দানবীর ড. সৈয়দ রাগীব আলী
জুলাই গণঅভ্যুত্থান দেশপ্রেম ও সাহসিকতার প্রতিক
জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে সিলেটের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় লিডিং ইউনিভার্সিটিতে শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (০৫ আগস্ট ২০২৫) সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান দানবীর ড. সৈয়দ রাগীব আলীর নেতৃত্বে শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রা পরবর্তী দুপুর ১২টায় লিডিং ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ তাজ উদ্দিনের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যালারী-১ এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জুলাই-আগস্ট হাজারো শহীদদের রক্তস্নাত এক নতুন ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধ দেশ গড়ার মাস উল্লেখ করে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে দানবীর ড. সৈয়দ রাগীব আলী বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান দেশপ্রেম ও সাহসিকতার প্রতিক। বাংলাদেশের মানুষ আজ স্মরণ করছে জুলাই আন্দোলনে ছাত্র জনতার আত্মত্যাগ যা আমাদের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের পথ খুলে দিয়েছে। তারা একটি নতুন বাংলাদেশ তৈরির রাস্তা তৈরি করেছে, যাতে আশা, মানবাধিকার এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরো বলেন, গত ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশের নাগরিকদের মানবাধিকার বারবার অস্বীকার করা হয়েছে। স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছিল। সহিংসতা শাসনের প্রধান হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল। গত বছরের জুলাই মাসে আমাদের ছাত্র সমাজ ও জনতা এই বাস্তবতা প্রত্যাখ্যান করে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। বাংলাদেশের জনগণ অপরিসীম সাহসিকতার সাথে তাদের অধিকার পুনরুদ্ধার করেছে। পরিশেষে তিনি জুলাই শহীদদের রুহের মাগফিরাত এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন। সেইসাথে ছাত্র জনতার আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত আগামী বাংলাদেশের উত্তরোত্তর উন্নতি কামনা করেন।
সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ তাজ উদ্দিন বলেন, জুলাই আন্দোলনের শহীদরা শোষণের বিরুদ্ধে অকুতোভয় বীরের মতো লড়াই করে স্বাধীনতা ও ন্যায়ের প্রতি এক বৈপ্লবিক চেতনার জন্ম দিয়েছে। আমরা পেয়েছি বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ। তাই জুলাই এর চেতনায় দেশ গঠন করতে হবে, সেইসাথে দানবীর ড. সৈয়দ রাগীব আলীর দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তুলার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে ঐক্যবদ্ধভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ে কাজ করার আহবানও জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রূপকার ছিলেন প্রতিটা মানুষ। নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও জুলাই আন্দোলনে নেমেছিলেন ছাত্র-জনতা। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ একত্র হয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার মূলোৎপাটনে। তাদের এ আন্দোলন সর্বস্তরের ছাত্র, জনতা, আপামর যুব সমাজ তথা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মকে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামে অনুপ্রাণিত করবে। বৈষম্যের বিরুদ্ধে তাদের এ আত্মত্যাগ চিরকাল দেশপ্রেম ও অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সাহসিকতার প্রতিক হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, দেশকে সামনে এগিয়ে নিতে সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে, তাহলেই জুলাই যোদ্ধাদের আত্মত্যাগ সফল হবে। তিনি শহীদ জূলাই যোদ্ধাদের রুহের মাগফিরাত এবং আহত যোদ্ধাদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।
আলোচনায় গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করে নতুন ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে হবে উল্লেখ করে মূখ্য আলোচক হিসেবে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিকেল স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর এবং বিশিষ্ট রাজনৈতিক গবেষক ড. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ২০২৪ এর আন্দোলনে ছাত্র জনতার পাশাপাশি উপমহাদেশের প্রখ্যাত দানবীর “তোমরা এগিয়ে যাও আমি তোমাদের পাশে আছি” বলে যেভাবে শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন তা খুবই প্রশংসনীয় এবং এতে তিনি যে সমাজের পাশাপাশি রাষ্ট্রের কথাও ভাবেন সেটা আবারো প্রমাণিত হলো। তিনি আরো বলেন, যখন একটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয় তখন রাষ্ট্র ধ্বংস হয়। তেমনিভাবে ন্যায় বিচার ধ্বংস হলে ফ্যাসিস্ট সৃষ্টি হয়। জুলাই আন্দোলনে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ করে সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব অন্যতম এবং এটাই প্রমাণ করে যে পাবলিক এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় বলে কোন ভেদাভেদ নেই। এ আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সাথে সকল শ্রেণির মানুষ অংশগ্রহণ করেছেন এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া প্রত্যেকটা মানুষ নিজ সিদ্ধান্তে এসেছেন, তারা দেখিয়ে দিয়েছেন নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন করলে জাতির ভাগ্য পরিবর্তন হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন, লিডিং ইউনিভার্সিটির প্রক্টর ও অনুষ্ঠান আয়োজক কমিটির আহবায়ক মো মাহবুবুর রহমান।
লিডিং ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভা
গীয় প্রধান কাজী মো. জাহিদ হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য প্রদান করেন, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. বশির আহমেদ ভূঁইয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মফিজুল ইসলাম, ট্রাস্টি বোর্ডের সচিব ইঞ্জিনিয়ার মো. লুৎফর রহমান, জুলাই যোদ্ধা লিডিং ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মাহবুবুর রহমান শান্ত ও মো. আসিফুর রহমান দিপু এবং ইলেকট্রিকেল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সৈয়দা সালসাবিল আরিয়া।
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ড. ফজলে এলাহী মামুনের কুরআন তিলাওয়াত পরবর্তী জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে লিডিং ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ও শিক্ষার্থী অংশগ্রহণসহ জুলাই আন্দোলনের উপর একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে আধুনিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ কামরুজ জামান ভূইয়া, কলা ও আধুনিক ভাষা অনুষদের ডিন ড. মো. রেজাউল করিম, ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা প্রফের ডা. মো. আব্দুল মজিদ মিয়া, বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক -শিক্ষাথী এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ অংশগ্রহণ উপস্থিত ছিলেন।