সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটন রক্ষায় নেই কোন পদক্ষেপ
দৈনিক সিলেট ডট কম
এম,এ আহমদ আজাদ, সেন্টমার্টিন ঘুরে এসে:২০১৮ সালের প্রথমদিনই দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন সফর করলাম।চোখ জুড়ে ছিল সমুদ্র বিলাস। সকাল ৬টায় মিনিটে কক্সবাজার হোটেল যাত্রা শুরু করি। সাড়ে ৬টায় বাসে উঠি ৯টার সময় টেকনাফ নাফ নদীর তীরে পৌছলাম। এর পর কেয়ারী সিন্দবাদ জাহাজে উঠি। বন্ধুমহলের আনন্দ ভ্রমনটি
ছিল সর্ম্পূন নতুন অভিজ্ঞতা। আমরা ৬ বন্ধুর মধ্যে কেউই এর আগে সেন্টমার্টিন দেখি নাই। জাহাজ ভ্রমন ছিল আমাদের কাছে প্রথম। সকাল সাড়ে ৯টায় জাহাজ সেন্টমার্টিন এর উদ্দ্যেশ্যে যাত্রা শুরু করে। দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে গিয়ে সেন্টমার্টিন জাহাজঘাটিতে জাহাজটি নোঙ্গর করে।
প্রথমেই চোখে সামনে দেখতে পেলাম দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপটি।জাহাজ ঘাটিতে চোখে পড়লো ময়লার স্তুপ আর সেই বৃট্রিশ শাসন আমলে নির্মিত জেটি। যা অনেকটা ভেঙ্গে গেছে।ভাঙ্গাচুড়া জাহাজ জেটি দেখে মনে হয়নি কোন সরকার এটি সংস্কার করেছেন।হাজার হাজার পর্যটক ভীড় করছেন জাহাজ জেটিতে। সবাই অনেক কষ্ট করে ভাঙ্গা জাহাজ জেটি দিয়ে দ্বীপে উঠছেন। সঙ্গী বন্ধুদের মধ্যে ইউসুফ,জুয়েল ও মুকিত বিভিন্ন দেশের সমুদ্র সৈকত ও দ্বীপ সফর করেছে তারা এচিত্র দেখে হতবাক। আফসোস করে এক বন্ধু বললেন যদি বিদেশের মাটিতে এমন প্রবাল দ্বীপ আবিস্কার হতো সোনায় বাঁধানো থাকতো সারা দ্বীপ।জাহাজের নাবিক ও সারেংরা আমাদের তিন ঘন্টা সময় বেধে দিলেন। তিন ঘন্টার মধ্যে আমার ফিরতে হবে। আমরা কিছু পায়ে হেটে পরে রিক্সা যোগে প্রবালদ্বীপ ঘুরতে বাহির হলাম। প্রবাল পাথরে আচ্ছাদিত দ্বীপটির প্রতিটি দৃশ্য নয়নাভিরাম।
ঘুরে ফিরে এক জায়গায় দেখতে পেলাম হুমায়ূন আহমদের সমুদ্র বিলাস বাড়ি। বাড়ি পাশে হলো সবার ফটোশেসন। তার পাশেই হোটেল অবকাশ সেখানে বিকালের খাবার খেলাম। প্রথম স্বাধ নিলাম সামুদ্রিক কোরাল মাছের। সমুদ্রের বুকে হোটেলে খাবারের মান মনে হলো মোটামুটি ভাল। তার পর সময় ফুরিয়ে যাবার আগে আবার ঘুরে জাহাজ বন্দরে আবার চলে আসার পালা।সেন্টমার্টিন অনেক গুলো হোটেল মোটেল দেখতে পেলাম। যারা সমুদ্র বিলাসে থাকার ইচ্ছা সেখানে থাকতে পারেন। এখানে রয়েছে ছোট বড় অনেকগুলো দোকান। তাতে বেশির ভাগ বার্মিজ পণ্যের আদিপত্য। স্বল্প সময়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপটি দেখে মুগ্ধ হলেও একটি বিষয় না লিখে পারছি না। সেখানে সরকারের পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন নেই বললেই চলে। পরিস্কার পরিছন্নতা আর সরকারের কোন পর্যটন রক্ষায় কোন উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ চোখে পড়েনি।অনেকেই আক্ষেপ করে বলেন পর্যটন মন্ত্রী যদি একবার সেন্টমার্টিন ঘুরে যেতেন তাহলে অনেক পরিবর্তন হতো।সেন্টমার্টিন এর প্রবাল দ্বীপ সুরক্ষায় ও পর্যটন সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিতে বিমান ও পর্যটন মন্ত্রীর জরুরী হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
