গাজা নিয়ে সমালোচনার: ইসরাইলে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার মুখে দুই ব্রিটিশ এমপি

দৈনিকসিলেটডেস্ক
ইসরাইলের নিরাপত্তা বাহিনীর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও ‘ইসরাইলবিরোধী ঘৃণার বার্তা’ ছড়ানোর অভিযোগে দেশটিতে প্রবেশ করতে চাওয়ায় দুই ব্রিটিশ এমপিকে প্রবেশাধিকার না দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
শনিবার (৫ এপ্রিল) ইসরাইলের অভিবাসন ও জনসংখ্যা কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করে। মূলত গাজা নিয়ে সমালোচনার জেরে ইসরাইলকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি এই দুই ব্রিটিশ এমপিকে। এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে জেরুসালেম পোস্ট।
লুটন থেকে বিমানে করে বেংগুরিয়ন বিমানবন্দরে দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে অবতরণ করেন দুই এমপি, ইউয়ান ইয়াং ও আবতিসাম মোহাম্মদ, সঙ্গে ছিলেন তাদের দুই সহকারী।
বিমানবন্দরে নিরাপত্তা জিজ্ঞাসাবাদে তারা দাবি করেন, তারা ব্রিটিশ পার্লামেন্টের একটি অফিসিয়াল প্রতিনিধি দলের অংশ হিসেবে ইসরাইল সফরে এসেছেন। তবে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ জানায়, এ ধরনের কোনো প্রতিনিধি দলের সফরের অনুমোদন তাদের কাছে ছিল না।
ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের দাবি, তাদের সফরের উদ্দেশ্য ছিল ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ এবং ‘ইসরাইলবিরোধী ঘৃণার’ প্রচার। এরপরই দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোশে আর্বেল চারজনেরই প্রবেশ বাতিল করে তাদের ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেন।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া
এ ঘটনায় শনিবার রাতে প্রতিক্রিয়া জানান ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি। তিনি বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য, উল্টো ফলদায়ক এবং গভীরভাবে উদ্বেগজনক। দুজন ব্রিটিশ এমপি যখন পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদলের অংশ হিসেবে ইসরাইল সফরে যান, তখন তাদের আটকানো এবং প্রবেশে বাধা দেওয়া কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের অসন্তোষ স্পষ্টভাবে জানিয়েছি এবং দুজন এমপির সঙ্গেই যোগাযোগ রাখছি।’
কারা এই দুই এমপি?
আবতিসাম মোহাম্মদ
ইয়েমেন জন্মগ্রহণকারী আবতিসাম মোহাম্মদ হচ্ছেন ব্রিটেনের প্রথম আরব ও প্রথম ইয়েমেনি বংশোদ্ভূত এমপি। তিনি লেবার পার্টির টিকিটে শেফিল্ড সেন্ট্রাল আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে নির্বাচিত হয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি শান্তি, সহাবস্থান, তাত্ক্ষণিক যুদ্ধবিরতি এবং উভয় পক্ষের জিম্মিদের মুক্তির জন্য আমার কণ্ঠস্বর ব্যবহার করব।’
তবে সম্প্রতি, ২০২৫ সালের ২ এপ্রিল কমন্স চেম্বারে আবতিসাম মোহাম্মদ ইসরাইলের বিরুদ্ধে ‘গাজা ধ্বংস ও জাতিগত নিধন’ অভিযানের অভিযোগ তোলেন।
তিনি বলেন, ‘ঈদের প্রথম দিন ৩০ মার্চ ইসরাইলি হামলায় ডজনখানেক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। তারা যুদ্ধবিরতির শর্ত ভেঙেছে। এখন তারা রাফা থেকে কয়েক লাখ মানুষকে জোরপূর্বক উচ্ছেদের পথে। আমরা কি জাতিগত নিধনের সাক্ষী হচ্ছি না? গাজা ধ্বংসের পরিকল্পনার অংশ নয় কি এটি? এটি কি দুই-রাষ্ট্র সমাধানের ইচ্ছাপত্র চূর্ণ করা নয়?’
ইউয়ান ইয়াং
চীনে জন্ম নেওয়া ইউয়ান ইয়াং হলেন ব্রিটেনের ইতিহাসে প্রথম চীনা বংশোদ্ভূত এমপি। তিনি লেবার পার্টির হয়ে আর্লি ও উডলি আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন।
৩১ মার্চ তিনি তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে লেখেন, ‘ঈদ মোবারক! আগামী সপ্তাহে আমি একটি পার্লামেন্টারি প্রতিনিধিদলের অংশ হিসেবে পশ্চিম তীর সফর করব। এ বছর অনেকেই ঈদের সময় সেই মানুষগুলোর কথা মনে করছেন যারা আনন্দ করতে পারছে না।’
এর আগেও তিনি সংসদে বক্তব্যে ইসরাইলের চরমপন্থী মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির ও বেজালেল স্মোত্রিচের ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘ইসরাইল গাজার ওপর আবারও বোমাবর্ষণ শুরু করেছে। নতুন বছরে এসেও গাজার দুঃস্বপ্ন থেমে নেই।’
এর আগে, ২৪ ফেব্রুয়ারি ফরাসি-ফিলিস্তিনি রাজনীতিক রিমা হাসানকেও ইসরাইলে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের অনুমোদিত প্রতিনিধি দলের অংশ হিসেবে তিনি পশ্চিম তীরে সফরের কথা বললেও, তার ‘ইসরাইলবিরোধী কার্যকলাপ’ ও ‘বয়কট সমর্থনের’ অভিযোগে তাকে প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
ইসরাইলের ডায়াসপোরা মন্ত্রী আমিখাই চিকলি মন্তব্য করেন, ‘যারা ইসরাইলকে অস্বীকার করে, তাদের প্রতিনিধি হিসেবে ইসরাইলে প্রবেশাধিকার দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আমাদের নেই।’
এই ঘটনার মাধ্যমে ইসরাইল আবারও জানিয়ে দিল, তারা বিদেশি সমালোচকদের জন্য কঠোর অবস্থানে থাকবে, তা সে বিদেশি আইনপ্রণেতাই হোক বা কূটনৈতিক প্রতিনিধি।