আগস্ট এলিজি
দৈনিক সিলেট ডট কম
আসাদ মান্নান
আমার বুকের মধ্যে একটি আকাশ নয় শুধু,
হাজার আকাশ আমি লুকিয়ে রেখেছি,–প্রতিদিন
অনন্ত আকাশ জুড়ে অনির্বাণ জ্বলতে থাকে ওই
সূর্যকে মাথায় নিয়ে লক্ষ কোটি আলোর মুজিব,
দুঃসময়ে অন্ধকারে যে মুজিব স্বয়ং ভাস্বর।
যে-নামে নদীর জলে ঝাঁক বেঁধে গাঙচিল ভাসে
বাতাসের শিঙ ধরে ঘূর্ণি তালে নাচে হিমালয়,
সে-নাম আমার বুকে লেখা আছে রক্তের অক্ষরে।
সে-নামে আমার দেশ এই মাটি অমর কবিতা
স্বপ্নের ভেতরে আমি সমুদ্রের কণ্ঠে পাঠ করি–
আমার আত্মার নিচে সুর ওঠে অনন্তকালের।
সহস্র বুলেট কিংবা ওই মৃত্যু পরাজিত হয়
একটি নামের কাছে, যে-নামেই প্রত্যেক মুহূর্তে
অদৃশ্য গোলাপ ফোটে হৃদয়ের শোকার্ত বাগানে।
২.
আগস্ট আমার কাছে দীর্ঘ এক খুন ঝরা নদী,
যে নদীর আর্তনাদে সাড়া দিতে ফতুর হয়েছে
এ বাংলার শত নদী বিল আর হাওরের পানি।
পাখির পালক থেকে খসে পড়ে নিঃশব্দ নিঃশ্বাস;
ঘড়ির ডায়ালে বসে আততায়ী সময় শিকারী
বন্দুক উঁচিয়ে থাকে সর্বক্ষণ সুন্দরের দিকে–
তবুও সুন্দর ভয়ে পরাজয় স্বীকার করেনি।
শ্রাবণে আগস্ট যেন বেদনার বৃষ্টি হয়ে ঝরে।
চুয়ান্ন হাজার বর্গমাইল ব্যাপ্ত পিতার সমাধি
অপূর্ব সুগন্ধি জলে ধুয়ে দেয় পরম আদরে
খোদার ফেরেস্তাকুল; অলৌকিক গায়েবি ডানায়
কাল থেকে মহাকালে শূন্য ছেড়ে মহাশূন্যে ওড়ে
একটি ক্যানারি পাখি–উড়তে উড়তে আমাকে বলেছে,
মানুষ যদিও মরে জাতিপিতা কখনো মরে না।
৩.
দৃশ্যটা কেমন ভয়ংকর হিংস্রতার হতে পারে
একবার চোখ খুলে তা দেখো তাকিয়ে! তুমি মগ্ন
গভীর ঘুমের মধ্যে, যে-ঘুমে বিচিত্র স্বপ্ন দেখছো,
যেমন একটা স্বপ্ন-এক জোড়া মেহেদি রাঙানো
অপূর্ব সুন্দর হাত কী মধুর শরীরী আবেগে
তোমাকে জড়িয়ে ধরে আছে, আর তুমি মহানন্দে
বেলুনের মতো উড়তে উড়তে ঘুরতে লাগলে মহাশূন্যে;
হঠাৎ বন্দুক থেকে গুলি ছুড়তে ছুড়তে কতিপয়
হিংস্র জানোয়ার তোমার চোখের আলো চিরতরে
বন্ধ করে দেয়; তারপর রক্তে ভাসে মানচিত্র–অমাবস্যা গিলে খায় চন্দ্র-সূর্য নিথর নীলিমাঃ
দৃশ্যটা কল্পনা করে তুমি যদি নিশ্চিন্তে ঘুমাও
তাহলে বলতেই হবে তুমি আস্ত একটা গণ্ডার–
জনারণ্য ছেড়ে তুমি ফিরে যাও জঙ্গলে।