ফার্স্ট ক্লাস অধিনায়কত্ব, থার্ড ক্লাস ব্যাটিং
দৈনিকসিলেটডেস্ক
‘এমন খুরধার মস্তিষ্কের অধিনায়ক ব্যাটিংয়ে এমন খাপছাড়া কিভাবে হয়!’ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জুড়ে ফেসবুকে এটাই ছিল সমর্থকদের আক্ষেপ। বাস্তবতা তো তেমনই! অধিনায়ক হিসেবে লিটনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন সতীর্থ, কোচ থেকে শুরু করে সমর্থকরা। আর ব্যাটার হিসেবে তাকে নিয়ে ছিল আক্ষেপ আর হতাশা।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরটা পারলে ভুলে যেতে চাইবেন লিটন। আবার এই সফরটাই তার জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে! ব্যাটার লিটন এই সিরিজে দলের জন্য ন্যুনতম ভূমিকা রাখতে পারেননি। তবে নাজমুল হোসেন শান্তর জায়গায় অধিনায়কত্বের সুযোগ পেয়ে দেখিয়েছেন মুন্সিয়ানা। তার নেতৃত্বেই প্রথমবারের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করলো টাইগাররা।
প্রথম ম্যাচে ১৪৬, দ্বিতীয় ম্যাচে ১২৯ আর শেষ ম্যাচে ১৮৯ রান ডিফেন্ড করেছে বাংলাদেশ। যেখানে ম্যাচের ভিতর একাধিক সিদ্ধান্তের জন্য প্রশংসা হয়েছে লিটনের। প্রথম ম্যাচ শেষে এই সিরিজের সেরা খেলোয়াড় শেখ মেহেদি হাসান লিটনের অধিনায়কত্ব নিয়ে বলেন, ‘লিটনের ক্যাপ্টেন্সি আউটস্ট্যান্ডিং। অনেক সাহসিকতা দেখিয়েছে। যখন যেটা করা দরকার সেটা করার চেষ্টা করেছে। প্রথম ৬ ওভারে আমরা ভালো অবস্থানে চলে গেছি। আবার একটা পার্টনারশিপ একটা মোমেন্টাম বদলে দেয়। আমরাও ব্যাটিংয়ে এরকমই ছিলাম। দিনশেষে সফল হয়েছি ভালো লাগছে।’
কোচ ফিল সিমন্স তো লিটনের নেতৃত্বের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এই জয়ের অন্যতম ‘এক্স ফ্যাক্টর’ হিসেবে লিটনের সাহসী নেতৃত্বকে কৃতিত্ব দেন তিনি। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি শেষে সিমন্স বলেন, ‘এই দুটি ম্যাচেই লিটন মাঠে দারুণ সব সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে বেশ ভালোভাবেই নেতার দায়িত্ব পালন করছে। রান করছে না, এটা একটু চিন্তার বিষয়। তবে সবাই তো প্রতিদিন রান করবে না। খেলোয়াড়রা প্রস্তুত থাকে ভালো করার জন্য।’
আর্নস ভেলের উইকেটে লো স্কোরিং ডিফেন্ড করতে অধিনায়কত্ব সবসময় পার্থক্য গড়ে দেয়। পাওয়ার প্লেতে শেখ মেহেদীকে সিরিজ জুড়ে যেভাবে ব্যবহার করেছেন লিটন। কিংবা প্রত্যেক ম্যাচেই যেভাবে বোলার পরিবর্তন করেছেন, ফিল্ডিং সাজিয়েছেন তাতে অধিনায়ক লিটনের প্রশংসা করতেই হয়।
অথচ ব্যাটার লিটন যেন রান করতেই ভুলে গেছেন। ২০২২ সালে লিটনের স্ট্যাট দেখে হতাশা প্রকাশ করেন ভারতের সাবেক স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন। তিনি আশা করেছিলেন বিরাট কোহলি-কেন উইলিয়ামসনদের কাছাকাছি পৌঁছে যাবেন লিটন। এই আক্ষেপ অবশ্য সবারই! গতকাল ইনিংসের পঞ্চম ওভারে দৃষ্টিনন্দন এক স্ট্রেইট ড্রাইভে চার হাঁকান লিটন। তখন ধারাভাষ্যকার ইয়ান বিশপ বলে ওঠেন, ‘একদিকে পাওয়ার আরেকদিকে টাচ! কী সুন্দর পার্টনারশিপ!’ আরেকজন ধারাভাষ্যকারও উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করলেন। অথচ এরপর দুটো বল ডট যেতেই মনোযোগ হারালেন লিটন, অফ স্টাম্পের বাইরের বল পুল করতে গিয়ে তুলে দিলেন আকাশে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে প্রথম ম্যাচে শূন্য, দ্বিতীয় ম্যাচে ৩ আর গতকাল শেষ ম্যাচে ১৩ রান! এর আগে ওয়ানডে সিরিজে ৩ ম্যাচ মিলে করেন ৬ রান। টেস্ট সিরিজেও ব্যাট হাতে ছিলেন বিবর্ণ। গত আগস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে সেঞ্চুরির পর তিন সংস্করণেই রান খরায় ভুগছেন লিটন। অধিনায়কত্ব যত ভালোই করেন, ব্যাটে রান থাকলে লিটনের জন্য সামনে এগোনো ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠবে। এমনকি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলেও জায়গা হারাতে পারেন এই ব্যাটার। সেক্ষেত্রে সামনের বিপিএল হতে পারে লিটনের জন্য ‘অ্যাসিড টেস্ট।’