সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় বিনিয়োগ সম্ভাবনা: কোম্পনীগঞ্জ
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার আয়তন ২৯৬.৭৬ বর্গ কি:মি:। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উত্তরে ভারতের মেঘালয়, দক্ষিণে সিলেট সদর উপজেলা, পূর্বে গোয়াইনঘাট উপজেলা এবং পশ্চিমে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলা। ধলাই, সুরমা ও পিয়াইন কোম্পানীগঞ্জের প্রধান নদী। উপজেলার মোট ইউনিয়ন ৬টি। পূর্ব ইসলামপুর, পশ্চিম ইসলামপুর, তেলিখাল, ইছাকলস, উত্তর রনিখাই এবং দক্ষিণ রনিখাই। উপজেলার শিক্ষার হার-২৮.৮%। জনসংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার। কৃষি জমির পরিমান ৫৮,৮৭৭.৮০ একর। উপজেলায় ১৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৪টি কলেজ, ৪টি দাখিল ও আলিম মাদ্রাসা এবং ২৫৪ টি মসজিদ রয়েছে। কোম্পানীগঞ্জে পর্যটন খাতে বিনিয়োগের সম্ভবনা রয়েছে। ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর সিলেট বিভাগের একটি অন্যতম টুরিস্ট স্পট। সাদাপাথরকে কেন্দ্র করে পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়ন, পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়ন এবং উত্তর রনিখাই ইউনিয়নে আরও হোটেল, মোটেল রিসোর্ট গড়ে উঠতে পারে। এছাড়াও উৎমাছড়া, তুড়ং ছড়া টুরিস্ট স্পট হতে পারে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটলে পর্যটনগণ সরাসরি ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর থেকে উৎমাছড়া, তুড়ংছড়া, বিছানাকান্দি, মায়াবী ঝর্ণা, জাফলং যেতে পারবেন। এ এলাকাগুলোতে ভ্রমণ করার জন্য একটি কানেকটিং রাস্তা করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। পুরো এলাকাজুড়ে অসংখ্য হোটেল, মোটেল এবং রিসোর্ট গড়ে উঠতে পারে। কোম্পানীগঞ্জের বিদ্যুৎ সরবরাহ ভালো। সিলেট থেকে ভোলাগঞ্জ যাবার রাস্তাটি বেশ উন্নত। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে ডেইরী ফার্ম, হাস-মুরগীর খামার গড়ে উঠতে পারে। কোম্পানীগঞ্জের হাওরগুলোতে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। তাছাড়ও বিভিন্ন পুকুর এবং দীঘিতে মাছ চাষ হতে পারে। এ সকল হাওড়, পুকুর, দীঘীকে কেন্দ্র করে ইছাকলস, উত্তর রনিখাই, তেলিখাল ইউনিয়নে ফিশ প্রসেসিং প্ল্যান্ট গড়ে উঠতে পারে। কোম্পানীগঞ্জের থানাসদর, টুকেরবাজার, দয়ারবাজার, পারুয়াবাজার, এলাকায় মিষ্টি, কেক দই, বিস্কুট তৈরীর কারখানা হতে পারে। কোম্পানীগঞ্জের হাওরগুলোতে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। এছাড়াও বিভিন্ন পুকুর এবং দীঘিতে মাছ চাষ হতে পারে। এ সকল হাওর, পুকুর, দীঘিকে কেন্দ্র করে ইছাকলস, উত্তর রনি খাই, তেলিখান ইউনিয়নে ফিশ প্রসেসিং প্ল্যান্ট গড় উঠতে পারে। কোম্পানীগঞ্জের হ্যাচারী গড়ে তোলা সম্ভব। সিলেট ভোলাগঞ্জ মহাসড়কের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা অংশের যে কোন স্থানে অটোরাইস মিল হতে পারে। থানা সদরে ছোট পরিসরে হলেও ক্লিনিক তৈরী হতে পারে। কোম্পানীগঞ্জের খাগাইল এলাকায় ইতিমধ্যে অটোবিক্সস ফ্যাক্টরী হয়েছে। ভোলাগঞ্জ এবং