শ্রীমঙ্গলে ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়
প্রচণ্ড রোদ ও গরম উপেক্ষা করে ঈদুল আযহার দীর্ঘ ছুটিতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকরা ছুটে এসেছেন প্রকৃতির অপরূপ লীলাভূমি মৌলভীবাজারে শ্রীমঙ্গলে। জেলার চা-বাগান, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, বধ্যভূমি একাত্তর, বিটিআরআই, সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানাসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। সবুজে ঘেরা এই স্থানগুলোতে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের চোখে-মুখে ছিল ঈদের আনন্দের ঝলক।
জানা যায়, প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ হাজার পর্যটক শ্রীমঙ্গলে আগমন ঘটছে। এছাড়াও ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ঘুরতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উপজেলা প্রশাসন ও পর্যটন পুলিশ বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক মো. হুমায়ূন কবীর বলেন, আমি রাজধানীর উত্তরায় থাকি, যেখানে সারাক্ষণ যানজট আর কোলাহল লেগে থাকে। শ্রীমঙ্গলের নির্মল বাতাস ও শান্ত পরিবেশে এসে মনে হচ্ছে যেন সব ক্লান্তি নিমেষেই দূর হয়ে গেছে। বিশেষ করে এই মনোরম প্রকৃতি আমাকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করেছে। ঢাকায় ফিরে যাওয়ার আগে এই সুন্দর মুহূর্তগুলো স্মৃতিতে ধরে রাখতে চাই।
রাজশাহী থেকে স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে বেড়াতে আসা রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ঈদের আনন্দকে উপভোগ করতে আমরা শ্রীমঙ্গলে এসেছি। একটি রিসোর্টে উঠেছি। এখানকার উঁচু-নিচু পাহাড়, চা-বাগান, পান বাগান, খাসিয়া পুঞ্জি এবং বিটিআরআই ঘুরে দেখেছি। এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমাদের মুগ্ধ করেছে। প্রকৃতির মাঝে পরিবারের সঙ্গে কাটানো সময় সত্যিই অন্যরকম।
সিলেটের বিয়ানীবাজার থেকে আগত ফেরদৌসি রহমান নামের প্রবাসী জানান, পরিবার নিয়ে এসেছেন শ্রীমঙ্গল ঘুরতে। তার ভালো লেগেছে।
এদিকে, পর্যটকরা ভিড় জমিয়েছেন সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা (বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন)। ঈদের সকালে ও বিকেলে এখানে ছিল দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। অনেকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে এসে বনের ভেতর ট্রেন লাইনে হাত ধরে হেঁটেছেন, বন্যপ্রাণী দেখার চেষ্টা করেছেন।
গ্র্যান্ড সেলিম রিসোর্ট এর স্বত্বাধিকারী মো. সেলিম আহমেদ জানান, ঈদে বা সরকারী লম্বা ছুটিতে শ্রীমঙ্গলে মোটামুটি পর্যটকদের আগমন ঘটে। এবার প্রচুর পর্যটক এসেছেন। পাঁচ তারকা হোটেল গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট এন্ড গলফসহ শ্রীমঙ্গলে প্রায় শতাধিক হোটেল ও রিসোর্টে প্রায় ৫ হাজার পর্যটকের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে এবং এই সমস্ত হোটেল, মোটেল ও রিসোর্টে আগামী শনিবার (১৪ জুন) পর্যন্ত শতভাগ বুকিং রয়েছে। তিনি আরও জানান, কোন সমস্যা না হলেও বাইকারদের কারণে শ্রীমঙ্গল শহরসহ বিভিন্ন এলাকায় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।
পাঁচ তারকা হোটেল গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট এন্ড গলফ্ এর জেনারেল ম্যানেজার মো. আরমান খান জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১শ ৩৫টি কক্ষ রয়েছে, এতে ৩শ ৫ থেকে ৪শতাধীক পর্যটক অবস্থান করতে পারবে এবং আগামী শনিবার (১৪ জুন) পর্যন্ত শতভাগ বুকিং রয়েছে বলে জানান। তবে তাদের এখানে বিদেশি কোনো পর্যটক নেই বলে জানান।
স্থানীয়রা জানান, প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গল যেন এক স্বর্গরাজ্য। ঈদের ছুটিতে এসব পর্যটনস্থানে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে, যা স্থানীয় পর্যটন শিল্পকে আরও সমৃদ্ধ করবে এবং স্থানীয় ভাবে কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিশেষ অবদান রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত টুরিস্ট পুলিশের ওসি মো. কামরুল হাসান চৌধুরী জানান, ঈদুল আযহার দীর্ঘ ছুটিতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকরা ছুটে এ পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উপজেলা প্রশাসন ও পর্যটন পুলিশ বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। প্রতিটি পর্যটন এলাকায় নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তিনি জানান, শ্রীমঙ্গলসহ আশপাশ এলাকায় দেশে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন ১০ থকে ১৫ হাজার পর্যটক আসছেন। এছাড়া, হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টগুলোতেও ছিল বুকিংয়ের চাপ। আগত পর্যটকদের সেবা দিতে স্থানীয় পর্যটন খাতের কর্মীরাও ব্যস্ত সময় পার করেছেন।