প্রাথমিক শিক্ষার গুণোগত মানোন্নয়নে একজন সহকারি শিক্ষকের ভূমিকা
দৈনিক সিলেট ডট কম
জুলেখা আক্তার: একজন শিক্ষক বিদ্যালয়ের জন্য নিবেদিত প্রাণ ।একজন সহকারি শিক্ষক পারেন ফলপ্রসূ শিক্ষাদানের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তিকে দৃঢ় করতে । শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড।একটি সুশিক্ষিত জাতি পারে দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ।যে কোন দেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য মানসম্মত শিক্ষার বিকল্প নেই। আর এই মানসম্মত শিক্ষার মূল বুনিয়াদ হলো প্রাথমিক শিক্ষা । শিক্ষার মান উন্নত করতে একজন সহকারি শিক্ষকের ভূমিকা অপরিসীম । শিক্ষক শুধু শিক্ষকতা করেন না , তিনি সমাজ ও জাতি গড়ার কারিগর । একজন সহকারি শিক্ষক নিয়মিত স্কুলে আসেন। দৈনিক সমাবেশ দিয়ে দিনের কার্যক্রম শুরু করেন।বিদ্যালয়ের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা থেকে শুরু করে প্রতিটি কাজ অত্যন্ত নিপুণ ভাবে করে থাকেন ।এমনকি যথাযথ নিয়ম মেনে উপকরণ ও পাঠপরিকল্পনা নিয়ে ফলপ্রসূ ও আনন্দদায়ক পাঠদান সম্পন্ন করেন। রুটিন মোতাবেক মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে পাঠদান সম্পন্ন করেন। বিদ্যালয়ে অভিভাবকদের সাথে সমন্বয় করে কিভাবে শিখন শেখানো কার্যাবলী আরো ত্বরান্বিত করা যায় তা নিয়ে তাদের সাথে মতবিনিময় করা হয়। এ ছাড়া স্কুল, ইউনিয়ন ,উপজেলা ,জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে বিভিন্ন ক্রীড়া সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে মূখ্য ভূমিকা পালন করেন।শিক্ষার্থীদের নৈতিক মূল্যবোধে বিকাশসাধন ,সামাজিক ,মানবিক ,নান্দনিক ,বিজ্ঞানসম্মত ও উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখানো ।তাছাড়া শিক্ষার্থীদের শারীরিক বিকাশের জন্য খেলাধুলার ব্যবস্থা করেন ।শিক্ষার্থীদের আত্মোপোলব্ধির জন্য শিক্ষক প্রয়োজনে উদ্ভাবনী ক্ষমতা রাখেন।একজন সহকারি শিক্ষক হন সদালাপী ,বিনয়ী, কর্মঠ ,বিচক্ষণশীল,দুর্দশি ,সহানুভূতিশীল ,সহমর্মি,সহযোগী যা শিক্ষার্থীদের ও গুনান্বিত করে। বিভিন্ন শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানে (মিনা মেলা ,হাত ধোয়া দিবস )বক্তব্যের মাধ্যমে শিশুদের মনে সহমর্মিতা ও পরিচ্ছন্নতাবোধ জাগ্রত করে।এমনকি বিভিন্ন দিবসসমূহ শিক্ষকরা গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করেন। শিক্ষার্থীদের নৈতিক মূল্যবোধ বিকাশে ও পরোপকারী হতে স্কাউটিং ও গার্লস গাইড সংগঠন গঠন করেন। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নতির চরম পর্যায়ের এই যুগে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা মোকাবিলা করতে হয়। এরুপ প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে দক্ষতা অর্জন অপরিহার্য। শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করতে, ঝরে পড়া রোধ করতে ও পড়ালেখায় আগ্রহী করতে শিক্ষক বিভিন্নভাবে সাহায্য ও সহযোগিতা করে থাকেন(যেমন-খাতা, কলম,পেন্সিল ইত্যাদি)। বিভিন্নভাবে উৎসাহ প্রদান করেন।এছাড়া শারীরিকভাবে অক্ষম শিক্ষার্থীদের বিশেষ যত্ন নেন।আবার গরিব শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্ম প্রদান করেন। হাতের কাজের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কারিগরি শিক্ষা জ্ঞান দান করেন।তেমনি চিত্রাংকন করানোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল মেধার বিকাশ ঘটান। তাছাড়াও মিড ডে মিল, ক্লাস পার্টি ইত্যাদির মাধ্যমে সামাজিকতা, ভ্রাতৃত্ববোধ, সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেয়া শেখান।হোম ভিজিটের মাধ্যমে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ে আনেন।প্রাথমিক শিক্ষার পাশাপাশি পরিবেশের সঙ্গে শিক্ষকের অভিযোজনে সহায়তা করেন।শিক্ষক নতুন পরিবেশে কিভাবে খাপ খাইয়ে চলতে হয় তাও সুস্পষ্টভাবে শিক্ষাদান করেন।সমাজের একজন উৎপাদনশীল ও সক্রিয় নাগরিক হতে শিক্ষকের ভূমিকা অপরিসীম। শিক্ষক হচ্ছেন সমাজের প্রকৃত হিরো যাঁরা জ্ঞানের দরজা খুলে দিয়ে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে সমৃদ্ধ করে তোলেন। একজন শিক্ষক শিখন শেখানো কার্যক্রমে যথার্থ ভূমিকা পালন করেন, তিনি বিষয় বস্তুকে মনস্ত এবং যুক্তিসম্মতভাবে সংগঠিত করে শিক্ষার্থীর শিখনকে সহজ করে তোলেন।এমনকি সাম্প্রতিক জ্ঞানদান করেন।শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রযুক্তির উপর্যুক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে নিজের ভূমিকা আরো বিজ্ঞানসম্মত এবং উৎকর্ষ স্তরে নিয়ে যেতে শিক্ষক প্রয়াসী হোন।শিক্ষক শিক্ষার্থীদের জ্ঞানার্জনে উৎসাহ দেন, কৌতূহলী করে তোলেন।আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষকে বিভিন্ন প্রশাসনিক দায়িত্ব যেমন ছাত্রভর্তি, শিশু জরিপ, শিক্ষার্থীর উপস্থিতি রেকর্ড এবং অন্যান্য সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী সংগঠন ও পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। তাছাড়া বর্তমান সময়ে শিক্ষক শুধু পড়ান না তিনি শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দান করেন।বিদ্যালয়ে পঠন পাঠনের উন্নতি এবং শিক্ষাসংক্রান্ত সমস্যা যাতে বিদ্যালয়েই সমাধান করা যায় সে ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।মনে রাখবেন,একটা বই একটা কলম, একটা বাচ্চা এবং একজন শিক্ষক সারা বিশ্বের ছবিটাই বদলে দিতে পারে। চক ও চ্যালেঞ্জ এ দুয়ের মিশ্রণে যেকোনো সময়ই যে কারো জীবন বদলে দিতে পারে। যেকোনো স্বাধীন দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে একজন শিক্ষকের আদর্শ এবং অধ্যবসায়ের উপর।শিক্ষকতা একটি মহান পেশা।সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষই শিক্ষকদের সম্মান করে থাকেন।শিক্ষকের এই পেশাকে আরো ফল্প্রসূ ও উন্নত করার জন্য শিক্ষকদের আরো বেশি প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। শিক্ষকদের যথাযথ মূল্যায়নের মাধ্যমে আরও বেশি উৎসাহিত করতে হবে যাতে এই পেশায় আরো বেশি মনোনিবেশ করা যায়।
লেখক:সহকারী শিক্ষক,ঘোষগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
গোলাপগঞ্জ, সিলেট