শিরোপা জিতে বার্সায় জাভি যুগের সূচনা!
দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
লিওনেল মেসি বার্সেলোনা ছাড়ার পর প্রথম লিগ শিরোপা জিতেছে জাভি হার্নান্দেজের দল। ২০১৯ সালের পর প্রথম লিগ শিরোপা বার্সার ইতিহাসের ২৭তম লিগ শিরোপা। রোববার এস্পানিওলকে ৪-২ গোলে উড়িয়ে জাভি কোচ হিসেবে প্রথম লিগ শিরোপা জিতলেন। যে দাপট দেখিয়ে জিতলেন তাতে বার্সেলোনায় সম্ভবত জাভি যুগেরও সূচনা হলো।
২০১৮ সালে শেষবার স্প্যানিশ লিগ চ্যাম্পিয়ন বার্সা দলে ছিলেন মেসি। ক্যাম্প ন্যু-তে তখন তার সতীর্থ ছিলেন জাভি ও ইনিয়েস্তা। এরপর ক্লাব ছেড়েছেন মেসি। খেলা ছেড়েছেন জাভি-ইনিয়েস্তা। আর পাঁচ বছরের ব্যবধানে উঠে এসেছে গাভি-পেদ্রোর মতো নতুন তারকা। এই নতুনদের হাত ধরেই চার ম্যাচ বাকি থাকতে লিগ শিরোপা জিতেছে বার্সা। সে জয়টা মহিমান্বিত করেছেন ঘরের ছেলে জাভি। রোববার এস্পানিওলকে হারানোর পরই পয়েন্ট টেবিলে ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায় বার্সা। লা লিগার পয়েন্ট তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে তাদের পয়েন্টের তফাৎ ১৪। এ পার্থক্য বাকি চার ম্যাচ জিতলেও ঘোচাতে পারবে না রিয়াল। তাই লিগ শেষের আগেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেল বার্সা। জাভির হাতে দায়িত্ব দিয়ে ক্লাবের কর্তারা যে ভুল করেননি সেটাও প্রমাণ হয়েছে।
বার্সার কোচ হয়ে জাভি নিজের মতো দল তৈরি করেন। সেখানে লেভানডোভস্কির মতো অভিজ্ঞ স্ট্রাইকারের পাশাপাশি গাভি, পেদ্রি, রাফিনহার মতো তরুণরা আছেন। এরাই ছিলেন রোববার দলের জয়ের নায়ক। ১১ মিনিটের মাথায় দলকে এগিয়ে দেন লেভানডোভস্কি। ২০ মিনিটে ব্যবধান বাড়ান আলেজান্দ্রো বালডে। বিরতির আগে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন লেভানডোভস্কি। বিরতির পর বার্সার হয়ে চার নম্বর গোল করেন জুলস কুন্ডে। গাভি ও পেদ্রিরা গোল না পেলেও খেলেছেন দারুণ। এস্পানিওলের হয়ে দুটি গোল শোধ করেন পুয়াদো ও জোসিলু। বার্সেলোনার খেলোয়াড় আর কোচিং দলের সদস্যরাও শিরোপা জয়ের উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন এস্পানিওলের মাঠে। সেই সময় বার্সার খেলোয়াড়দের ধাওয়া করতে মাঠে ঢুকে পড়ে এস্পানিওলের সমর্থকরা। পরে অবশ্য পুলিশ আর স্কাউট এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ ঘটনা নিয়ে জাভি বলেছেন, ‘উদযাপন স্বাভাবিকই ছিল। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি যে, আমরা ঘরের মাঠে ছিলাম না। এজন্য আপনি অসম্মানজনক আচরণ করতে পারেন না। আমি জানি, এটা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন; কিন্তু আমি তাদের বলেছি যে, এখন চলে যাওয়াই ভালো।’ শিরোপা জয়ের পর জাভি বলেছেন, ‘অসাধারণ অনুভূতি, কাজ ভালোভাবে শেষ করার তৃপ্তি অনুভব করছি। জুলাইয়ে এ যাত্রা শুরু হয়েছিল। ১০ মাসের কঠোর পরিশ্রম ও ত্যাগের পর শিরোপা ধরা দিল। আমার মনে হচ্ছিল, আজই সেই মুহূর্ত। এই ম্যাচের আগে ফুটবলারদের ৫ দিন ছুটি দেওয়ায় অনেক সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু আমি মনে করি, এটিই আজ কাজে দিয়েছে। লিগ জিততে পেরে আমি খুবই খুশি ও গর্বিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘সমর্থকদের এই সাফল্য প্রাপ্য ছিল। ফুটবলারদেরও প্রাপ্য ছিল। শক্তিশালী দল গড়ে তোলায় ক্লাব প্রেসিডেন্টের প্রচেষ্টাও ছিল বিশাল। চার ম্যাচ বাকি রেখে লা লিগা জয়ে এটা প্রমাণ হয়েছে, বাকিদের চেয়ে আমরা কতটা শক্তিশালী। গোটা দলের কৃতিত্ব প্রাপ্য।’ চলতি মৌসুমে দারুণ ফুটবল খেলেছে বার্সেলোনা। লা লিগায় এখন পর্যন্ত ২৫ ম্যাচে তারা গোল হজম করেনি। সব মিলিয়ে ৩৪ ম্যাচে মাত্র ১৩ গোল হজম করেছে। জাভি বলেন, ‘অনেক ভুগতেও হয়েছে আমাদের। এই ক্লাবে সমালোচনার অভাব নেই। আশা করি, এখন কাজের মূল্যায়ন হবে। এটা বার্সা এবং আমি জানি, এখানে কীভাবে কাজ করতে হয়। খেলোয়াড় হিসেবেও ব্যাপারটি একই ছিল।’
সমালোচনা নিয়ে তিনি বলেন, ‘স্পেনে সমালোচনা স্বাভাবিক ব্যাপারই। আমি খেলোয়াড় থাকার সময়ও অনেক সমালোচনা হয়েছে। তবে আমি সবসময়ই জেদি। দিনশেষে ভালো কাজ করলে পুরস্কার মিলবেই।’ বার্সেলোনা কোচ পরের ম্যাচ জয়ের আশাপ্রকাশ করে বলেন, ‘এখনো চারটি ম্যাচ বাকি আছে। সবকটি জিতে আমরা লিগ শেষ করতে চাই। যদিও মূল লক্ষ্য ছিল লা লিগা জয়, তা আমরা পেরেছি। সুপার কাপও জিতেছি, অসাধারণ অর্জন এসব। তাছাড়া লিগ শিরোপা জয় আমাদের এই নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তা দিচ্ছে যে, আমরা আমাদের কাঠামোয় বিশ্বাস রাখতে পারি। এই সাফল্যের অর্থ, আমরা সঠিক পথেই আছি। অনেকেই এখন আমাদের ওপর ভরসা রাখবে ও ক্লাবে স্থিতিশীলতা আসবে। যদিও ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় আমাদের অভিযান এখনো অসমাপ্ত, সেখানে অনেক কিছু পাওয়ার আছে।’