সিলেটে ৪ ইটভাটা বন্ধ থাকায় বেকার হাজারো শ্রমিক
ইট পোড়ানোর জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না পাওয়ায় ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার চারটি ইটভাটা মেসার্স মোতালেব ব্রিক্স, সুরমা, নুরুল ও একতা ব্রিক্স ধ্বংসের মুখে। দু’বছর ধরে বন্ধ হওয়া ইটভাটা চারটি নিত্য প্রায় ২ কোটি ইট উৎপাদন করত।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ইটভাটাগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রায় এক হাজার নারী ও পুরুষ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। গত দুই মৌসুমে ইট পোড়ানো সম্ভব না হওয়ায় এই পেশার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা প্রায় ২০ কোটি টাকা লোকসানের সম্মুখীন হয়েছেন।
প্রতি মৌসুমে ইটভাটা মালিকরা ভ্যাটসহ সরকারি কোষাগারে প্রায় ১০ লাখ টাকার রাজস্ব জমা দিতেন, যা থেকে সরকারও বঞ্চিত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফেঞ্চুগঞ্জের চারটি ইটভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের নীতিমালা অনুসরণ করে এবং তাদের দেওয়া ছাড়পত্র নিয়েই গত ৩৫-৪০ বছর ধরে লোকালয় থেকে দূরে, উঁচু চিমনি তৈরি করে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখে ইট উৎপাদন করে আসছিলেন। এই ভাটাগুলোতে কাজ করে প্রায় এক হাজার শ্রমিক সারা বছরের জীবিকা নির্বাহ করতেন।
হঠাৎ গত দুই বছর ধরে পরিবেশ অধিদপ্তর ইটভাটা মালিকদের ইট পোড়ানোর অনুমতি না দেওয়ায় তারা মহাবিপাকে পড়েছেন। ইটভাটা চালু না থাকায় নারী-পুরুষ শ্রমিকেরা পরিবার-পরিজন নিয়ে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।
অন্যদিকে ইটভাটা বন্ধ থাকায় ইট সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে ফেঞ্চুগঞ্জ ও পার্শ্ববর্তী উপজেলাগুলোতে সরকারি, বেসরকারি এবং ব্যক্তিগত নির্মাণ প্রকল্পগুলো স্থবির হয়ে পড়েছে। ইট সরবরাহ না থাকায় নির্মাণশিল্পে এরই মধ্যে বড় ধরনের আঘাত নেমে এসেছে। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে আগামী দিনগুলো আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
ফেঞ্চুগঞ্জ এলজিইডির একাধিক ঠিকাদার জানিয়েছেন, চলতি অর্থবছরে বাস্তবায়নাধীন দালান নির্মাণ প্রকল্পে তারা ৩ কোটি টাকার কাজ পেয়েছেন। স্থানীয় ইটভাটাগুলো বন্ধ থাকায় হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার থেকে ইট কিনে আনতে তাদের খরচ অনেক বেশি পড়ছে। তারা জানান, এভাবে বেশিদিন কাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না।
ফেঞ্চুগঞ্জের মেসার্স মোতালেব ব্রিকসের নারী শ্রমিক সালেহা বেগম জানান, তিনি ইটভাটায় ছয় মাস কাজ করে চার সদস্যের পরিবারের সারা বছরের ভরণপোষণ এবং ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে পারতেন। গত দুই বছর ধরে ইটভাটা বন্ধ থাকায় তাদের এখন খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। মোতালেব ব্রিকসের স্বত্বাধিকারী হাজী আব্দুল মোতালেব (হেনু মিয়া) জানিয়েছেন, তিনি কুশিয়ারা ও জুড়ি নদীর তীর ঘেঁষে লোকালয়ের বাইরে গত ৩৫ বছর ধরে পরিবেশ অধিদপ্তরের নীতিমালা মেনেই ইটভাটা চালিয়ে আসছেন।
গত দুই বছর ধরে পরিবেশ অধিদপ্তর ইট পোড়ানোর অনাপত্তিপত্র না দেওয়ায় তাঁর ইটভাটাটি বন্ধ রয়েছে। এ নিয়ে তিনি বিপাকে পড়েছেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ইটভাটা পরিদর্শন করে যাওয়ার পরও ঠিক কী কারণে অনুমতি দিচ্ছেন না, তা তাঁর বোধগম্য নয়।
মেসার্স সুরমা ব্রিকসের স্বত্বাধিকারী বদরুজ্জামান তানভীর জানান, পরিবেশগত ছাড়পত্র না পাওয়ায় দুই বছর ধরে ইটভাটা বন্ধ থাকায় তিনি ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। মেসার্স নুরুল ব্রিকসের মালিক এবং মাইজগাঁও ইউনিয়ন
পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাছিত জানান, আগের উৎপাদিত সব ইট এরই মধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। পরিবেশ ছাড়পত্র না পাওয়ায় তাঁর ভাটাও দুই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে।








