বিয়ানীবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের আজীবন সদস্য হলেন শিক্ষানুরাগী ৪ কৃতি সন্তান
বিয়ানীবাজার প্রতিনিধি
সময়ের প্রয়োজনে শিক্ষানুরাগী সচেতন মহলের ঐকান্তিক প্রয়াসে প্রতিষ্ঠিত বিয়ানীবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের আজীবন সদস্য পদ গ্রহণ করেছেন বিয়ানীবাজারের শিক্ষানুরাগী ৪ জন কৃতি সন্তান। বিদ্যালয়টির অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে আজীবন সদস্য পদ গ্রহণকারীরা হলেন শিক্ষানুরাগী ও সমাজ সেবক মোহাম্মদ সাব উদ্দিন, মোঃ তোফায়েল খান, ছয়ফুল্লাহ হিল বাবলু ও ইকবাল হোসেন।
সম্প্রতি বিদ্যালয়টির পক্ষ থেকে তাঁদের সম্মানে আয়োজিত পৃথক পৃথক মতবিনিময় সভায় বিস্তারিত অবগত হয়ে তাঁরা এই বিদ্যালয়টির উন্নয়নে এগিয়ে এসেছেন।
জানা যায়, বিয়ানীবাজার পৌরশহরে অবিস্থত ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ পিএইচজি হাইস্কুল ২০১৮ সালে সরকারিকরন হয়। সরকারি করন হওয়ার পর বিদ্যালয়টিতে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তির আসন সীমিত হয়ে ১১০ জন ধার্য্য হয়। তন্মধ্যে ৫৫জন ছাত্র ও ৫৫ জন ছাত্রী কোটা নির্ধারিত হয়। এই অবস্থায় ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি ইচ্ছুক পৌরসভা অঞ্চলের উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যক সাধারন ছাত্র ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। তাদের কেউ কেউ বৈরাগীবাজার, মাথিউরা কিংবা মুল্লাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। আবার অনেক ছাত্র ভর্তির সুযোগ না পেয়ে ঝরে পড়ে শিক্ষা জীবন থেকে। কারন গোটা পৌারসভা ও ঘুঙ্গাদিয়া-বড়দেশ অঞ্চলের মধ্যে খলিল চৌধুরী আদর্শ বিদ্যানিকেতন ছাড়া আর কোন পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় নেই। তবে পৌরশহরে মধ্যে কিন্ডার গার্ডেন আদলের কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, কিন্তু এগুলো তুলনামূলক ব্যয়বহুল। কঠিন এই বাস্তবতায় সময়ের প্রয়োজনে, ঝরে পড়া সাধারন শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন অব্যাহত রাখার তাগিদে এগিয়ে আসেন বিয়ানীবাজারের শিক্ষানুরাগী একদল সচেতন মহল। তারা সময় উপযোগী সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেন ‘বিয়ানীবাজার উচ্চ বিদ্যালয়’ নামক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টি ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে স্থানীয় গোলাবিয়া পাবলিক লাইব্রেরীতে অস্থায়ীভাবে পাঠদান শুরু করে। উদ্যোক্তাদের আহবানে সাড়া দিয়ে দেশে ও প্রবাসে থাকা শিক্ষানুরাগী বিয়ানীবাজারবাসীর সার্বিক সহযোগীতায় এগিয়ে চলে বিদ্যালয়টি। হাটি হাটি পা পা করে এগিয়ে চলা বিদ্যালয়টি মাত্র ৩ বছরের মধ্যে স্থান্তরিত হতে যাচ্ছে নিজস্ব ক্যাম্পাসে। পিএইচজি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় লাগোয়া (পশ্চিম পাশে) ৩২ শতাংশ ভূমি বিদ্যালয়টির নিজস্ব ক্যাম্পাস স্থাপনের জন্য পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তন্মধ্যে ২০ শতাংশ ভূমি ইতিমধ্যে ক্রয় করা হয়েছে শিক্ষানুরাগী ভূমিদাতাদের অর্থায়নে। অপর ১২ শতাংশ ভূমি ক্রয়ের প্রক্রিয়াধিন আছে। শিক্ষানুরাগী ভূমিদাতাদের অর্থায়নে শীঘ্রই অবশিষ্ট ভূমিও ক্রয় করা হবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। সেখানে চলমান ভবণ নির্মাণ কাজ অনেকটা শেষ পর্যায় রয়েছে।
