মিসওয়াক নবীজী (স.) এর সুন্নত
দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
নবীজির অন্যতম সুন্নত মিসওয়াক। এটি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম। মহান আল্লাহ জিবরাঈল (আ.)-এর মাধ্যমে মিসওয়াকের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। নবীজি (সা.)-ও এই আমলকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতেন। তিনি বলেছেন, যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্টকর হওয়ার আশঙ্কা না করতাম, তাহলে তাদের জন্য তা ফরজ করে দিতাম। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু উমামাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, তোমরা মিসওয়াক করো। কেননা মিসওয়াক মুখ পবিত্র ও পরিষ্কার করে এবং মহান প্রভুর সন্তুষ্টি লাভের উপায়। আমার কাছে যখনই জিবরাঈল (আ.) এসেছেন তখনই আমাকে মিসওয়াক করার উপদেশ দিয়েছেন। শেষে আমার আশঙ্কা হয় যে, তা আমার ও আমার উম্মতের জন্য ফরজ করা হবে। আমি যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্টকর হওয়ার আশঙ্কা না করতাম, তাহলে তাদের জন্য তা ফরজ করে দিতাম। আমি এত বেশি মিসওয়াক করি যে, আমার মাড়িতে ঘা হওয়ার আশঙ্কা হয়। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৮৯)
নবীজি (সা.) এই আমলটিকে এতটাই গুরুত্ব দিতেন যে মৃত্যুর পূর্বক্ষণেও তিনি মিসওয়াক করেছেন বলে বর্ণনা পাওয়া যায়। (বুখারি, হাদিস : ৪৪৫১)
পাক-পবিত্রতা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মুমিনের অনন্য ও স্বভাবজাত রুচি-বৈশিষ্ট্যের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। তাই শুধু এই উম্মতই নয়, বরং যুগ যুগ ধরে সব নবী-রাসুলের স্বভাবজাত বিষয়ের একটি ছিল মিসওয়াক। প্রিয় নবীজি (সা.)-এর হাদিসে এর প্রমাণ পাওয়া যায়।
আবু আইয়ুব আল-আনসারি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, চারটি জিনিস নবীদের চিরাচরিত সুন্নত। লজ্জা-শরম, সুগন্ধি ব্যবহার, মিসওয়াক করা এবং বিয়ে করা। (তিরমিজি, হাদিস : ১০৮০)
তাই প্রতিটি মুমিনের উচিত মিসওয়াকের সুন্নতকে গুরুত্বসহ আঁকড়ে ধরা। নবীজি (সা.) প্রতিদিন বহুবার মিসওয়াক করতেন। নিম্নে তাঁর মিসওয়াকের সময়গুলো তুলে ধরা হলো—
নামাজের সময় : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, আমার উম্মতের জন্য যদি কষ্টকর মনে না করতাম তবে তাদেরকে প্রত্যেক সালাতের সময় মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম। (নাসায়ি, হাদিস : ৭)
অজুর সময় : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, আমার উম্মতের জন্য যদি কষ্টকর মনে না করতাম তবে তাদেরকে প্রত্যেক অজুর সময় মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম। (মুয়াত্তা মালেক, হাদিস : ১৪৫)
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আম্মাজান আয়েশা (রা.) বলেন, দিনে বা রাতে যখনই রাসুল (সা.) ঘুম হতে জাগ্রত হতেন অজুর পূর্বে মিসওয়াক করে নিতেন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৪৯০০)
কোরআন তিলাওয়াতের সময় : সামুরাহ (রা.) কর্তৃক বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, মিসওয়াক করে তোমরা তোমাদের মুখকে পবিত্র করো। কারণ মুখ হলো কোরআনের পথ। (বায়হাকি)
ঘরে প্রবেশ করে মিসওয়াক : আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) যখন ঘরে প্রবেশ করতেন প্রথমে মিসওয়াক করতেন। (মুসলিম, হাদিস : ২৫৩)
ঘুম থেকে উঠে মিসওয়াক : আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ঘুমানোর সময় মিসওয়াক পাশে রাখতেন। ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে প্রথমেই তিনি মিসওয়াক করতেন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৫৯৬৯)
ইমাম নববি (রহ.)-এর মতে, খাওয়ার পরও মিসওয়াক করা মুস্তাহাব।