আশীষ দে’র ‘সিলেটে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন’ আত্মত্যাগের এক রক্তাক্ত উপখ্যান
![](https://dainiksylhet.com/files/uploads/2023/03/328763926_5898571466886227_6740111208473714638_n.jpg)
আশীষ দে :
‘স্বাধীনতা’ মানুষের আজন্ম লালসা। মানুষ জন্মগতভাবেই স্বাধীনচেতা। তারা স্বাধীনভাবে কথা বলতে চায়। স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে চায়। স্বাধীনভাবে বাঁচতে চায়। নিজের স্বাধীনতার উপর কোনো আঘাত- মানুষ মেনে নিতে পারেনা।
পরাধীনতার শিকল ভেঙে নিজের দেশ ও জাতিকে মুক্ত করার জন্য অনায়াসে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে পৃথিবীর বহু জাতি। বাঙালি জাতি তাদের অন্যতম এবং অগ্রগণ্য। একাত্তরের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে ত্রিশ লাখ বাঙালির প্রাণ ও দুইলাখ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে চিরআকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে বাঙালি জাতি প্রমাণ করেছে যে তাদেরকে কোনোভাবেই দাবায়ে রাখা যায় না। প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলে জুড়ে রয়েছে পাকিস্তানি নরপিশাচদের অত্যাচার, নির্যাতনের ভয়াবহ নিদর্শন। বাংলাদেশ নামক মানচিত্রটাই যেন একাত্তরের প্রকান্ড এক বধ্যভূমি। শহীদের রক্তের দাগ লেগে আছে বাংলাদেশের পুরো ভূখণ্ডে। স্বজনহারা ও নির্যাতিতদের আহাজারিতে চিরকরুণ হয়ে আছে বাংলার স্নিগ্ধ বাতাস। আজও বাতাসে কান পাতলে সন্তানহারা মায়ের আর্তনাদে গায়ে কাটা দিয়ে ওটে যেন।
একাত্তর সালে বিরতিহীন নির্মম গণহত্যাযজ্ঞের অংশ হিসেবে সারা বাংলাদেশের ন্যায় বৃহত্তরও সিলেটেও পাকিস্তানি হানাদাররেরা রক্তের হোলি খেলায় মেতে উঠছিলো। তারা স্বাধীনতার স্বপক্ষের বিশেষ করে প্রগতিশীল মানুষ ও সংখ্যালঘু বাঙালি হিন্দুদের উপর গণহত্যাযজ্ঞের স্টিমার চালিয়েছিলো। সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জে অগণিত মানুষকে হত্যা ও নির্যাতন করেছিলো পাকিস্তানি ঘাতক সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় সহচরেরা। এ অঞ্চলে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা ও নির্যাতনের বেদনাদায়ক অজানা ঘটনাগুলোর সন্ধানে নেমেছিলেন সিলেটের একজন তরুন সাংবাদিক- আশীষ দে। প্রায় দুই বছর সময় ধরে বৃহত্তর সিলেটের শহর-বন্দরে ও গ্রামাঞ্চলে চষে বেড়িয়ে তিনি সংগ্রহ করেছেন একাত্তর সালে পাক হানাদারদের নির্মমতার অর্ধশতাধিক ঘটনা। শহীদদের পরিচয়সহ তিনি বিস্তারিত বর্ণনায় সংকলন করেছেন ‘সিলেটে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন’ বইখানা। মাত্র অল্প কিছুদিনেই ‘সিলেটে মুক্তি যুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন’ বইয়ের প্রথম মুদ্রনের প্রায় সবকটি কপি সোল্ড আউট হয়ে যায়। সহজ সরল ও প্রাঞ্জল ভাষায় লেখা এ বইটি তুমুল পাঠকপ্রিয়তা লাভ করতে সক্ষম হয়। এ বইয়ের প্রকাশনাকর্মে নিজেকে ক্ষুদ্রতরভাবে হলেও সম্পৃক্ত করতে পেরে আমি গর্বিত বোধ করছি। ‘সিলেটে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন’ গ্রন্থে রাজনগর উপজেলার ধরবাড়ী গণহত্যা, পাঁচগাও গণহত্যা, হবিগঞ্জের মাকালকান্দি গণহত্যা, কৃষ্ণপুর গণহত্যা, সিলেটের তারাপুর গণহত্যা, ব্রাহ্মণশাসন গণহত্যাসহ অর্ধশতাধিক গণহত্যা ও নির্যাতনের বিস্তারিত বিবরন আগামী প্রজন্মের কাছে মহান মুক্তিযুদ্ধের এক অমূল্য দলিল হয়ে চির অক্ষয় হয়ে থাকবে বলে আমার বিশ্বাস। ‘সিলেটের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন’ গ্রন্থখানা অধিকতর প্রচার লাভ করুক এবং লেখক আশীষ দে এইরকম মহান কর্মযজ্ঞে নিজেকে নিয়োজিত রাখবেন এই কামনা করি। উল্লেখ্য ‘সিলেটে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন’ বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান ও জর্জিয়ায় ২৬ শে মার্চ তারিখে অনুষ্ঠিত হওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে।