একগুচ্ছ কবিতা
দৈনিক সিলেট ডট কম
বৃষ্টিশিষের বিকেলপর্ব
সাইরেন বাজিয়ে চলে গেলো অগ্নিনির্বাপক গাড়ি। একটা
লাল পতাকা উড়িয়ে বৃষ্টিও এলো হঠাৎ করেই , এই শহরে।
মানুষজন অনেক আগেই হয়েছে লাপাত্তা। কেউ শরণার্থী আর
কেউ ফেরারি হয়ে মুছে দিতে সকল বৃষ্টিদাগ,চলে গেছে অন্য
কোথাও। আমরা দাঁড়িয়ে আছি। নির্বাক। শিষ দিয়ে যাওয়া
দোয়েলটাও লিখে রাখছে শব্দাংক। তবে কী সে ও খুব হিসেবি
আজ ! ভীষণ বর্ষণবিকেলে ! অথচ আমরা ভিজছি না দুজনেই,
দেখে নিচ্ছি পাঁজরের তাপ টাঙানো আকাশটা খুলে।
কবিতার সলতেকথা
কবিরা নামতা পড়ে শূন্য এক কালের ভেতরে। কবিতার
গ্রীবা ছুঁয়ে দেখে মুখ রাতের মরমে। কলতান প্রিয় মাঠে
শস্যও সুধায় কুশল। মানুষের ঘরজুড়ে ছবিগুলো ঝুলে
অনিবার। কার মুখ , কার হস্ত – ছাপের কর্তৃত্ব বাড়ায় !
কে এসে এই ঘরে রেখে যায় সলতের আলো। তাহাকেও
চিনে কবি, আর চিনে দীঘির যৌবন। টলমল জল নিয়ে
কতসুখে কাটায় দুপুর। যেভাবে মানুষও পারে ঢেকে যেতে
বনের আড়ালে। ভোগবাদী দিনগুলো ছেড়ে দিয়ে জলের
গভীরে। কবিতার মর্মঘোর, এভাবেই ভিড়ে চন্দ্রতীরে।
ওরা আমার চেয়ে জানে বেশী , প্রবাহিত হতে হতে
রেখে যায় পলির প্রতীক আর মানুষের জন্য উর্বর
ভালোবাসা , জীবনের জৈব রসদ। ওরা আমাকেও
শেখায় , কীভাবে বুকের স্রোতে নিরন্তর সুর্যেরা আলো
ফেলে জাগায় চরের সবুজ , কীভাবে মাঝিমন্ত্র শিখে
নায়ের গলুই ছুটে চলে উত্তরের সন্ধানে , একান্ত দক্ষিণ থেকে
নিরক্ষর নদীগুলো
আমার চেয়ে জানে অনেক কিছু বেশী
এবং আগাম বুঝতেও পারে
কখন আসবে ঝড় , তুফানের তৃতীয় বাহুতে
কতোটা আশ্রিত হয়ে ডুবে যাবে কিশোরীর চোখ।
ঋতুমঙ্গল রীতিতে
নদীগুলো বার বার দিয়ে যায় উৎসের উপাত্ত
যুগল নয়ন ছুঁয়ে , অক্ষরের হিমটুকু নিতে।
প্রথম প্রতিভূ
কথার বৃন্তগুলো কাছে থাকুক। একটা ভেলায়
ভেসে যাই চলো, দূরান্তের দিঘীতে । খেলি
সাঁতারসত্য খেলা । আর কিছু পাপড়ি উড়িয়ে
দিয়ে প্রভাতের উদ্দেশে, বলি – ভালো থেকো
সকাল। মহাকালের প্রথম প্রতিভূ। থাকো এই
বুকের ওম হয়ে। নির্লিপ্ত চোখের কোণায়।একক
উষ্ণতার ছায়া দিয়ে। রাঙিয়ে যাই রক্তের পিরামিড।
ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র জীবনের আখ্যানগুলোকে রাখি সাজিয়ে,
আবার আসবে বলে প্রেম, আবার আসবে বলে
যুগল হাতে ছোঁয়া দক্ষিণের , ধূসর শূন্যতার মায়া।
একটা পথ ছিল আমার । ফেরা ও ফেরারী শব্দ
দুটির সাথে পরিচিত হবার। অথবা কোনো বয়স্ক
বেদনার কাছ থেকে নিয়ে মাসিক ভাতা , চালিয়ে
যাওয়া জীবনপ্রবাহ। আমি কোনোটাই গ্রহণ করিনি।
তার’চে একটা বাঁশি হাতে নির্বাক বসে থেকেছি
পথের ধারে। একটা সূর্য ওঠার সহগামী হবো বলে।
একটা দুয়ার ছিল আমার। পালিয়ে যাবার কিংবা অন্য
কোনো ছায়াকে জড়িয়ে, থেকে যাবার তোমাদের শহরে।
আমি পলায়নপর অথবা পরগাছা হতে চাইনি,কোনোটাই।
আর দুটো চক্ষু ছিল আমার। কিছুই দেখবো না বলে
প্রতিজ্ঞার পরতে সাজিয়ে নীল গোলাপের উষ্ণ পাপড়ি
তারপর চোখ খুলে তাকিয়ে দেখেছি ,আমার বুকের
বহ্নিবৈশ্যতা, ভিজে গেছে শরণার্থী শিশিরে। যেভাবে
আবার জাগবে বলে বৃহস্পতির চাঁদ
বিরহের চারপাশ পরিভ্রমণ করে।