পারুয়া এলাকায় আরও অটোব্রিকস ফ্যাক্টরী গড়ে তোলা সম্ভব। নদীপথে এবং সড়ক পথে সিলেটের সাথে কোম্পানীগঞ্জের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো। ভোলাগঞ্জ বর্ডার দিয়ে ভারত থেকে স্বল্পমূল্যে চুনাপাথর ও কয়লা আমদানী করা যায়। কোম্পানীগঞ্জে বালু এবং পাথর পাওয়া যায়। আমদানীকৃত চুনাপাথর দেশের বিভিন্ন সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে যায়। কোম্পানীগঞ্জের পাথর, বালু, চুনাপাথর ও কয়লাকে কাজে লাগিয়ে কাটাগাংগ এবং মহাসড়কের পাশে সিমেন্ট ফ্যাক্টরী গড়ে তোলা সম্ভব। কোম্পানীগঞ্জে সিমেন্ট ফ্যাক্টরী হলে পরিবহন খরচ তুলনামূলকভাবে হ্রাস পাবে। কোম্পানীগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক রয়েছে। পার্কটি পুরোপুরি সম্পন্ন হলে এখানে প্রায় ৫০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করা যায়। এই হাইটেক পার্কটিতে সফটওয়্যার ফার্মসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক আইটেম, মোবাইল, ক্যাবল প্রভৃতি উৎপাদন করা সম্ভব। ইতিমধ্যে ওয়ালটন, স্যামসাং প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান এই পার্কটিতে প্লট ক্রয় করেছে। বর্তমানে পার্কটির কাজ চলছে। কোম্পানীগঞ্জে সোলায় প্ল্যান্ট, পাওয়ার প্ল্যান্ট গড়ে তোলা সম্ভব। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত এবং এখানে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ রয়েছে। পাথর ভাঙ্গার মেশিনগুলো বন্ধ থাকার ফলে বিদ্যুতের সরবরাহের তুলনায় ব্যবহার কম হয়। পাথর কোয়ারীগুলো বন্ধ থাকার ফলে শ্রমিকগণ বিভিন্ন স্থানে চলে গেছেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমন্ডিত কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় স্বল্প মজুরীর বিনিময়ে শ্রমিক পাওয়া যায়। উপজেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো। কোম্পানীগঞ্জে শিক্ষার হার কম এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বসবাস পরিলক্ষিত হয়। কোম্পানীগঞ্জের নি¤œ অঞ্চলগুলোতে প্রায়ই বন্যা হয়ে থাকে। কোম্পানীগঞ্জে শুধুমাত্র হাইটেক পার্কে গ্যাসের সংযোগ রয়েছে। কোম্পানীগঞ্জের প্রবাসীগণের মাঝে প্রায় ৮০% সৌদিআরব, কাতার, কুয়েত, ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সমূহে অবস্থান করছেন। ইংল্যান্ড, আমেরিকা, কানাডা, ফ্রান্স, পর্তুগালসহ অন্যান্য দেশে অবস্থান করছেন প্রায় ২০% কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার প্রবাসীগন।
সম্ভাব্য বিনিয়োগের খাত/সম্ভাব্য উৎপাদনঃ
[পর্যটন শিল্প, ডেইরী ফার্ম, হাঁস-মুরগীর খামার, মৎস উৎপাদন ও ফিশ প্রসেসিং প্ল্যান্ট, হ্যাচারী, মিষ্টি, কেক, দই, বিস্কুট উৎপাদন, অটোরাইস মিল, ক্লিনিক ও হাসপাতাল, অটোব্রিকস ফ্যাক্টরী, সিমেন্ট ফ্যাক্টরী, সফটওয়্যার ফার্ম, ইলেকট্রনিক আইটেম, মোবাইল, ক্যাবল উৎপাদন, সোলার ও পাওয়ার প্ল্যান্ট। ক্ষেত্র বিশেষে ফিজিবিলিটি টেস্ট প্রয়োজন।]
ড. ফজলে এলাহী মোহাম্মদ ফয়সাল
অধ্যাপক,ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ,শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
চলবে—