শাবিপ্রবি প্রশাসনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের অনিয়মের অভিযোগ
তহবিল বরাদ্দে অসঙ্গতি, আহতদের জন্য বরাদ্দকৃত সুযোগের অপব্যবহার, প্রশাসনিক মদতে গুপ্ত রাজনৈতিক মডেল চালু থাকা, নারী শিক্ষার্থীদের হয়রানি নিরসনে উদাসীনতা, সমালোচনার জেরে শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ প্রয়োগ ও অতীত আন্দোলনে জড়িত শিক্ষক-কর্মকর্তাদের দায়মুক্তির অভিযোগ এনে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার দুপুর আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউসি ভবনের ২০২ কক্ষে অধিকার সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দ ব্যানারে এ সম্মেলন করেন একদল শিক্ষার্থী।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি রাহাত জামান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ তহবিল থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বরাদ্দ দিচ্ছে, যেখানে এককভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদেরকে সুবিধাভোগী এবং কর্তৃত্ব স্থাপনের সুযোগ দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গণঅভ্যুত্থানের গণচরিত্রকে হরণ করে বিশ্ববিদ্যালয় অর্থ দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তাদের দলীয় ব্যানারে ফুটবল টুর্নামেন্ট, রচনা প্রতিযোগিতা আয়োজন করেছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তরফ থেকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত শিক্ষার্থীদেরকে ক্রেডিট ফি এবং সেমিস্টার ফি মওকুফের কথা ছিল। কিন্তু সেখানে প্রকৃতঅর্থে আহত শিক্ষার্থীদের বদলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদেরকেই সুযোগ দেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক মদতে গুপ্ত রাজনৈতিক মডেল বিরাজমান যা গণতান্ত্রিক চর্চার জন্য ক্ষতিকর এবং শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতারণার শামিল। দলীয় ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয় অভ্যন্তরে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। অথচ বেনামে, ব্যানারবিহীন বিশ্ববিদ্যালয়য়ের অভ্যন্তরে বা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে একটি রাজনৈতিক গুপ্ত দল।”
“একইসাথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ব্যানারে ক্রমাগত রাজনৈতিক তৎপরতা ও পরিলক্ষিত হয়েছে। এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীদের ইতিবাচক রাজনৈতিক চর্চায় প্রশাসনিক বাধানিষেধ গুপ্ত মডেলের রাজনীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছে।”
ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সুলতানা আক্তার লুবনা লিখিত বক্তব্যে বলেন, “সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে ন্যাক্কারজনক ধর্ষণকাণ্ডে কিছু শিক্ষার্থী প্রতিবাদে সরব হয়। অথচ কিছু শিক্ষার্থী দ্বারা তারা ভয়ানক সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়। এই সংক্রান্ত প্রক্টর অফিসে অভিযোগ দায়ের করলেও অদৃশ্য ক্ষমতাবলে অভিযুক্তদেরকে ছাঁড় দেওয়া হচ্ছে।”
শিক্ষার্থীদের সাথে প্রশাসনের স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে তিনি বলেন, “বিগত কিছুদিন ধরে দেখা যাচ্ছে কোনো শিক্ষার্থী কর্তৃক প্রশাসনের যেকোনো সিদ্ধান্তের সমালোচনা করলে প্রশাসন সেসব ব্যক্তিকে ব্যক্তিগত আক্রমণ থেকে শুরু করে ফেস মার্কিং-এর থ্রেট, শোকজ ইত্যাদি প্রদান করেন যা শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চায় প্রশাসনের স্বেচ্ছাচারিতার মুখোশ উন্মোচন করে।”
প্রশাসনের বিরুদ্ধে জুলাই গণহত্যায় জড়িত ও সমর্থক শিক্ষক কর্মকর্তাদের দায়মুক্তি অভিযোগ এনে তিনি বলেন, “গণঅভ্যুত্থান এবং পূর্ববর্তী শিক্ষার্থী আন্দোলন বিশেষত ২০২২ এর ভিসি বিরোধী আন্দোলনে সরাসরি জড়িত এবং মদতদাতা শিক্ষক এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাদেরকে বহাল তবিয়তে রাখা হয়েছে। এমনকি তারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেতনভাতা সহ সকল সুবিধা ভোগ করছে যা গণঅভ্যুত্থানের চেতনার পরিপন্থী।”
সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা এসব অনিয়ম ও অসঙ্গতির তীব্র নিন্দা জানিয়ে অতি দ্রুত জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে সুষ্ঠু সমাধানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানান তারা।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাঈম সরকার, যুগ্ম সম্পাদক নাজমুস সাকিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মেহরাব সাদাত প্রমুখ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক এছাক মিয়া বলেন, “জুলাই আন্দোলনের প্রশাসন কর্তৃক নানা কর্মসূচির আর্থিক অসঙ্গতির বিষয়ে প্রশ্নই উঠেই না। আমাদের কাছে প্রত্যেকটা খরচের পায় টু পায় হিসাব ভাউচার সংরক্ষিত আছে। আর আমরা কোন ছাত্র সংগঠনকে প্রশ্রয় দিচ্ছি না। আর আমাদের বিষয়ে তাদের কোন অভিযোগ থাকলে আমাদের তারা বসুক।”