশ রিংটোন ব্যবহার করা—এসব আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী।
কলকারখানা, পরিবহন, নির্মাণকাজ, নির্বাচনী প্রচারণা, ধর্মীয় অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন কাজে লাউডস্পিকার ব্যবহার, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এই বিরক্তিকর আওয়াজকে বর্তমানে ‘শব্দসন্ত্রাস’ও বলা হয়ে থাকে। মানবসৃষ্ট এসব সমস্যা সমাধানে প্রয়োজন একটু সচেতনতা।
অনেকে মনে করে, এতে তো কোনো সমস্যা নেই। নিজের গাড়ি, নিজের ঘর, নিজের তালা আওয়াজ করে লাগালে কী এমন সমস্যা আছে! আমাদের এই চিন্তাটাই ভুল। অতিরিক্ত জিনিস সব জায়গায় অপছন্দনীয়। আল্লাহ তাআলা সব জিনিসেই সৌন্দর্য পছন্দ করেন। শাদ্দাদ ইবনে আউস (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে দুটি বিষয় স্মরণ রেখেছি। তিনি বলেছেন, আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক বস্তুর প্রতি সদয় আচরণ (ইহসান করা) ফরজ করেছেন। অতএব তোমরা যখন কাউকে হত্যা করবে, তখন উত্তমরূপে হত্যা করবে, আর যখন কোনো জন্তু জবাই করবে, তখন উত্তম পন্থায় জবাই করবে এবং তোমাদের প্রত্যেকে যেন ছুরি ধার দিয়ে নেয়। আর জবেহকৃত পশুকে ঠাণ্ডা হতে দেয়। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৪৪০৫)
আমাদের প্রিয় নবী (সা.) উত্তম চরিত্রকে পূর্ণতায় পৌঁছানোর জন্য এসেছেন। তিনি আমাদের খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে প্রতিটি জিনিসে সৌন্দর্য শিখিয়ে দিয়ে গেছেন। নিম্নের এই হাদিসটিতে নজর বোলালে বুঝে আসে তিনি ছোট ছোট বিষয়গুলো কত গুরুত্বসহ দেখেছেন।
মিকদাদ (রা.) এক দীর্ঘ হাদিসে বলেন, আমরা নবী (সা.)-এর জন্য তাঁর অংশের দুধ রেখে দিতাম। তিনি রাতের বেলায় আসতেন এবং এমনভাবে সালাম দিতেন যে তাতে কোনো ঘুমন্ত ব্যক্তিকে জাগিয়ে দিতেন না এবং জাগ্রত ব্যক্তিদের শোনাতেন। সুতরাং নবী (সা.) (তাঁর অভ্যাসমতো) এসে সালাম দিলেন, যেমন তিনি সালাম দিতেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৫২৫৭)
নিজের ঘরে এত সুন্দর চিন্তা লালন করে প্রবেশ করা ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ মানুষ হবে না আর কে হবে?
নবীজি (সা.) অযাচিত শব্দ শুনলে কানে আঙুল দিয়ে চলে যেতেন। নাফে (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার ইবনে ওমর (রা.) বাদ্যযন্ত্রের শব্দ শুনতে পেয়ে উভয় কানে আঙুল ঢুকিয়ে রাস্তা থেকে সরে গিয়ে আমাকে বললেন, হে নাফে, তুমি কি কিছু শুনতে পাচ্ছ? বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, না। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি কান থেকে হাত তুলে বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। তখন তিনি এ ধরনের শব্দ শুনে এরূপ করেছিলেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯২৪)