আসুন শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াই
দৈনিক সিলেট ডট কম
রায়হান আহমেদ তপাদার:প্রতি সকালের কুয়াশা আর ঠান্ডা হাওয়া জানান দিচ্ছে শীত এসেছে সারা গাঁ জুড়ে।পাখিরা গাছের ডালে জবুথবু হয়ে আছে। জমে আছে ঘাসের উপর শিশির বিন্দু।প্রতি বৎসর শীতকাল আমাদের মাঝে আসে। আবার চলেও যায়। কিন্তু কষ্ট হয় অসহায় ও দুঃখী মানুষের। বর্ষা ও শীতকাল।এ দুটো কালেই অসহায় মানুষেরা সবচেয়ে বেশি কষ্টে ভোগে। যৎসামান্য সাহায্য তারা পায় তা দিয়ে কোনভাবেই তাদের কুলোয় না। কষ্ট সহ্য করেই দিন পার করতে হয়।হাড়কাঁপানো শীতের হাত থেকে বাঁচাতে অসহায় দরিদ্র মানুষগুলোর জন্য আপনিও কিছু করুন।আপনার পুরোনো জামা-কাপড় যে গুলো হয়তো আপনার কোন কাজেই লাগছে না।সে সব জামা-কাপড়ই এখন হয়তো একজন রাস্তার মানুষের জীবণকে বাঁচিয়ে দিতে পারে।তাদের প্রতি একটু সদয় হোন! ঋতু পরিক্রমায় বাংলা পৌষ ও মাঘ শীতকাল। ষড়ঋতুর এই দেশে এখন আর ষড়ঋতু নেই। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শীত, গরম ও বর্ষা এ তিন ঋতুরই প্রভাব। প্রচন্ড গরম,অতিমাত্রায় শীত ও অতিবৃষ্টির প্রভাব বেশি। ষড়ঋতুতে বাংলা পৌষ ও মাঘ শীতকাল হলেও কোনো কোনো বছর কার্তিকের শেষ দিক থেকে শীত শুরু হয় এবং তা থাকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং এর মাত্রা নিচে নেমে আসে। তাপমাত্রা যখন কমতে থাকে, তখনই শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। এ শীত অনেক সময় হাড় কাঁপানো শীতে পরিণত হয়। এ বছর শীত অনেক পরে এসেছে। পৌষ মাসের শেষ দিকে তাপমাত্রা কমে গিয়ে শীতের তীব্রতা বেড়ে গেছে। সারা দেশে এখন হাড় কাঁপানো শীত।এই শীতে শিশু ও বৃদ্ধরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।দেশের দক্ষিণাঞ্চলের চেয়ে উওরাঞ্চলে শীতের তীব্রতা তিন-চারগুণ বেশি।শীতে মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছে না।
আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন,জানুয়ারি মাসে বড় ধরনের দুটি শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা রয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় ১৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। অসুস্থ হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার শিশু ও বৃদ্ধ।শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে অনেকে হাসপাতা লে ভর্তি হয়েছে, আবার অনেকে পারিবারিকভাবে চিকিৎসা নিচ্ছে।তাছাড়া খোলা আকাশের নিচে বসবাসকারী এবং নারী, শিশু ও বৃদ্ধের কষ্টের শেষ নেই। তারা শীতের কষ্টে সারারাত আগুন জ্বালিয়ে কাটায়। শীতের কারণে তাদের চোখের ঘুম যেন হারাম হয়ে গেছে। ঢাকা শহরের কথাই বলি কমলাপুর রেলস্টেশন, সদরঘাট, যাত্রাবাড়ী, গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে খোলা আকাশের নিচে হাজার হাজার মানুষের বসবাস। এদের বাড়িঘর নেই; যেখানে রাত সেখানেই কাত হয়ে শুয়ে থাকেন। তাছাড়া ঢাকার বিভিন্ন ফুটপাতেও হাজার হাজার মানুষের বসবাস। ফুটপাতই যেন তাদের বাড়িঘর। স্বামী-স্ত্রী দিনের বেলায় কাজ করে রাতে ফুটপাতে পলিথিন টাঙিয়ে বসবাস করে; রান্নাবান্না ফুটপাতেই করে। এরা ঠিকানাহীন মানুষ। ঢাকা শহরে এদের সংখ্যা কত? সরকারি বা বেসরকারি ভাবে এই হিসাব কারো কাছে নেই। ঢাকা রাজধানী হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানের লোকজন কর্মসংস্থানের জন্য এ শহরে বসবাস করেন। এদের আয় কম থাকায় এরা বাসাভাড়া নিয়ে থাকতে পারছেন না। তাই তাদের বসবাস ফুটপাতে। অনেকে অভাবের তাড়নায়, আবার অনেকের বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ায় তারা কর্মসংস্থানের জন্য ঢাকামুখী হয়েছে। বছরের ১২ মাসই এদের কষ্ট।