বিদ্যালয়ের অর্থ-কমিটির আহবায়ক এবং নবদ্বীপ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক আব্দুল বাসিত টিপু জানান, ২০২৫ সালের শুরুতেই নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাত্রা করবে বিয়ানীবাজার উচ্চ বিদ্যালয়। তিনি বলেন, এই অল্প সময়ের মধ্যে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা, পাঠদান শুরু, ভূমি ক্রয়, নিজস্ব ক্যাম্পাসে ভবণ তেরী ইত্যাদি বিশদ কর্মযজ্ঞ সম্পাদন মোটেও সহজ ছিল না। অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে এই পর্যায় নিয়ে আসতে হয়েছে। এজন্য একদিকে যেমন নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন উদ্যোক্তারা, অন্যদিকে এগিয়ে এসেছেন বিয়ানীবাজারের দেশি ও প্রবাসী শিক্ষানুরাগীরা। কেউ কেউ হয়েছেন ভূমিদাতা সদস্য, কেউ দাতা সদস্য, কেউ আজীবন সদস্য। এভাবে বিভিন্ন পন্থায় সহযোগীতার হাত প্রসারিত করে এগিয়ে এসেছেন এই অঞ্চলের শিক্ষানুরাগী সমাজসেবকরা। এজন্য বিদ্যালয়ের সকল উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে আমি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।
উদ্যোক্তাদের আহবানে সাড়া দিয়ে আজীবন সদস্য পদ গ্রহণের মধ্য দিয়ে বিদ্যালয়টির উন্নয়নের ধারাবাহিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে এগিয়ে এসেছেন এই সচেতন শিক্ষানুরাগীরা। বিদ্যালয়ের উন্নয়ন ফান্ডে ৩ লক্ষ টাকা অনুদান প্রদানের মাধ্যমে তারা এই মহতি প্রয়াসে সম্পৃক্ত হচ্ছেন। ইতিমধ্যে আজীবন সদস্য পদ গ্রহণ করেছেন, মাথিউরা গ্রামের কৃতি সন্তান, সমাজসেবক, বিয়ানীবাজার ক্যান্সার এন্ড জেনারেল হাসপাতাল ফাউন্ডেশনের সিইও এন্ড এমডি মোহাম্মদ সাব উদ্দিন। কাকরদিয়া গ্রামের কৃতিসন্তান, মাওলানা ফইয়াজ আলী ফাউন্ডেশন পরিবারের সদস্য ও কান্ট্রি ডাইরেক্টর- বিয়ানীবাজার ক্যান্সার এন্ড জেনারেল হাসপাতাল ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ পুস্তক ও মুদ্রণ শিল্পের সাবেক সভাপতি এবং স্কাই সিটির পরিচালক মোঃ তোফায়েল খান। বাংলাদেশ সেন্টার লন্ডনের আজীবন সদস্য, কসবা-খাসা ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ইউকে’র ট্রাস্টি, গোলাবশাহ কিশোর সংঘের সাবেক অর্থ সম্পাদক, সমাজসেবী ও শিক্ষানুরাগী ছয়ফুল্লাহ হিল বাবলু, গোলাবশাহ কিশোর সংঘের সাবেক সহ-সভাপতি, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী, সমাজ সেবক ও শিক্ষানুরাগী ইকবাল হোসেন।
বিয়ানীবাজারের এই ৪জন কৃতি সন্তান আজীবন সদস্যপদ গ্রহণের মধ্যদিয়ে বিয়ানীবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় এগিয়ে আসায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদেরকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন। কর্তৃপক্ষ আশা প্রকাশ করেন, দেশে ও প্রবাসে বসবাসরত বিয়ানীবাজারের সচেতন শিক্ষানুরাগী সমাজসেবীরা আজীবন সদস্য পদ গ্রহণের মধ্য দিয়ে এই বিদ্যলয়ের অগ্রযাত্রায় সহযোগী হবেন। বিয়ানীবাজারের শিক্ষার উন্নয়নে তাদের এই সহযোগীতা স্মরণীয় হয়ে থাকবে যুগযুগ ধরে।