অন্যের কথায় কষ্ট পেলে করণীয়
মুফতি আবদুল্লাহ নুর
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে মুমিন মানুষের সঙ্গে মেশে এবং তাদের পক্ষ থেকে পাওয়া কষ্টের ওপর সবর করে, সে ওই মুমিনের চেয়ে উত্তম, যে মানুষের সঙ্গে মেশে না এবং তাদের দেওয়া কষ্টের ওপর সবর করে না।’ (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৩৮৮)
আলোচ্য হাদিসে মুমিনদেরকে মানুষের আচরণে কষ্ট পেলে ধৈর্যধারণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষত যারা দ্বিনি দাওয়াতের কাজ করে, তারা আল্লাহর জন্য হাসিমুখে মানুষের কটূক্তি ও মন্দ কথা হজম করবে। তারা যদি মন্দ কথা শোনার পরও মানুষের সঙ্গে মেশে তাহলে আল্লাহ তাদের ত্যাগ ও শ্রম কবুল করে নেবেন।
এ ক্ষেত্রে মুমিন চিন্তা করবে, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ নবী-রাসুলগণও মানুষের কটূক্তি ও বাজে মন্তব্য থেকে রক্ষা পাননি, সেখানে আমি কে? এমনকি মানুষ আল্লাহর নিন্দা করতেও পিছপা হয় না। আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর চেয়ে কটুকথার ওপর অধিক ধৈর্যধারণকারী আর কেউ নেই। লোকেরা তাঁর জন্য সন্তান সাব্যস্ত করে, অথচ তিনি তাদের সুস্থ ও নিরাপদ রাখেন এবং তাদের জীবিকা দান করেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬০৯৯)
এই হাদিস থেকে জানলাম, কটূক্তি সহ্য করা আল্লাহর একটি গুণ।
তিনি তাঁর কটূক্তিকারীদের তাওবার সুযোগ দেন এবং তাদের পার্থিব জীবনকে বাধাগ্রস্ত করেন না। আল্লাহর এই গুণটি তাঁর প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর মধ্যেও বিদ্যমান ছিল। তিনি আপন ও শত্রু—সবার মন্দ কথা সহ্য করতেন। দীর্ঘ এক হাদিসে এসেছে, ‘একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) কিছু জিনিস (যুদ্ধলব্ধ সম্পদ) বণ্টন করলেন, যেমন বিভিন্ন সময় তিনি বণ্টন করতেন।
গনিমতের সম্পদ বণ্টন করলেন। তখন আনসারিদের এক লোক বলল, আল্লাহর কসম, এটা এমন বণ্টন, যাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি উদ্দেশ্য ছিল না। হাদিস বর্ণনাকারী আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, আমি তখন বললাম, অবশ্যই আমি কথাটি নবী (সা.)-কে জানিয়ে দেব। আমি তাঁর কাছে গেলাম। তিনি তাঁর সঙ্গীদের মাঝে ছিলেন।
আমি চুপে চুপে তাঁকে বিষয়টি জানালাম। কথাটি তাঁর জন্য কষ্টদায়ক হলো এবং কষ্টের ভাব চেহারায় ফুটে উঠল। আমার তখন মনে হলো, আহা! আমি যদি তাঁকে এই সংবাদটি না দিতাম! এরপর রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, মুসা (আ.)-কে এর চেয়ে বেশি কিছু দ্বারা কষ্ট দেওয়া হয়েছে। তিনি সবর করেছেন।
সুতরাং আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে কখনো যদি কাছের বা দূরের কারো কথায় কষ্ট পাই, তাহলে আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় আমরা ধৈর্য ধারণ করব। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ধৈর্যশীল হিসেবে কবুল করুন। আমিন।