পঙ্গু হওয়া হাতটির জন্য ডাক্তারদের দায়ী করলেন মঈনুল হক

দৈনিকসিলেটডটকম
সিলেটের মঈনুল হক একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার এবং মূদ্রণ ব্যবসায়ী। নগরের রাজা ম্যানশনে ছিলো তার ব্যবসা। বেশ ভালোই চলছিলো। এর আগে তিনি হকসুপার মার্কেট পূর্বজিন্দাবাজারে চালু করে ছিলেন মাহমুদ কম্পিউটার। হঠাৎ ব্রেন স্ট্রোক করায় সব কিছু এলোমেলো হয়ে যায়। ছয় মাস পর হাতের কোষ শুকিয়ে গেছে হাতটি সূস্হ হওয়া অসম্ভব এমন কথা জানান সিলেটের চিকিৎসকরা।
তিন বছর পার করেন হতাশা দু:খ আর কষ্টের মধ্যে দিয়ে। তার পর সৌভাগ্যবশত একজন থেরাপিস্ট এর সন্ধান পান মঈনুল হক যার কাছে দুই মাস থেরাপী দিয়ে তিনি আজ প্রায় ৫০% সূস্হ। হাতটি কিছূটা হলেও নাড়াতে পারেন।
মঈনুল হক তার দু:খ এবং হতাশার কথা জানান দৈনিকসিলেটডটকমকে।
তিনি বলেন, ‘ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার ছয় মাস পরে হাতের কোষ শুকিয়ে যায়, আর হাতটি সূস্হ হওয়া অসম্ভব।’ সিলেটের ২০/২২ জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, ৪০/৫০ জন থেরাপিষ্ট বলে ছিলেন। ডাক্তাররা এও বলেন আমি আর সূস্হ হতে পারব না। তিন থেকে ছয় মাসের মাঝে মারা যাব। আর চিকিৎসা করিয়ে ফায়দা নেই। তিন মাস পরে সিরিয়াল পাওয়া ঢাকার ডাক্তার দীন মোহাম্মদ বলেছিলেন, ‘সময় চলে গেছে। সময়মত আসলে দেখা যেত।’
‘সময় চলে গেছে’ এই কথাটি ছিল মারাত্মক ভুল। না হলে আমার স্বজনরা তখনই দেখত কোন কিছু করা যায় কি না?
আজ থেকে দূই বছর পূর্বে সিলেট মেডিকেল কলেজের স্বনামধন্য অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধানের কাছে একটা প্রশ্ন করেছিলাম। জবাবে তিনি বলেছিলেন, আমরা আপনাকে শুধু বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করছি। হাত নিয়ে কোন চিন্তা করছি না। একটা হাততো আছে। যাদের দুটি হাত নেই তারাও তো বেঁচে থাকে। আর রাইসটোপ যখন মনে করা যাবে আর প্রয়োজন নেই, তখনই খুলে দেয়া হবে।
আর হ্যা, পনের মাস পরে রাইসটোপ খুলা দেয়া হয়। আমার হাসপাতালের শয্যাশায়ী জীবনের আল্লাহ ইতি টানেন। আমি স্ট্রোক করি ১২ই নভেম্বর ২০২০ সালে আর হাসপাতালের রাইসটোপ থেকে মূক্তি লাভ করি পনের মাস পরে।
মঈনুল হক অনেকটা আবেগে আপ্লুত হয়ে বলেন, মানিক পীর (র.) রোডের জালালাবাদ পঙ্গু হাসপাতালের ডাক্তার দূই মাস থেরাপি দেয়ার পর তার চেম্বারে আমাদের ডেকে নেন। তার মতে আমাদের চিকিৎসার আর প্রয়োজন নেই। অযথাই খরচ হচ্ছে। যে কয় মাস হায়াত আছে, সে কয় মাস বাঁচব। তার জন্য আর খরচ করার প্রয়োজন নেই। আমার মাথায় হাত রেখে দোয়া করে বিদায় দেন।
এর পর থেকে তিন বছর হয় আল্লাহর রহমতে আমি বেঁচে আছি। এখনও মরি নি! বিগত দুই বছর কোন ডাক্তার অথবা থেরাপিষ্ট আমার চিকিৎসার দায়িত্ব নিতে চায়নি। কেননা তাদের মতে ছয় মাস পরে আর ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা চলে না। আর কোন চিকিৎসা নেই।
ডাক্তারের এমন কথায় আমার আপনজনের মন ভেঙে যায়। তারা দুইটি বছর বিনা চিকিৎসায় আমার মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।
তার পর আমি একজন মহান থেরাপিস্ট এর সন্ধান পাই। মানবিক এই মানুষটির প্রচেষ্টায় এবং মহান আল্লাহর রহমতে আমি প্রায় সূস্হ জীবন যাপন করছি।
তিনি সকলের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, চিকিৎসকরা কি একজন রোগী এভাবে মারা যাবার কথা বলতে পারেন?
চিকিৎসা নিলে হয়তো এতো দিনে ভালো হয়ে যেতাম। সে জন্য আমি আমার পঙ্গু হওয়া হাতটির জন্য ডাক্তারদের দায়ী করছি। কারণ তারা আমার সঠিক চিকিৎসা করেননি।