পরিকল্পনামন্ত্রীর নগদ টাকা বেড়েছে ১৭২ গুণ
রাজু আহমেদ রমজান, সুনামগঞ্জ:
সুনামগঞ্জ-৩ আসনে (জগন্নাথপুর, শান্তিগঞ্জ) তিনবারের সাংসদ পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবারো আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী তিনি। প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে (২০০৮ সাল) তার নগদ টাকা বেড়েছে ১৭২ গুণ।
বর্তমানে এমএ মান্নানের কাছে নগদ ৩৪ লাখ ৪৩ হাজার ৫১ টাকা রয়েছে। আর ২০০৮ সালে ছিল ২০ হাজার টাকা। নির্বাচনে অংশ নিতে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দাখিল করা হলফনামা সূত্রে পাওয়া এ তথ্য। জানা গেছে, গেল ১৫ বছরে এমএ মান্নানের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জমা টাকা বেড়েছে ১১ গুণ। বর্তমানে ১ কোটি ১০ লাখ ৭৯ হাজার ৪২৮ টাকা ব্যাংকে জমা আছে। বিগত ২০০৮ সালের নির্বাচনে ব্যাংকে ছিল ১০ লাখ টাকা। বর্তমানে পোস্টাল, সেভিংস ও সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রের বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ আছে ৬০ লাখ টাকা।
অন্যান্য (আইসিবি, এ.এম.সি.এল ইউনিট ফান্ড) খাতে আছে ১৫ লাখ একহাজার ৫৬০ টাকা। এছাড়া গাড়ি, আসবাবপত্র, ইলেকট্রনিক সামগ্রীসহ নির্বাচনী হলফনামায় পরিকল্পনামন্ত্রী ৩ কোটি ৩৩ লাখ ৮৮ হাজার ৫ টাকার অস্থাবর সম্পত্তির তথ্য দিয়েছেন। অথচ ২০০৮ সালে যেখানে অস্থাবর সম্পদ ছিল ৬৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। এমপি হওয়ার পর ১৫ বছরে অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ৫ গুণ। অন্যদিকে, ২০০৮ সালে মন্ত্রীর মোট স্থাবর সম্পদ ছিল ৫.৩২ একরের কৃষি জমি, ১৩ শতক পুকুর, ৩টি আধাপাকা টিনশেড ঘর, ০.৪২ একরের বাড়ি, রাজধানীর নিকুঞ্জ ও আশুলিয়ায় ৭ শতক জায়গা। ২০২৩ সালে এসে সামান্য কৃষি জমি বেড়ে হয়েছে ৫.৩৪ একর। যে তিনটি টিনশেড আধাপাকা বাড়ি ছিল তা দান করে দেওয়ায় মন্ত্রীর আর বাড়ি নেই। নিকুঞ্জের ৩ শতক জমি বিক্রি করে দেওয়ায় বাকি আছে শুধু আশুলিয়ার ৪ শতক জায়গা। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মন্ত্রীর নগদ টাকা ছিল ২০ হাজার টাকা। এছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ছিল ১০ লাখ টাকা। পোস্টাল, সেভিংস ও সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ ছিল ৩৭ লাখ টাকা।
সেখানে তিনি আয়ের উৎস দেখিয়েছিলেন কৃষিখাত থেকে বাৎসরিক ৮০ হাজার, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানত থেকে ৩৭ লাখ টাকা। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে নগদ টাকা বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ছিল ৪০ লাখ ৮ হাজার ৯৮৬ টাকা। বন্ড ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জে ১৯ লাখ টাকা। আয়ের উৎস ছিল সংসদ সদস্য হিসবে বাৎসরিক ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা, বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট/দোকান ভাড়া ২ লাখ ৬৩ হাজার ৭১২ টাকা, শেয়ার ও সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানত থেকে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৪৬৭ টাকা। অপরদিকে ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মান্নানের নগদ টাকা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ লাখ ৬১ হাজার ৮৬৪ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ছিল ৫৫ লাখ ৩৫ হাজার ৮০২ টাকা। পোস্টাল, সেভিংস ও সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রের বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ ছিল ৬৯ লাখ টাকা।
আয়ের উৎস ছিল পেশা ( অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য) হিসেবে ১১ লাখ ৪ হাজার, বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট/দোকান বা অন্যান্য ভাড়া থেকে ৩ লাখ ৯৬ হাজার ২৮০ টাকা, শেয়ার ও সঞ্চয়পত্র থেকে ৭ লাখ ৭৯ হাজার ৬২২ টাকা এবং অন্যান্য থেকে ১ লাখ ৭৪ হাজার টাকা ৷ হলফনামায় দেয়া তথ্যের বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেন, হলফনামায় ছোটখাটো ভুল থাকলেও থাকতে পারে। তবে গেল ১৫ বছরে বেতন বহির্ভূত উল্লেখ করার মতো আমার কোনো আয় ছিল না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, পৈতৃক ভিটায় আমার যে অংশ ছিল, সেটি সরকারকে দান করেছি। তিনি বলেন, শান্তিগঞ্জের যে বাড়িতে আছি, এটি আমার ছেলে ও স্ত্রী কিনেছেন। ওখানে টিনশেডের বাড়ি করা হয়েছে। রাজধানীর নিকুঞ্জে তিন শতক জমি ছিল, সেটি বিক্রি করে পূর্বাচলে ১০ শতক জমি কেনা হয়েছে। এটি আমার সন্তানদের নামে রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সুনামগঞ্জ-৩ আসনে পরিকল্পনামন্ত্রীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী সাবেক সাংসদ শাহীনুর পাশা চৌধুরী, জাতীয় পার্টির তৌফিক আলী মিনার, জাতীয় গণফ্রন্টের মকবুল হোসের তালুকদার, জাকের পার্টির নজরুল ইসলাম।