শীতকালে শীতকষ্ট, গরমে অসহ্য হয়ে যায়, আবার বৃষ্টিতে ভিজে কষ্ট করে। এদের দুঃখ আর কষ্টের শেষ নেই। এরা বঞ্চিত তিনটি মৌলিক অধিকার থেকে। এখন প্রচন্ড শীত। সারা দেশে পড়ছে হাড় কাঁপানো শীত। পত্রপত্রিকার খবর অনুযায়ী, সরকারি ও বেসরকারিভাবে কিছু শীতবস্ত্র বিতরণ করা হলেও বেশিরভাগ মানুষই শীতবস্ত্র পায়নি। শীতার্তদের তুলনায় শীতবস্ত্র বিতরণের সংখ্যাও খুব কম। গত বছর ২৫ আগস্ট থেকে আমাদের দেশে আসা মিয়ানমারের রোহিঙ্গারাও শীতকষ্টে ভুগছে।অসহায় রোহিঙ্গাদের মাঝে সরকারি ও বেসরকারি ভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। রোহিঙ্গা শিবিরে ৫০ হাজার গর্ভবতী নারী ও ১ লাখেরও বেশি শিশু রয়েছে। এদের বেশিরভাগই শীতকষ্টে ভুগছে। রোহিঙ্গা মুসলমানদের কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় তারা নানা কষ্টে অস্থায়ী ক্যাম্পে বসবাস করছে। হাড় কাঁপানো শীতে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। রোহিঙ্গারা আমাদের দেশে পালিয়ে এসেছে রাখাইনের সেনাদের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে। বাংলাদেশ সরকার মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিয়েছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের কাছে বিশ্বমানবতার মা হিসেবে প্রশংসা পেয়েছেন। ছোট্ট এই দেশে প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে তাদের ভাত-কাপড়সহ অস্থায়ী বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। আমাদের সবারই উচিত অন্তত শীতের সময় শীতবস্ত্র নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ানো। এ দেশের শিল্পপতি, রাজনীতিবিদ ও মানবাধিকার সংগঠন গুলোকে আমি বলতে চাই, আপনারা শীতার্ত মানুষের কাছে যান এবং শীতে কষ্ট পাওয়া মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের শীতবস্ত্র দিয়ে সহায়তা করুন।
তাছাড়া শীত জনিত কারণে মানুষের মৃত্যু মানবাধিকার লঙ্ঘনের চরম শামিল। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলমান নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ ও এ দেশের ঠিকানাহীন মানুষকে মানবিক কারণে হলেও তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সহায়তা করা উচিত। রোহিঙ্গারা জীবন বাঁচাতে এ দেশে এসেছে। তারা যেন শীতে কষ্ট করে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা না যান। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে এত বড় বোঝা বহন করা সম্ভব নয়। তাই বেসরকারি সংস্থা ও এনজিওগুলোরও এগিয়ে আসা উচিত।আবহাওয়াবিদরা আরো জানিয়েছেন, জানুয়ারিতে দুটি ও ফেব্রুয়ারিতে একটি বড় ধরনের শৈত্য প্রবাহের সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর শীতের তীব্রতা কমবে। তবে ফাল্গুন মাসের শেষ পর্যন্ত শীত চলবে। শীতের শুরুটা যেমন কমছিল,শেষটাও কম থাকবে বলে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন। মাঝামাঝি শীতের তীব্রতা থাকার কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের লক্ষণ। দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। আসুন আমরা সবাই মিলে মানবিক কারণে হলেও শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াইÑ এটি আমাদের একটি মানবিক দায়িত্ব।শীতের প্রকোপ বাড়ছে। বাংলাদেশ শীতপ্রধান দেশ নয়, কিন্তু প্রতি বছর নির্দিষ্ট সময়ে এ দেশে শীত আসে। কিন্তু এ দেশের গ্রামের মানুষের জন্য শীতের প্রস্তুতি থাকে না। ফলে এই শীত হয়ে ওঠে অনেকের জন্য দুর্ভোগের কারণ। এবারো গ্রামাঞ্চলে বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষের জন্য শৈত্যপ্রবাহ দুর্ভোগ বাড়িয়ে তুলেছে। শীত মওসুম কেটে যাওয়ার আগে আরো শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা আছে। শীতের দুর্ভোগ আরো বাড়তে পারে। গত কয়েক দিনের শৈত্যপ্রবাহে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছে উত্তরাঞ্চলের গ্রামের অভাবী ও গরিব মানুষ।শীতে অভাবী মানুষের জন্য এখন জরুরি দরকার হয়ে পড়েছে শীতবস্ত্রের।
