শাবিতে শিক্ষক সমিতির মানববন্ধন
শাবিপ্রবি প্রতিনিধি :
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক অভিন্ন আর্থিক নীতিমালা ও হিসাব ম্যানুয়েল এর প্রতিপালন নির্দেশ প্রত্যাখ্যান এবং পিএইচডি ইনক্রিমেন্ট বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধন করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন ‘শাবি শিক্ষক সমিতি’।
বৃহস্পতিবার (২২ জুন) দুপুর ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এ মানববন্ধন করেন তারা।
মানববন্ধনে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. কবীর হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ড. মাহবুবুল হাকিমের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুল ইসলাম, সাবেক শাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. তুলসী কুমার দাসসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষক।
এসময় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুল ইসলাম বলেন, ইউজিসি যে অভিন্ন আর্থিক নীতিমালা প্রণয়ন করেছে এটা ‘কমান্ড এডমিনিস্ট্রেটিভ সিস্টেম’। এটা কোনো সিস্টেম নয়, শুধু একটা চিঠি পাঠিয়ে দিয়ে বললো বাস্তবায়ন করতে। এটা হাস্যকর এবং অসম্মানজনক বিষয় । আমাদেরকে বারবার বিভিন্ন বিষয় চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমরা কি এতই দূর্বল! এ নীতিমালা সারা দেশের শিক্ষকরা প্রত্যাখ্যান করেছে এবং যে পদ্ধতিতে তারা এ নির্দেশ পাঠিয়েছে অবশ্যই ইউজিসিকে এটা বাতিল করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা এ নীতিমালা তো গ্রহণ করবোই না, বরং এ নীতিমালা কেন প্রণয়ন করেছে সেটার জবাবদিহিতা করতে হবে তাদের। আমরা এ নীতিমালা প্রত্যাখ্যানের জন্য ৯ জুলাই পর্যন্ত সময় দিয়েছি। এ সময়ের মধ্যে প্রত্যাখ্যান না করলে শিক্ষকরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে।
মানববন্ধনে শাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. কবীর হোসেন বলেন, আমাদের স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় কে ইউজিসি কর্তৃক অভিন্ন আর্থিক নীতিমালা সম্পর্কিত যে পারিতোষিক নির্ধারণ করেছে, তা শাবি শিক্ষক সমিতি প্রত্যাখ্যান করেছে। তিনি বলেন, ইউজিসি কর্তৃক আজ বিশ্ববিদ্যালয় গুলোকে আমলাতন্ত্র দ্বারা হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা চলছে। ইউজিসি’র কে বা কারা এসব নীতিমালা প্রণয়ন করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অস্থিতিশীল করতে চায়? তাদেরকে সরকার চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আনার দাবি জানান তিনি।
পিএইচডি’র ইনক্রিমেন্ট বিষয়ে তিনি বলেন, ২০১৫ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত যেসব শিক্ষক পিএইচডি করেছে অথচ ইনক্রিমেন্ট বন্ধ থাকায় তারা তিনটি ইনক্রিমেন্ট থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এসব শিক্ষক যদি ইনক্রিমেন্ট না পায় আর ২০২১ সালের পরে যারা পিএইচডি করেছে তারা যদি ইনক্রিমেন্ট পায়, ফলে তাদের মধ্যে জ্যৈষ্ঠতার বৈষম্য সৃষ্টি হবে। আমি ধিক্কার জানাই ঐসকল আমলাদেরকে এবং নীতি নির্ধারকদের যারা কলেজের শিক্ষকদের ইনক্রিমেন্ট অব্যাহত রেখেছে কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ইনক্রিমেন্ট ২০১৫ থেকে ২০২১ পর্যন্ত বন্ধ রেখেছে। তাদের সাহস দেখে আমি অভিভূত। তারা এত সাহস পায় কোথায়? বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ হাজার শিক্ষক আছে, ঐক্যবদ্ধভাবে যদি ডাক দেওয়া হয় তাহলে তাদের গদি নিয়ে টানাটানি শুরু হবে। আমরা চাই না আমাদেরকে অসম্মান করা হোক, আমরা সম্মানের সাথে শিক্ষকতা করতে চাই। আমার একটা শিক্ষকে যদি অসম্মান করা হয়, শাবিপ্রবির শিক্ষকরা গর্জে উঠবে।
এতে সাবেক শাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড. তুলসী কুমার দাস বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিকাশের বিরুদ্ধে একটার পর একটা নীতিমালা চাপিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। এভাবে চলতে থাকলে মেধাবী শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে চাইবে না। কারণ মনে করবে এখানে শিক্ষকদের ক্ষমতা, অর্থ ও জীবনের জৌলুস বলতে কিছু নাই। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় ,পড়াশোনায় ও গবেষণায় বিকাশ গঠবে না। এসব নীতিমালা প্রণয়ন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মত সম্মানীয় একটা পেশাকে সম্মানহানী করা হয়ে হচ্ছে। এইভাবে চলতে থাকলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এক সময় মুখ থুবড়ে পড়বে। এখনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যারা সংশ্লিষ্ট আছে সবাইকে সম্মিলিতভাবে এসব কালাকানুনের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে হবে।