দূর থেকে মসজিদে আসা মুসল্লির জন্য মহানবীর সুসংবাদ
আহমাদ ইজাজ
ঈমানদাররা মসজিদের সন্নিকটে নিজেদের ঘর তৈরি করতে চান। পাঁচ ওয়াক্ত আজানের আওয়াজ শুনতে মুমিনের অন্তর ব্যাকুল থাকে। কিন্তু সব সময় সাধ ও সাধ্যের মেলবন্ধন তৈরি হয় না। অনেকের ঘর হয় মসজিদ থেকে দূরে।
মসজিদ থেকে বাড়ির দূরত্ব বেশি হলে মুমিনের আশাহত হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা ঘরবাড়ি মসজিদ থেকে দূরে হলে দূরত্ব অনুযায়ী সালাতের গুরুত্ব ও সওয়াব বেড়ে যাবে।
আবু মুসা (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, (মসজিদ থেকে) যে যত বেশি দূরত্ব অতিক্রম করে সালাতে আসে, তার তত বেশি সওয়াব হবে। আর যে ব্যক্তি ইমামের সঙ্গে সালাত আদায় করা পর্যন্ত অপেক্ষা করে, তার সওয়াব সে ব্যক্তির চেয়ে বেশি, যে একাকী সালাত আদায় করে ঘুমিয়ে পড়ে।
(বুখারি, হাদিস : ৬৫১)
মসজিদে আসার জন্য যত ধাপ ও পদক্ষেপ অতিক্রম করবে, প্রতি ধাপ ও পদক্ষেপে গুনাহ মাফ হবে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি বাড়ি থেকে অজু করে আল্লাহর কোনো ঘরের দিকে এই উদ্দেশ্যে যাত্রা করে যে আল্লাহর নির্ধারিত কোনো ফরজ ইবাদত (সালাত) আদায় করবে, তাহলে তার প্রতি দুই পদক্ষেপের মধ্যে একটিতে একটি করে গুনাহ মিটিয়ে দেওয়া হবে এবং অন্যটিতে একটি করে মর্যাদা উন্নত করা হবে। (মুসলিম, হাদিস : ১৪০৭)
জামাতে নামাজ আদায়ের জন্য যাওয়া প্রতি কদমে নেকি লাভ হয়। সাঈদ ইবনুল মুসাইয়াব (রা.) বলেন, এক আনসারি সাহাবির মৃত্যু উপস্থিত হলে তিনি বলেন, আমি তোমাদের কাছে একটি হাদিস শুধু সওয়াব অর্জনের জন্য বর্ণনা করতে চাই।
আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, তোমাদের কেউ যখন ভালোভাবে অজু করে সালাতের উদ্দেশ্যে রওনা হয়, তখন সে তার ডান পা ওঠানোর সঙ্গে সঙ্গে তার আমলনামায় একটি নেকি লেখা হয়। অতঃপর তার বাঁ পা ফেলার সঙ্গে সঙ্গে তার একটি গুনাহ মাফ করা হয়। অতএব, ব্যক্তি ইচ্ছা করে তার আবাসস্থল মসজিদের কাছে বা দূরে করতে পারে। অতঃপর ওই ব্যক্তি মসজিদে আগমনের পর জামাতের সঙ্গে সালাত আদায় করলে তার সব (সগিরা) গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। যদি সে মসজিদে পৌঁছতে পৌঁছতে তারা কিছু অংশ আদায় করে ফেলে এবং কিছু বাকি থাকে, তাহলে সে ইমামের সঙ্গে যতটুকু পাবে ততটুকু আদায় করবে এবং যা বাকি থাকবে তা পূর্ণ করবে।
কিন্তু সওয়াবের ব্যাপারে ওই ব্যক্তি পূর্ণ সালাতপ্রাপ্ত ব্যক্তির মতো হবে। যদি সে মসজিদে আসার পর দেখে যে ইমাম তাঁর সালাত শেষ করে ফেলেছেন, তখন সে একাকী সালাত আদায় করবে। তবু তাকে ক্ষমা করা হবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫৬৩)
উবাই ইবনে কাব (রা.) বলেন, এক (আনসারি) লোক ছিলেন। মসজিদ থেকে তার চেয়ে দূরে কোনো ব্যক্তি অবস্থান করতেন বলে আমার জানা নেই। তবু তিনি কোনো ওয়াক্ত সালাত (জামাতে মসজিদে) আদায় করতে ত্রুটি করতেন না। একদা তাকে বলা হলো বা আমি তাকে বললাম, যদি একটা গাধা ক্রয় করতেন এবং রাতের অন্ধকারে ও উত্তপ্ত রাস্তায় তার ওপর আরোহণ করতেন (তাহলে ভালো হতো)! তিনি বলেন, আমার বাসস্থান মসজিদের পাশে হলেও তা আমাকে আনন্দ দিতে পারত না। কারণ আমার মনস্কামনা এই যে মসজিদে যাওয়ার এবং নিজ বাড়ি ফেরার সময় প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে যেন সওয়াব লিপিবদ্ধ করা হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) (তার এমন নেকি অর্জনের আগ্রহ দেখে) বলেন, নিশ্চিতরূপে আল্লাহ তোমার (ভাগ্যে) তার সব জুটিয়েছেন। (মুসলিম, হাদিস : ১৪০০)