সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় বিনিয়োগ সম্ভাবনা: জকিগঞ্জ
ড. ফজলে এলাহী মোহাম্মদ ফয়সাল
জকিগঞ্জ উপজেলা বাংলাদেশের উত্তর পূর্ব কোনের সর্বশেষ উপজেলা। জকিগঞ্জের আয়তন ২৬৭ বর্গ কি. মি. এবং জনসংখ্যা প্রায় ২ লাভ ৫০ হাজার। জনসংখ্যার ঘনত্ব ৮৯০ বর্গ কিলোমিটার। জকিগঞ্জের উত্তরে কানাইঘাট উপজেলা ও ভারতের মেঘালয়, পূর্ব ও দক্ষিণে ভারতের আসাম, পশ্চিমে বিয়ানীবাজার উপজেলা। জকিগঞ্জ উপজেলার ইউনিয়নের সংখ্যা ৯টি এবং পৌরসভা ১টি। উপজেলায় উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ ৭টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২২টি, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১০৭টি এবং মাদ্রাসা ৫৭ টি রয়েছে। জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি এবং কৃষির সাথে জড়িত রয়েছেন উপজেলার ৪৬.০৬% জনগন। সব কয়টি ইউনিয়ন পল্লী বিদ্যুৎ কর্মসূচীর আওতাধীন। তিন নদীর মোহনা আমলশীদ, মরিচা বাগানবাড়ী উপজেলার দর্শনীয় স্থান। দুধের এবং গরুর মাংশের চাহিদা বেশী হওয়ার কারণে এবং প্রাকৃতিক ঘাসের প্রাচুর্যতা থাকার ফলে এবং ঘাস উৎপন্ন করা সম্ভব হবার ফলে উপজেলার বারহাল ইউনিয়ন, কসকনকপুর ইউনিয়নসহ অন্যান্য স্থানে ডেইরী ফার্ম দেয়া সম্ভব। জকিগঞ্জের সব ইউনিয়নেই গরুর খামার দেয়া সম্ভব। জকিগঞ্জে ছাগল এবং ভেড়ার খামার দেয়া সম্ভব। হাস-মুরগীর খামার বৃদ্ধি করা যেতে পারে। হাঁস-মুরগীর খামার দেবার মত জনবল জকিগঞ্জ রয়েছে। জকিগঞ্জের হাওর ও নি¤œ অঞ্চলে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। মৎস্য আহরণ বৃদ্ধি করা এবং মৎস্য খামার দেয়া জকিগঞ্জে লাভজনক হবে বলে আশা করা যায়। জকিগঞ্জ ফিশ প্রসেসিং প্ল্যান্ট দেয়া সম্ভব হলেও সিলেট থেকে দূরত্বের কারণে পরিবহন ব্যয় বেশী হবে। মানিকপুর ইউনিয়ন, কসকনকপুর ইউনিয়ন ও বারোঠাকুরী ইউনিয়নে সোলার প্ল্যান্ট দেয়া সম্ভব হতে পারে এবং এ অঞ্চলগুলোতে সমতল ভূমি রয়েছে। মানিকপুর ইউনিয়নের কালিগঞ্জ বাজারে বিস্কুট, কেক, দই, মিষ্টি প্রভৃতি উৎপাদনকারী কারখান হতে পারে। এছাড়াও কালিগঞ্জে স্টিল নির্মিত আলমারী প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত করা যেতে পারে। মানিকপুর ইউনিয়নের অর্থনৈতিক অবস্থা তুলনামূলকভাবে ভালো। ভারতের সুতারকান্দি থেকে আমদানীকৃত কয়লার ব্যবহারের মাধ্যমে এবং পাশ^বর্তী ভারতের সেভেন সিস্টারের মার্কেট টার্গেট করে জকিগঞ্জে সিরামিক ফ্যাক্টরী প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। জকিগঞ্জ পৌরসভায় বেসরকারী উদ্যোগে হাসাপাতাল, ক্লিনিক এবং ডায়গনস্টিক সেন্টার হতে পারে। বারোঠাকুরী ইউনিয়নে প্রচুর পরিমান টমেটো, শীম, পটল প্রভৃতি উৎপন্ন হয়। সিলেট থেকে দূরত্বের কারণে এবং গ্যাস সংযোগ না থাকার ফলে আপাতত ফুড প্রসেসিং প্ল্যান্ট করা সম্ভব হচ্ছে না। জকিগঞ্জের যোগাযোগ ব্যবস্থা মোটামুটি ভালো এবং জনগনের মাঝে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। সিলেট থেকে জকিগঞ্জের দুরত্ব বেশী হবার ফলে পন্যের পরিবহন খরচ বেশী হয়ে যায়। অপর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ জকিগঞ্জের একটি বড় সমস্যা। জকিগঞ্জের অনেক এলাকায় দরিদ্র শ্রেনীর জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে এবং শিক্ষার হার তুলনামূলকভাবে কম। গ্যাসের সংযোগ না থাকার ফলে বড় পরিসরে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে না। জকিগঞ্জের প্রবাসীগণের মাঝে প্রায় ৭০% প্রবাসী মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ, যেমন সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, ওমান ইত্যাদি দেশে অবস্থান করছেন। ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, পর্তুগালসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এবং আমেরিকা, কানাডা ইত্যাদি দেশে অবস্থান করছেন প্রায় ৩০% প্রবাসী। জকিগঞ্জের বিরাট এলাকা জুড়ে রয়েছে নি¤œ অঞ্চল। এসকল এলাকায় ধান উৎপাদন এবং মৎস্য আহরণ করা হায় থাকে। অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নতির সাথে সাথে জকিগঞ্জের জনগন সিলেট শহরে আসতে বেশী আগ্রহী।
সম্ভাব্য বিনিয়োগের খাত/সম্ভাব্য উৎপাদনঃ
[ডেইরী ফার্ম ও গরুর খামার , মৎস্য খামার, হাঁস-মুরগীর খামার, ছাগল ও ভেড়ার খামার, স্টিল নির্মিত আলমারি, সোলার প্ল্যান্ট, মিষ্টি, দই, বিস্কুট ও কেক উৎপাদন, সিরামিক ফ্যাক্টরী, হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সব্জি উৎপাদন। ক্ষেত্র বিশেষে ফিজিবিলিটি টেস্ট প্রয়োজন।]
ড. ফজলে এলাহী মোহাম্মদ ফয়সাল
অধ্যাপক,ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ,শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
চলবে—