ইজারাবিহীন মাহারাম নদী থেকে কোটি টাকা লুটে নিচ্ছে বালু খেকুরা
ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া পাহাড় থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নেমে আসা যাদুকাটা নদীর প্রশাখা মাহারাম নদী। ইজারা বিহীন এই নদী থেকে গত এক মাস ধরে চিহ্নিত বালুখেকো চক্রের সদস্যরা স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় দিনে ও রাতে কোটি কোটি টাকার বালু লুট করছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এ নদীতে বালুখেকো চক্র যেন বালু লুটের মহোৎসবে পরিনত করেছে। এতে করে হুমকির মুখে পড়েছে নদীর তীরবর্তী বসত বাড়ি,ফসলী জমি। কিন্তু বালুখেকো চক্রটি প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলতে সাহস পাচ্ছে না।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের শান্তিপুর গ্রাম সংলগ্ন মাহারাম নদীটির অবস্থান। লুট করা বালু দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়ন কামারকান্দী,জামলাবাজ, গাজিপুর সহ আশপাশের উচু যায়গা ও বাড়ির পাশে জমা করে পরে রাতের আধাঁরে বল্কহেড নৌকা দিয়ে পাচার করছে।
বালুখেকোদের বিরোদ্ধে প্রশাসনিক ভাবে কঠোর কোনো আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে যে কোনো সময় বালুখেকো চক্রের সাথে এলাকাবাসীর বড় ধরনের সংর্ঘষের আশংকা রয়েছে। এনিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ ও স্থানীয় সচেতন মহলে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,প্রশাসন কে বৃদ্ধাংগুলী দেখিয়ে মাহারাম নদী থেকে স্থানীয় প্রভাশালী বালুখেকো চক্রটি দিনে ও রাতে নদীর উৎস মুখসহ নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে কয়েকটি গ্রুপে দলবদ্ধ হয়ে ড্রেজার মেশিন দিয়ে শতাধিক নৌকায় বালু উত্তোলন করছে। পরে বালু ভর্তি নৌকা উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের বালিয়াঘাট বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন পাটলাই নদীতে অপেক্ষেয় মান বড় বড় বাল্কহেড ও স্টিলবডি নৌকায় বালু ভরাট করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এছাড়াও দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়নের কামারকান্দী,জামলাবসজ,গাজীপুর সহ বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট নৌকায় করে বালু এনে জমা করছে। পরে রাতের অন্ধকারে তা বল্কহেড নৌকায় করে পাচার করচে। বালু উত্তোলন করা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা বাঁধা দিলে তাদের উপর হামলা চালায় বালুখেকো চক্রটি।
এছাড়াও এই বালু তোলা নিয়ে এখানে প্রায় সময়ই রক্তক্ষয়ী সংর্ঘষের ঘটনাও ঘটছে। অন্যদিকে বালু তোলে নেয়ায় এক দিকে বসত বাড়ি,ফলসী জমি ও প্রকৃতি পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে। কিন্তু প্রশাসন মাঝে মধ্যে অভিযান পরিচালনা করলেও কঠোরভাবে কোনো আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনী নীরব ভুমিকা পালন করায় আরও বেশী পরিমানে লুটপাট চলছে রাতের আঁদারে।
স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, মাহারাম নদীতে ১৯৮৮ সালের পূর্বে পানি আসলে উপজেলার মাটিয়ান, সমসাসহ ছোট-বড় ২৩টি হাওর পানিতে তলিয়ে যেত। তখন অকাল বন্যার হাত থেকে ফসল রক্ষার জন্য স্থানীয়দের সহযোগিতা ও উপজেলা পরিষদ থেকে মাহারাম নদীতে বেড়িবাঁধ দেয়া হত। একপর্যায়ে ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় পাহাড় থেকে নেমে আসা বালু ও নুড়িপাথরের স্তূপে মাহারাম নদীটি প্রাকৃতিক ভাবে ভরাট হয়ে যায়। প্রাকৃতিক ভাবে বালুর বাঁধ সৃষ্টি হওয়ায় বিগত ৩৬ বছর ধরে মাহারাম নদীতে সরকারি খরচে আর বেড়ি বাঁধ দিতে হয় না। গত কয়েক বছর ধরে এক শ্রেণির বালুখেকো চক্র মাহারাম নদীতে বালু উত্তোলন করায় প্রাকৃতিক বাঁধটি ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
মাহারাম গ্রামের বাসিন্দা কবির মিয়া সহ অনেকেই জানান,ফসলী জমিসহ নদী থেকে প্রতি রাতেই শতাধিক নৌকা দিয়ে বালু নিচ্ছে এই চক্র। গ্রামবাসী তাদের নিষেধ করলেও বালু উত্তোলন বন্ধ করছে না। উল্টো আরও মামলা ও হামলার হুমকি দিচ্ছে প্রভাবশালী মহল।
বড়দল গ্রামের কৃষক সাকিল মিয়া বলেন, এভাবে বালু উত্তোলন করতে থাকলে মাটিয়ান হাওরসহ উপজেলার সকল হাওরের ফসল অকাল বন্যায় তলিয়ে যাবে। মাহারাম নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে সবাই কে নিয়ে হাওর,বসত বাড়ি রক্ষায় কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সালমা পারভিন জানান,এই বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।