কিডনি রোগীদের জন্য যে ১০ খাবার নিষেধ
দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
কিডনি শরীরের অতি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটা রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ ও অতিরিক্ত পানি ফিল্টার করে। তাই সুসাস্থ্যের জন্য কিডনির সুস্থতা জরুরি। কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রাণ সংশয় হতে পারে।
তাই কিডনিতে কোনোরকম সমস্যা দেখা দিলে জীবনযাপন ও খাদ্যাভাসে পরিমিতিবোধ থাকা জরুরি। বিশেষ কিছু খাবার ক্ষতিগ্রস্ত কিডনির আরও ক্ষতি করতে পারে। তাই এসব খাবার এড়িয়ে চলুন। দেখা যাক, কোন দশটি খাবার কিডনি রোগিদের জন্য নিষেধ :
লবণযুক্ত খাবার
লবণে থাকা সোডিয়াম কিডনির কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। বেশি লবণ খেলে রক্তচাপ বেড়ে যায়। সেটা কিডনি রোগীদের জন্য মারাত্মক হতে পারে। লবণাক্ত খাবার যেমন প্যাকেটজাত চিপস, ফাস্ট ফুড, আচার ইত্যাদি এড়িয়ে চলা উচিত। যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত মায়ো ক্লিনিকের গবেষক অ্যালান কোরির মতে, ‘কিডনি রোগীদের জন্য সোডিয়াম, পটাসিয়াম এবং ফসফরাসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চমাত্রার সোডিয়াম রক্তচাপ বাড়ায় এবং কিডনির ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে।’
প্রোটিনসমৃদ্ধ লাল মাংস
লাল মাংস, যেমন গরু ও খাসির মাংস, হজম করতে কিডনির অতিরিক্ত কাজ করতে হয়। এতে কিডনির ওপর বাড়তি চাপ পড়ে এবং বর্জ্য পদার্থ জমে কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস মেডিসিন বিভাগের নেফ্রোলজিস্ট জেসিকা বেল বলেন, ‘কিডনি রোগীদের জন্য প্রোটিনের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি, কারণ অতিরিক্ত প্রোটিন কিডনির উপর চাপ ফেলে। চর্বিহীন প্রোটিনের উৎস, যেমন মাছ ও মুরগির মাংস, পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত।
প্রক্রিয়াজাত খাবার
কোমল পানীয়, ইনস্ট্যান্ট নুডলস, ক্যানের খাবার ইত্যাদিতে উচ্চমাত্রার ফসফরাস ও প্রিজারভেটিভ থাকে। এগুলো কিডনির জন্য ক্ষতিকর এবং ক্যালসিয়ামের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।
ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়
চা, কফি এবং এনার্জি ড্রিঙ্কে থাকা ক্যাফেইন কিডনিতে পাথর তৈরির ঝুঁকি বাড়ায় এবং পানিশূন্যতা সৃষ্টি করতে পারে। অতএব, এসব পানীয় সীমিত পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত।
পটাসিয়ামসমৃদ্ধ ফল
কিডনি রোগীদের জন্য পটাসিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। কলা, কমলা, আলু, এবং টমেটোতে প্রচুর পটাসিয়াম থাকে। এগুলো রক্তে পটাসিয়ামের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।
দুগ্ধজাত খাবার
দুধ, দই এবং পনিরে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস থাকে। এগুলো কিডনির বর্জ্য ফিল্টারিং ক্ষমতায় প্রভাব ফেলতে পারে এবং হাড় দুর্বল করে দিতে পারে।
চিনি ও মিষ্টি
কৃত্রিম চিনি, ক্যান্ডি, মিষ্টি পানীয় ইত্যাদি কিডনিতে প্রদাহ বাড়ায়। এছাড়া এটি ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে কিডনি রোগ আরও জটিল করে তুলতে পারে।
অ্যালকোহল
অ্যালকোহল কিডনির রক্ত ফিল্টার করার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এবং ডিহাইড্রেশনের কারণ হতে পারে। অ্যালকোহল কিডনির ক্ষতির ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
অতিরিক্ত তেল ও চর্বি
ভাজা খাবার, পিজ্জা, বার্গার ইত্যাদি অতিরিক্ত তেল ও স্যাচুরেটেড ফ্যাটসমৃদ্ধ। এগুলো রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায় এবং কিডনির কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
প্যাকেটজাত সস ও ড্রেসিং
কেচাপ, মায়োনেজ, এবং সয়া সসে উচ্চমাত্রার সোডিয়াম, চিনি, ও ফসফরাস থাকে। এগুলো কিডনির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং কিডনি রোগের জটিলতা বাড়ায়।
কিডনি রোগীদের খাদ্যতালিকা প্রস্তুত করার সময় ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। অ্যামেরিকান কিডনি ফান্ডের নেফ্রোলজিস্ট লরা পিটারসের মতে, ‘কিডনি রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা জরুরি। তবে অতিরিক্ত পানি কিডনির উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। তাই পানি গ্রহণের পরিমাণ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্ধারণ করা উচিত।’ সূত্র: ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ, যুক্তরাষ্ট্র