সাংবাদিক তুরাব হত্যার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে : সিলেটে আইজিপি
দৈনিকসিলেটডেস্ক
সিলেটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত সাংবাদিক তুরাবকে হয়তো আমরা ফিরিয়ে দিতে পারবো না, কিন্তু সুবিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম। সাংবাদিক তুরাব নিহতের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে ও ক্ষমা চেয়ে তিনি বলেন- এ মামলায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে পুলিশ। বর্তমান এসএমপি কমিশনারের প্রতি সেই নির্দেশনা দেওয়া আছে।
তিনি শনিবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি)-এর সদর দপ্তরে বিভাগের সকল ইউনিট কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইজিপি এ কথা বলেন। মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেছেন এসএমপি কমিশনার মো. রেজাউল করিম (পিপিএম-সেবা)।
আইজিপি বলেন, এখনো সারাদেশে আমরা প্রায় দেড় হাজার অস্ত্র উদ্ধার করতে পারিনি। এখন মাটি খুড়ে অস্ত্র বের করা আমার জন্য কঠিন। তবে আমি যদি সমাজের লোকের বিশ্বাস ও আস্থা অর্জন করতে পারি তাহলে সাধারণ মানুষ বলে দেবে ওই জায়গায় অস্ত্র পড়ে আছে। এটাই সবচেয়ে সহজ আমাদের জন্য। সাধারণ মানুষ সবকিছু দেখে। কিন্তু তারা যে থানায় এসে বলবে ওইখানে অস্ত্র দেখেছে সেই আত্মবিশ্বাস এখনো তৈরি করতে পারিনি। আমি চাই আমিসহ আমার যারা সহকর্মী আছেন তারা মানুষের কাছে যেয়ে আস্থা অর্জন করবেন। ট্র্যাডিশনাল যে পন্থা সেটায় আমরা অস্ত্র উদ্ধার করব। কিন্তু এই অস্ত্র উদ্ধার ফলপ্রসূ হবে সাধারণ মানুষের আস্তা অর্জন করলে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন- পুলিশের কর্মস্পৃহা ফিরিয়ে আনাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। তাদের উপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেছে। পট পরিবর্তনের সময় কোনো পুলিশ অফিসার মারা যাননি। যারা মারা গেছেন তারা সবাই ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার নিচে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ মানতে গিয়ে তারা জনরোষে পড়েছেন। সুতরাং মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের চাঙা করাই আমাদের মূল কাজ।পুলিশের মহাপরিদর্শক আরও বলেন, বিগত সময়ে পুলিশ দলীয় স্বার্থ উদ্ধারে বড় ধরনের অপরাধ করেছে, এ জন্য আমরা লজ্জিত। পুলিশকে রাজনৈতিক কুপ্রভাবমুক্ত করতে হবে। তাই পুলিশকে রিফর্ম করার কাজ চলছে।
আইজিপি বলেন, পরিবর্তিত পরিবেশে মামলার ক্ষেত্রে অসাধু ব্যক্তিরা সুবিধা নিয়েছে। অনেকে বাণিজ্য করছেন। এদের মধ্যে আবার কেউ সমাজের বড় নেতাও। তবে আমারা কথা দিচ্ছি- নিরীহ যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের গ্রেফতার করা হবে না। বরং নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে- তাদের খোঁজে বের করে তদন্তকারী কর্মকর্তা যেন অভয় দেন, আশ্বস্ত করেন।
৫ আগস্টের পর বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, হুমকি ও চাঁদাবাজির বিষয়ে আইজিপি বলেন, ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদা চাইলে কেউ দিবেন না, ভয়ও পাবেন না। আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আছি। আদালত প্রাঙ্গনে আসামিদের মারধরের বিষয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন- এই বিষয়ে আমাদের সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। বিজ্ঞ আদালত অপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা করবেন।
পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা কমিশনে সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয় সুপারিশ করেছি। বিশেষ করে বেশিরভাগ পুলিশ সদস্যকে ওভারটাইম কাজ করতে হচ্ছে। এটার জন্য তারা কোনো ভাতা পান না। এই বিষয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। পাশাপাশি তাদের কর্মস্পৃহা ফিরিয়ে আনতে আমরা তাদের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আজকে আমরা সকলকে সঙ্গে নিয়ে তাদের কথা শুনবো। এ জন্যই মূলত আমার সিলেট সফর। মতবিনিময় সভায় র্যাব’র অতিরিক্ত আইজিপি এ কে এম শহিদুর রহমান ও সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মো. মুশফেকুর রহমানসহ পুলিশের সকল দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।