কিন্তু গ্রামের এসব মানুষের অনেকের পক্ষে আলাদাভাবে শীতের কাপড় কেনা দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। প্রতি বছর শীতের সময় দেশের বিভিন্ন সামাজিক সংস্থা এমনকি ব্যক্তিপর্যায়ে শীতার্ত মানুষের জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়। অতীতে সরকারি পর্যায়েও গরিব মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এবার সে ধরনের কোনো তৎপরতা চোখে পড়ছে না।অপরদিকে দেশে অস্বস্তিকর রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ব্যবসায়-বাণিজ্যে মন্দাভাবের কারণে এক ধরনের জ্বরাগ্রস্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এর প্রভাব সামাজিক কর্মকাণ্ডের ওপরও পড়ছে। কিন্তু সমাজের বিত্তবান ও মানবিক বোধসম্পন্ন ব্যক্তিরা যদি দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে না দাঁড়ায়, তা হলে মানুষের দুুর্ভোগ শুধু বাড়বেই। এ ক্ষেত্রে সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্ববোধ থেকে এগিয়ে আসতে হবে। ব্যক্তিপর্যায়ের উদ্যোগের মাধ্যমে এমন পরিস্থিতি থেকে শীতার্তদের রক্ষা করা যায়।শীতার্ত অভাবী মানুষদের সহায়তা করা সরকারের দায়িত্ব। অতীতে জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে দেশের গরিব মানুষদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। সরকারের উচিত উত্তরাঞ্চলের মানুষের জন্য শীতবস্ত্র বিতরণের উদ্যোগ নেয়া। একই সাথে বেসরকারি সংস্থা, সামাজিক ও সেবামূলক সংস্থা গুলোও শীতার্ত মানুষের সহায়তার জন্য এগিয়ে আসতে পারে। মানবিক চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মাধ্যমে কেবল আমরা একটি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারি।এজন্য দেশের ছাত্র ও তরুণ সমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে। আসুন,এই শীতে মানবিকবোধ থেকে আমরা শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াই,মানুষের দুর্ভোগ কমিয়ে আনতে সাহায্য করি।
আমি কোন সাহায্য চাচ্ছিনা, বলছিনা কোন তহবিলকে সমৃদ্ধশালী করতে। শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে শীতবস্ত্র বিতরণের নামে কোন টাকা দিতে।এটুকুই বলি,শুধু একটু চোখ কান খোলা রাখুন আশেপাশে একটু নজর দিন।দেখবেন আপনার এলাকায় শীতে কষ্ট পাচ্ছে কোন কোন বাবার বয়সী লোক কিংবা হতদরিদ্র অবস্থায় আছে একটা পুরো পরিবার। এখন কি তাহলে তাদের পিছনে অনেক টাকা ঢেলে দিতে হবে ? নাহ তার দরকার নেই। একটু খুঁজে দেখুন বাসার আলমারীর কোনায় হয়তো লুকিয়ে আছে আপনার তকয়েক বছর আগের শীতের কাপড়টি যেটা কিনা এখন ব্যবহার হচ্ছেনা।সেটি ঐ লোককে দিন।দেখবেন সে অনেক খুশি হয়েছে, আপনার জন্য অনেক দোয়া করছেন। আর পুরোনো কাপড় না থাকলে একদিনের নাস্তা কিংবা লাঞ্চের টাকা সেক্রিফাইজ করতে পারি। এতে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে বলুন?সেই টাকা দিয়ে একটা শিতের কাপড় কিনে সেই লোক গুলোকে দিন। অথবা দু’চার জন বন্ধু মিলে দাঁড়াতে পারেন পুরো একটা পরিবারের পাশে।এভাবে আমরা দাঁড়াতে পারি শীতার্ত মানুষের পাশে। সবচেয়ে বড় কথা হল এভাবে নিজে কাজ করার মাঝে আত্মতৃপ্তিটাই অন্যরকম। তাহলে কি পারবেন না এগিয়ে আসতে।