সরকারী বরাদ্দের লবন নিয়ে ইউএনও’র লঙ্কাকান্ড
কোরবানীর পশুর চামড়া সংরক্ষণকারী মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানায় সরকারী ভাবে বিনা মূল্যে ১৫০ বস্তা সরকারি লবণ বিতরণের জন্য দিলেও নীতিমালা লঙ্ঘন করেছেন সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হাসেম। তিনি অতি গোপনে এই লবন নিজের পছন্দের সাত ব্যক্তিকে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
অথছ এই লবন না পাওয়ায় চামড়া সংরক্ষণকারী মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানা গুলো ক্ষতির মুখে পড়া ক্ষোভ বিরাজ করছে। এছাড়া উপজেলায় জুড়েই এনিয়ে আলোচনা সমালোচনার চলছে।
বিভিন্ন সূত্রে ও নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলার অনেকেই জানিয়েছেন, উপজেলা সদরের আব্দুল বারিক, মিলন মিয়া, মস্তুু মিয়া, সেজুল,আবুল ফজলসহ ৫ জনকে ১০০ বস্তা ও বাদাঘাট ইউনিয়নের কামড়াবন্দ গ্রামে আপন দুই ভাই রতন আহমেদ ও স্বপন আহমেদ কে ৫০ বস্তা বিনামূল্যের লবণ দিয়েছেন ইউএনও। কিন্তু তারা কোন দিনেই এই চামড়া সংরক্ষণ করার কাজে জড়িত নয়।
এ বিষয়ে লবন নেয়া কামড়াবন্দ গ্রামের স্বপ্ন আহমেদ জানান, এই লবন নিতে গিয়ে খরচ করতে হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। অথচ এই লবন বিনামূল্যে সরবরাহের নির্দেশনা ছিল।
এবিষয়ে জানতে বিনামূল্যের লবণ পাওয়া তাহিরপুরের মিলন মিয়ার নিজের মুঠোফোন নাম্বারে বেশ কয়েকবার ফোন দিলেও ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে তাহিরপুর উপজেলার শাখার কওমি মাদ্রাসা ঐক্য পরিষদের সভাপতি ও পৈলনপুর টাইটেল মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা মঈন উদ্দীন জানিয়েছেন, উপজেলার বৃহৎ প্রতিষ্ঠান হলো আমার প্রতিষ্ঠান, প্রতিবছর আমরা চামড়া সংরক্ষণ করে থাকি, এটা সবাই জানে। চামড়া সংরক্ষণের জন্য বিনামূল্যের লবণ কে কে পাবে তা ঈদের পূর্বেই তালিকা তৈরি করে তাদের জানানোর কথা। আর লবণ পাবো দূরের কথা, সরকারিভাবে লবণ বরাদ্দ আসছে তাই ত জানিনা। আশায় ছিলাম বিনা মূল্যে লবন পাবো, কিন্তু পাইনি। এবছর আমরা ২৩২টি চামড়া সংগ্রহ করি। কিন্তু লবণ না পাওয়ার কারণে এগুলো সংরক্ষণ করতে পারিনি। বিকালেই পচে যাওয়ার উপক্রম হইছে। পরে চামড়া ব্যবসায়ী কয়েকজনকে অনুরোধ করে অন্য বছরের তুলনায় অর্ধেক দামে দেয়া হইছে। এর পরেও বাকীতে। আমার জানা মতে উপজেলার চামড়া সংরক্ষণকারী কোন প্রতিষ্ঠানেই সরকারের দেয়া বিনামূল্যের লবণ পায়নি। তবে এসব লবণ কোথায় দেয়া হইছে কাকে দেয়া হইছে জানিনা।
উপজেলার রমজান আলী নূরানী মাদ্রাসা সভাপতি আবুল কাশেম জানান, উপজেলার চামড়া সংরক্ষণকারী মসজিদ মাদ্রাসা ও এতিমখানাকে সরকার বিনামূল্যে লবণ দিবে এককথা জানার পর আমরা এবার বেশি চামড়া সংগ্রহ করি। কিন্তু লবণ না পাওয়ার কারণে চামড়া সংরক্ষণ করতে না পারায় পানির দামে বিক্রি করতে হইছে লবন পেলে এতটা ক্ষতি হত না। তিনি আরও জানান,এদিকে অনেকেই মসজিদ, মাদ্রাসা,এতিমখানায় সরকারের দেয়া বিনামূল্যে লবন না পেয়ে বাজার থেকে লবন কিনেছেন। এ কারনে এবার মসজিদ মাদ্রাসা ও এতিমখানার লোকজন এবার চামড়া সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাত করেনি।
এই বিষয়ে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হাসেম জানান, উনার সরকারি মুঠোফোনে নাম্বারে বেশ কয়েকবার কল দিলেও রিসিভ করেনি। পরে ওনার নাম্বারে এ বিষয়ে জানতে এসএমএস পাঠালে হলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে কল দেওয়ার জন্য রিপ্লে এসএমএস পাঠানা।
এবিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: হাবিব আহমদ বলেন, আমি লবন বন্ঠনের বিষয়টি শুনেছি,তবে আমাকে তালিকা দেওয়া হয়নি, কোথায় কাকে দেওয়া হয়েছে তাও জানিনা। ইউএনও মহোদয় আমাকে লবন বন্টনের বিষয় জানিয়ে ছিলেন কিন্তু আমি অন্য প্রোগ্রামে থাকায় যেতে পারিনি। এসব বিষয় ইউএনও অফিস তদারকি করেছে।