আব্দুল আজিজ-এর একগুচ্ছ ঈদের ছড়া
দৈনিক সিলেট ডট কম
ঈদী ও ঈদান্ন
ঈদের দিনে কি পরব
কি খাব কি খাবনা,-
এই নিয়ে সবার মনে
কত শত ভাবনা।
কেউ পরবে জামা-জুতো
হাল-ফ্যাশানে ভাই,-
কারো গায়ে থাকবে ছেঁড়া
পুরান জামাটাই।
কেউ খাবে কোর্মা-পোলাও
কত রকম রান্না,-
কারো পাতে রবেনা ফেন
ঝরবে চোখে কান্না।
আস সবে দাঁড়াই পাশে
করি মোদের ধন্য,-
বাড়তি অন্ন বস্ত্রটা
দেই দুখির জন্য
২
ঈদুল ফিতর
ঘরে-ঘরে কোর্মা-পোলাও
হাওয়ায় ভাসে ঘ্রাণ,-
রোজার শেষে ঈদ এসে
জাগায় সবার প্রাণ।
পাখ-পাখালি গায় সুরে
তাল-তমালের বনে,-
ঈদের দিনে অথৈ খুশি
লাগল সবার মনে।
জোয়ান-বুড়ো নর-নারী
কারো ফুসরত নেই,-
শত কাজে সবাই যেন
হারায় কথার খেই।
পায়জামা পাঞ্জাবী আর
মাথায় পাগড়ী পরে,-
ঈদ গাঁয়ে সবাই মিলে
ঈদের নামাজ পড়ে।
কত মজার পিঠা-পুলি
ফিরনি-সেমাই খেয়ে,-
কোলাকুলি করে সবাই
খুশির বানে নেয়ে।
শিশু-কিশোর ফুর্তি করে
স্বপ্ন রঙ্গিন দিন,-
নানা রঙের জামা পেয়ে
বাজায় সুখের বীণ।
মুক্ত হস্তে করে সবে
জাকাত ফিতরা দান,-
ধনী-গরিব ভুলে গায়
শুধুই সাম্যের গান।
জুঁই-বেলির গন্ধে ভরা
আতর-লোবান মেখে,-
ইচ্ছে করে কাটাই বেলা
ঈদের ছবিই এঁকে
৩
চাঁদ রাতে
খুশির ঢল এল নেমে
দুখের কথা গেল থেমে
কিসের তরে জাগে সবে
কেমন তর অনুভবে
হারিয়ে সবে নিদ,-
জাগছে সবে দিবা-নিশি
জাগছে দূরে রবি-শশী
ধরার শিশু “চাঁদ রাতে”
নিজের ঘরে সবে মাতে
সকাল হলে ঈদ।
নিদ হারাল বনে কেয়া
নিদ হারাল ঘন দেয়া
নিদ হারিয়ে রাতে কবে
পিঠা-পায়েস রাঁধে সবে
দু’চোখে নেই ঘুম,-
পাহাড় নদী ঝর্ণাধারা
আঁধার রাতে জাগে সারা
অপার সুখ অনুভবে
চাঁদের পানে চেয়ে সবে
খুশিতে দেয় চুম
গিন্নীর লিষ্টি
গিন্নীর লিস্ট দেখে
সেদিন সকালে,-
কর্তার আঁখি গোলক
তুলেন কপালে।
দিতে হবে ত্রিশ পদ
মশলা যে তার,-
আরো কত কিছু ঈদে
চাই উপহার।
পাঁচ কিলো সয়াবিন
দশ কিলো ডাল,-
বিশ কিলো কালিজিরা
সুবাসিত চাল।
গরু চাই দশ বারো
খাসি চাই পাঁচ,-
রোস্টারের সাথে আন
তাজা রুই মাছ।
শাড়ি আন ষাটখানা
লুঙ্গি ক’ডজন,-
দূর থেকে আসছেন
আত্মীয়-স্বজন।
ছোট ছেলে চায় জামা
বড় ছেলে বাড়ী,-
মেজো ছেলে বউ চায়
সেজো চায় গাড়ী।
আহ্লাদে ছোট মেয়ের
হল সবে বিয়ে,-
সারা দিন ঘরে রয়
জামাইকে নিয়ে।
এখানেই শেষ নয়
আরো আছে তার,-
এবার ঈদে চায় সে
সাতনরি হার।
তারপরেও নগদে
চায় কিছু টাকা,-
হানিমুনে যাবে সে
রাজধানী ঢাকা।
নাতনীর নেকলেস
বউমা’র বালা,-
এ দুটো দেবে এবার
আদরিনী খালা।
শ্বশুড়ের জন্যে চাই
পাঞ্জাবী ও টুপি,-
শাশুড়ির ছড়ি নাকি
দেবে তার ফুফি।
বড় মেয়ে আগেবাগে
নিয়ে এল স্বামী,-
তার দাবী একটাই
চাই খানা দামী।
বাড়ী-ঘরে রঙ চাই
ডাকা চাই মিস্ত্রী,-
ময়লা জামা-কাপর
করে আন ইস্ত্রি।
ঈদের দিন দুপুরে
দিতে হবে ভোজ,-
ঘর-বার সকলের
করে যাও খোঁজ।
কর্তার কম বয়স
জোয়ান সে মর্দ,-
প্রেসারটা বাড়ে তবু
দেখে ঈদ ফর্দ।
টাকা-কড়ি বেশ তার
ব্যয় চান কম,-
লোকও সে খুব ভাল
কিপটের যম।
হাট থেকে কিনে নেন
কম দামী শাড়ি,-
রাগ করে গিন্নী তাই
ছেড়ে দেন বাড়ী।
ঈদ এলে পড়শীর
হয় দম ফেল,-
তাই আগে কিনে নেন
ঘুমাবার তেল
———-
নিউ ইয়র্ক