সুরমা
-মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ
এঁকেবেকে ছুটে চলি,
চলিতে চলিতে আমার সকল মনের কথা বলি।
জন্মকালে কুশিয়ারাকে হারিয়ে মনের দুঃখ নিয়ে,
চলেছি আমি একা একা তাই মাঠ-ঘাট পাড়ি দিয়ে।
কতনা গ্রাম পাড়ি দিই আমি পার করি কত শহর,
মোর বুক চিরে এগিয়ে চলে শত নৌকার বহর।
মোর মাঝ দিয়ে হেলে দুলে চলা বাল্কহেডের দেখা মেলে,
ভয়ে ভয়ে থাকি দানবটি নাকি আমাকেই গিলে ফেলে।
ছুটে চলার পথে পবিত্র নগরীর পাশ দিয়ে যখন যাই,
মোর দু’ধারে উঁচু উঁচু অনেক ভবনের দেখা পাই।
শীত-গ্রীষ্মে নির্মল পানির ¯্রােতহীন রূপের টানে,
চাঁদনি রাতে মুখরিত হই বাউলের গানে গানে।
চলার পথে পাহাড়ি নদী ও ঝরনার পানি এসে,
বহু দিকে দিয়ে ছুটে চলে চলে মোর প্রবাহে মেশে।
বর্ষা এলেই পাহাড়ি ঢল আর বৃষ্টি ধারার তোড়ে,
নদীর দু’কূল ভাসিয়ে আমি ছুটে চলি জোরে জোরে।
বানের পানিতে ভাসিয়ে দু’ধার সমুদ্রের রূপ ধরে,
বিল-খাল আর মাঠ-ঘাট দিই পরিপূর্ণ করে।
আমার পানির প্রবাহ কখনও শেষ যে হবার নয়,
মনের গভীরে রয়েছে আমার চেরাপুঞ্জির ভয়।
সবুজ বনানির সমারোহ আমি দু’পাশে দেখে দেখে,
এগিয়ে চলেছি দীর্ঘপথ, তারই ছায়া গায়ে মেখে।
মোর জল দিয়ে ¯œান করো, শস্য যে করো চাষ,
ফসলের মাঠের অতিজল হয় কৃষকের গলার ফাঁস।
ভ্রমণ করতে তোমরা যখন ঊর্ধ্বাকাশে উড়ে যাও,
এঁকেঁেবকে চলা আমার ছবি দেখে কি মজা পাও ?
আমার অববাহিকায় কত গুণিজন জন্ম নিল কত স্থানে,
মানুষের সেবা দিয়ে যাক তারা মাতৃভূমির টানে।
মোর পথ দিয়ে শত নৌযান নির্মাণ সামগ্রী ভরে,
কত বন্দরে ভিড়ায় তরি যুগ-যুগান্তর ধরে।
এসে মোর বুকে মাঝি ধরে মাছ নৌকায় চড়ে চড়ে,
যাত্রীরা যায় নিজ নিজ কাজে পাশের নৌকা ভরে।
মোর বুক খুঁড়ে বানিয়ে সেতু তোমরা যে মজা পাও,
দোয়া করি যেন নিজ নিজ কাজে দ্রুত পৌঁছে যাও।
যতই ভাটিতে বয়ে যাই আমি ততই বিস্তৃতি নিয়ে,
জীবন আমার পূর্ণ যে হয় মেঘনার সাথে গিয়ে।
ভুলেই গিয়েছিলাম কুশিয়ারার কথা দীর্ঘ পথের বাঁকে,
আবার হলো দেখা তারই সনে মেঘনা নদীর ডাকে।
আরও বহুদূর পাড়ি দিয়ে মোরা বঙ্গোপসাগরের বুকে,
বাকিটা জীবন কাটাতে চাই একসাথে পরম সুখে।
লেখক-ডিআইজি, সিলেট রেঞ্জ