এই প্রবাল দ্বীপ থেকে আয় হতো লক্ষ লক্ষ টাকা।যদিও সেন্টমার্টিন একটি ছোট দ্বীপ । যা বাংলাদেশের সীমানার সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত। নয়নাভিরাম সৌন্দর্য অবলোকনের ও ভ্রমণের একটি আকর্ষণীয় পর্যটন এলাকা। এটি বঙ্গোপসাগরের উওর-পূর্ব অংশে এবং টেকনাফ থেকে ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। আরবের কিছু নাবিক ২৫০ বৎসর পূর্বে এটি আবিস্কার করেন (ভূগলের তথ্য সুত্রে জানা গেছে)। তারা এটিকে “জাজিরা” নামকরণ করেন। বৃটিশ শাসনের সময়কালে এটিকে পুনরায় “সেন্টমার্টিন” দ্বীপ নামে নামকরণ করা হয়। দ্বীপটির স্থানীয় নাম নারিকেল জিনজিরা। এটিই বাংলাদেশের একমাএ প্রবাল দ্বীপ। এর আয়তন ৮ বর্গ কিলোমিটার। ২০০৬ সালের হিসেব অনুযায়ী এর জনসংখ্যা ৭,০০০ জন। এবং এর ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৮৭৫ জন। সেন্টমার্টিনের ব্যাপ্তিতে ছেঁড়াদ্বিপ নামে একটি সংযোযিত অংশ রয়েছে। কক্সবাজার থেকে এখানে পৌঁছাতে প্রায় ৫ ঘন্টা সময় লাগে।
এ দ্বীপের বাসিন্দারা প্রাথমিকভাবে মাছ ধরাকে জীবিকা হিসেবে গ্রহণ করেছে। এখানকার লোকদের প্রধানতম শস্য হল ধান এবং নারিকেল। এখানে প্রচুর পরিমাণে শেওলা পাওয়া যায়। এগুলিকে শুকিয়ে সংগ্রহ করে মায়ানমারে পাঠানো হয়। অক্টোবর এবং এপ্রিল মাসে পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা দ্বীপের অস্থায়ী মার্কেটগুলোতে তাদের ধরা মাছগুলোকে বিক্রি করার উদ্দেশ্য নিয়ে সমবেত হয়। দ্বীপের মধ্য ও দক্ষিণের এলাকা মূলত কৃষিজমির অন্তর্গত। এখানে অধিকাংশ খাবার বাংলাদেশ ও মায়ানমারের মধ্য-ভূখন্ড থেকে রপ্তানি করা হয়। যোগাযোগ, আশ্রয় ও চিকিৎসা ব্যবস্থার সরবরাহ না থাকায় এবং বাংলাদেশের মূল-ভূখন্ড থেকে বেশ দূরে অবস্থানের দরুণ বর্ষাকালে এখানকার জনগনের দুর্ভোগের শেষ থাকে না।
এই দ্বীপে ভ্রমনের একমাএ উপায় হল নৌপথ। ১৯৯৯ সালের হারিকেনের পর থেকে এ দ্বীপে বিদ্যুতের সমাপ্তি ঘটে। বড় বড় হোটেলগুলোতে জেনারেটরের ব্যবস্থা আছে। দ্বীপটি সূর্য, সমুদ্র এবং পাম গাছ দ্বারা আচ্ছাদিত। সকাল বেলায় সূর্য উদয় এবং সন্ধায় সূর্যাস্তের অপরুপ দৃশ্য দ্বীপের লোকালয়ে প্রাণ ফিরিয়ে আনে। সেন্টমার্টিন দ্বীপ একটি জনপ্রিয় পর্যটন স্পটে পরিণত হয়েছে। দেশী ও বিদেশী পর্যটকদের জন্য এখানে ৬ টি শিপিং লাইন্স (শহিদ শের নিয়াবাদ, এল সি টি কুতুবদিয়া, ঈগল, ক্রিয়ারি ক্রুজ, ডাইন, গ্রীন লাইন এবং ক্রিয়ারি সিনবাদ) চালু করা হয়েছে। ভ্রমণকারীরা চট্রগ্রাম ও কক্সবাজার থেকে তাদের ট্রিপ বুক করতে পারেন। এ দ্বীপের সাথে জড়িয়ে দ্বীপের একটি সংযোযিত অংশ রয়েছে যার নাম ছেঁড়াদ্বিপ। ছেঁড়াদ্বিপে কোন লোকজন বসবাস করে না। তাই ভ্রমনকারীদের খুব সকালে এখানে যাএা করতে হয় যাতে করে সন্ধা হবার পূর্বেই তার হোটেলে ফিরে আসতে পারে।
সেন্টমার্টিনের পরিদর্শক জনসংখ্যা নাটকীয় ভাবে বেড়ে গেছে। সেই সুবাদে এটা এখানকার জনগনের জন্য লাভজনক প্রমানিত হচ্ছে। এখানকার সামুদ্রিক প্রবাল ও কচ্ছপের সংরক্ষণে ব্যপক কার্যক্রম হাতে নেওয়া হচ্ছে। পায়ে হেটে এ দ্বীপটিকে একদিনে অতিক্রম করা সম্বব। কেননা এর আয়তন মাএ ৮বর্গ কিলোমিটার (উচ্চ জোয়ারের সময় ২ বর্গ মাইল)। দ্বীপটি তার প্রবাল প্রাচীরের জন্য টিকে আছে। এটি ক্ষয় হতে থাকলে দ্বিপটি পানিতে ডুবে যাবার সম্ভাবনা আছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপের বেশির ভাগ লোক মাছ ধরার পেশায় নিয়জিত। সেন্টমার্টিনে আপনি সবচেয়ে ভাল জলবায়ু এবং আবহাওয়া পাবেন নভেম্বর ও ফেব্রুয়ারী মাসের মাঝামাঝি সময়ে। এটিই এখানকার প্রধান পর্যটন ঋতু। মার্চ ও জুলাই মাসের পর্যটকদের অবশ্যই আবহাওয়ার পূর্বাভাসের প্রতি সর্বদা খেয়াল রাখতে হবে। কেননা ঘূর্ণিঝড় এই সময়ে এখানে বারবার আঘাত করে। ১৯৯১ সালের ঘূণিঝড়ে এই দ্বীপটি সম্পুর্ণরূপে বিদ্ধস্ত হয়েছিল, কিন্তু পুনরায় উৎজ্জীবিত হয়েছে এবং ২০০৪ সালের সুনামির পরও এটি অক্ষত আছে।