সাহিত্যপ্রেমী মাহবুবুর রহমান
দৈনিক সিলেট ডট কম
আ,ন,ম শফিকুল হক:সিলেট ভৌগলিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে সাহিত্য সাংস্কৃতিক জীবন চর্চার এক উর্বরভূমি।
প্রাচীন যুগ, মধ্যযুগ, আধুনিক যুগ তথা ইংরেজ আমল, পাকিস্তানকাল এবং বর্তমান বাংলাদেশের পটভূমিকায় সাহিত্য সাংস্কৃতি চর্চায় সিলেটের রয়েছে উল্লেখযোগ্য অবদান।
সেজন্য সিলেট বিভাগের অধিবাসীদের সাহিত্য চর্চায় বাংলাদেশের পথিকৃৎ বলা হয়। এ বিভাগের অধিবাসীরা বাংলা ভাষা ও সিলেটি নাগরী ভাষা সহ মোট সাতটি ভাষায় সাহিত্য চর্চার ঐতিহ্য রেখেছেন। পনের’শ শতাব্দি শুরু থেকে এ যাবৎ সিলেটবাসীরা যে সমস্ত ভাষায় সাহিত্য রচনা করে গেছেন, সেগুলো হলো-(১) সংস্কৃত (২) বাংলা (৩) সিলেটি নাগরী (৪) আরবী (৫) ফার্সী (৬) উর্দু ও (৭) ইংরেজি।
সিলেটের সাহিত্য সংস্কৃতি অঙ্গনে কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের রয়েছে অবিস্মরণীয় ভূমিকা। এই সাহিত্য সংসদ জন্মদিয়েছে অনেক আলোকিত ব্যক্ত্বির।
পিছিয়ে পড়া মুসলমান সমাজে সাহিত্যচর্চার ব্যাপক প্রচলন, বৃহত্তর সিলেটের কবি ও সাহিত্যিকদের রচিত সাহিত্য সংকলন, প্রাচীন পুথি সংগ্রহ ও সাহিত্যসেবীদের সাহিত্যচর্চার সুযোগ প্রদান করার লক্ষ নিয়ে ১৯৩৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর সিলেট শহরে প্রতিষ্ঠিত এই সাহিত্য সংগঠন।
সংসদের প্রথম কার্যকরী কমিটিতে সভাপতি ও সম্পাদক ছিলেন যথাক্রমে দেওয়ান একলিমুর রাজা চৌধুরী, এম.এল.এ এবং এ.জেড আব্দুল্লাহ।
মুসলিম সাহিত্য সংসদের প্রধান কর্মকান্ড ছিলো- সাহিত্যসভা ও সমাবেশ; গল্প, প্রবন্ধ ও কবিতা পাঠের আসর; জলসা, সঙ্গীত ও গানের আসর; সংবর্ধনাসভা, প্রীতিসম্মেলন, স্মরণসভা, শোকসভা, গুরুত্বপূর্ণ দিবস ইত্যাদি অনুষ্ঠান পালন করা । এই ধরাবাহিকতা আজও বিদ্ধমান রয়েছে, রয়েছে সকল ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চার সমান সুযোগ। অতি সম্প্রতি সাহিত্য সংসদ এক হাজারতম সাহিত্য আসর উদযাপন করেছে।
শুরু থেকে সংসদের মুখপত্র মাসিক আল ইসলাহ্ পাঠক, লেখক ও গবেষক সৃষ্টিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে আসছে। মাসিক আল ইসলাহ-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক ছিলেন
ভাষা সৈনিক, সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মুহম্মদ নুরুল হক।
মুহম্মদ নুরুল হককে সংসদের লাইব্রেরির দায়িত্ব দেওয়া হয়। মাত্র ১৯টি বই নিয়ে শুরু হয় লাইব্রেরি।পরর্তিতে মুহম্মদ নুরুল হক এই লাইব্রেরিকে উপমহাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে পরিনত করতে সক্ষম হন। আর সেজন্য তাকে গ্রন্থাগার আন্দোলনের পথিকৃৎ বলা হয়।
বর্তমানে মুসলিম সংসদের লাইব্রেরির বইয়ের সংখ্যা অর্ধলক্ষেরও বেশি। আর আল ইসলাহ্ এখনো নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে।
সময়ের প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ ভবনের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ জরুরী হয়ে পড়ে। স্থানাভাবে সংসদের দুর্লভ সংগ্রহ গ্রন্থাদি নষ্ট হবার উপক্রম দেখা দেয়। এমনি এক কঠিন মুহূর্তে এগিয়ে আসেন শিল্পপতি মাহবুবুর রহমান।
তিনি তাঁর একক অর্থায়ানে নির্মাণ করে দেন কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের বর্তমান অধুনিক ভবন। কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই পাচ তলা ভবনে রয়েছে-মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ সুলেমানের নামে একটি হল,’শহিদ সুলেমান হল’,ভাষাসৈনিক মতিন উদদীন জাদুঘর, বিশাল লাইব্রেরি, সাহিত্য আসর কক্ষ, সেমিনার রুম।
মাহবুবুর রহমান একজন কবি, সাহিত্যিক কিংবা সাংবাদিক না হলেও সিলেটের সাহিত্য সংস্কৃতির প্রতি রয়েছে তাঁর অকৃত্রিম দরদ। তাকে নির্দ্ধিধায় একজন বড় মাপের সাহিত্যপ্রেমী বলা যায়।
এধরনের আলোকিত মানুষের যত জন্ম হবে সমাজের তত কল্যাণ হবে। শিল্পপতি মাহবুবুর রহমানকে অন্তর থেকে শুভেচ্ছা এবং শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। সত্যিকার অর্থে তাঁর মতো ব্যক্তিরাই এসব পাবার যোগ্য।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিল্পী, সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিসেবীদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেছিলেন-‘দেশের সাধারণ মানুষ, যারা আজও দুঃখী, যারা আজও নিরন্তর সংগ্রাম করে বেঁচে আছে, তাদের হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখকে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির উপজীব্য করার জন্য’।
জাতির জনকের এই আহ্বানকে স্মরণ করে আমি বলতে চাই শিল্পপতি মাহবুবর রহমান আমাদেরকে সুরম্য অট্রলিকা নির্মাণ করে দিয়ে একটি বড় দায়িত্ব দিয়েছেন। আর সে দায়িত্ব হলো পরিশুদ্ধ সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে দেশ-জাতি ও সমাজের কল্যাণ করা।
লেখক:রাজনীতি ও সমাজ কর্মী,সহসভাপতি কেমুসাস