রোজাদারের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মহানবীর চার নির্দেশনা
আহমাদ রাইদ
মানুষের স্বভাব ও প্রকৃতিবিরোধী কোনো আদেশ ইসলামে নেই। তাই রমজানের রোজা যেমন ফরজ করা হয়েছে, তেমনি মানুষের স্বাস্থ্যের প্রতিও খেয়াল করা হয়েছে। এমনভাবে রোজা রাখতে নিষেধ করা হয়েছে, যাতে শরীর মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে মানুষ মৃত্যুমুখে পতিত হয়। কোরআনে এসেছে, ‘…আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজটাই চান, কঠিন করতে চান না…।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৫)
লাগাতার না খেয়ে রোজা রাখা নিষিদ্ধ : লাগাতার রোজা রাখলে শরীর দুর্বল হয়ে যেতে পারে। তাই সারা বছর লাগাতার রোজা রাখতে নিষেধ করা হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের সাওমে বিসাল তথা লাগাতার না খেয়ে রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন। সাহাবারা জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি তো তা করে থাকেন? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমরা আমার মতো হতে পারবে না, আমাকে আমার রব পানাহার করান। তার পরও কোনো কোনো সাহাবি অতি আগ্রহে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অনুসরণে লাগাতার না খেয়ে রোজা রাখতে শুরু করেন। একাধারে কয়েক দিন এভাবে যাওয়ার পর ঈদের চাঁদ উঠে যাওয়ায় সবাই রোজা সমাপ্ত করতে বাধ্য হন, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) সেসব সাহাবিকে ধমকিস্বরূপ বলেন, যদি চাঁদ না উঠত, তাহলে আমি আরো দীর্ঘ করতাম। (মুসলিম, হাদিস : ১১০৩)
সাহরি খাওয়ার প্রতি উৎসাহ প্রদান : রোজা রাখার দরুন যাতে স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব না পড়ে, সে জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহরি খেতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমরা সাহরি খাওয়ার মাধ্যমে দিনের বেলা রোজা রাখতে সাহায্য নাও। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৬৯৩)
দ্রুত ইফতারের তাগিদ : শারীরিক সুস্থতার কথা চিন্তা করে নির্ধারিত সময়ে দ্রুত ইফতার করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আমর ইবনে মাইমুন (রহ.) বলেন, রাসুল (সা.) ও সাহাবিরা সবার আগে তাড়াতাড়ি ইফতার করতেন এবং সবার চেয়ে দেরিতে সাহরি খেতেন। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস : ৭৫৯১)
রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো বলেন, মানুষ যত দিন পর্যন্ত তাড়াতাড়ি ইফতার করবে, তত দিন কল্যাণের মধ্যে থাকবে। (বুখারি, হাদিস : ১৯৫৭, মুসলিম, হাদিস : ১০৯৮)
রোজায় শিঙা লাগাতে নিষেধ করা হয়েছে : রাসুলুল্লাহ (সা.) রোজা অবস্থায় শিঙা লাগাতে সাহাবাদের নিষেধ করেছেন, যাতে তাদের রোজা রাখতে কষ্ট না হয়। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রোজা অবস্থায় শিঙা লাগাতে আমাদের নিষেধ করা হয়েছে, যেন আমাদের কষ্ট না হয়। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৩৭৫)
এভাবেই ইসলামে রোজা অবস্থায় স্বাস্থ্যসচেতন হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সুতরাং মাহে রমজানে আমাদের এমন খাবার থেকে বেঁচে থাকা উচিত, যা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়।