সেরা কোন লিগ

দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
ইউরোপ থেকে দু’জনই বিদায় নিয়েছেন, তারপরও যেন মেসি-রোনালদোর শ্রেষ্ঠত্বের বিতর্ক থামছে না। ঝিমিয়ে পড়া বিতর্কটা ক’দিন আগে নতুন করে উস্কে দিয়েছেন খোদ ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। পর্তুগিজ এ তারকা সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এমএলএস (মেজর সকার লিগ) থেকে সৌদি লিগ অনেক এগিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের এমএলএসকে তিনি অবসর নেওয়া ফুটবলারদের ঠিকানা হিসেবেও কটাক্ষ করেছেন। দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী লিওনেল মেসিকে এমএলএস ক্লাব ইন্টার মায়ামি আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপনের পরদিনই এ মন্তব্য করলেন রোনালদো। এটা কী কাকতালীয়? নাকি জেনেবুঝেই এমন মন্তব্য করেছেন রোনালদো? সে যা-ই হোক, তাঁর এ মন্তব্যে দুই লিগের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের বিতর্কও চলে এসেছে। এর জের ধরেই প্রভাবশালী ব্রিটিশ দৈনিক ‘ডেইলি মেইল’ মেসির এমএলএস ও রোনালদোর সৌদি প্রো লিগের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা করেছে। পাঁচটি পয়েন্টে করা আলোচনায় ৩-২ ব্যবধানে এগিয়ে মেজর সকার লিগ। এ তুলনার উল্লেখযোগ্য অংশ সমকাল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
তারকা খেলোয়াড়
মেজর লিগের অধিকাংশ খেলোয়াড়ই অভিজ্ঞ। এই বিষয়টিকে একটু চাঁছাছোলাভাবে বলা যায়, সেরা সময় পেরিয়ে আসাদের ঠিকানা এ লিগ। এর মধ্যে আক্রমণভাগের অভিজ্ঞ তারকা খেলোয়াড় রয়েছেন, যাদের পারিশ্রমিক লিগের বেতন কাঠামোতে সীমাবদ্ধ থাকে না। সাধারণত ইউরোপে খেলা বর্ষীয়ান তারকাদের এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ তালিকায় আছেন ক্রিশ্চিয়ান বেনতেকে (৩২), লরেঞ্জো ইনসিনিয়ে (৩২), হ্যাভিয়ার হার্নান্দেজ (৩৫) ও ডগলাস কস্তা (৩২)। প্রিমিয়ার লিগে খেলেছেন কিন্তু এখন হয়তো সেখানে সুযোগ পাবেন না, এমন ক’জনও এ তালিকায় রয়েছেন। তারা হলেন রাভেল মরিসন, ভিক্টর ওনিয়ামা, তেমু পুক্কি ও ম্যাথেউস ক্লিচ। এ ছাড়া ফেদেরিকো বার্নাদেসচি, জাদরান শাকিরির মতো যারা এখনও ইউরোপের সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলার সামর্থ্য রাখেন, তারাও রয়েছেন। আর ইন্টার মায়ামিতে সদ্য যোগ দেওয়া বার্সা ট্রায়ো লিওনেল মেসি, সার্জিও বুসকেট এবং জর্দি আলবা তো রয়েছেনই। তারপরও তারকা খেলোয়াড়দের তুলনা করতে গেলে এগিয়ে থাকবে সৌদি প্রো লিগ।
কাতার বিশ্বকাপের পর ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে টানার মধ্য দিয়ে শুরু তারকাদের আগমন। বিশাল পারিশ্রমিক দিয়ে রিয়াল মাদ্রিদ স্ট্রাইকার করিম বেনজেমাকে কিনে নেওয়ার পর সবাই রীতিমতো চমকে যায়। চেলসির মিডফিল্ডের অন্যতম ভরসা এনগোলা কান্তেকে নেওয়াও চমক ছিল। লিভারপুল অধিনায়ক জর্ডান হেন্ডারসনও আল-ইত্তেফাকে নাম লেখাতে যাচ্ছেন। ম্যানচেস্টার সিটিকে ট্রেবল জেতানো রিয়াদ মাহারেজের আল-আহলিতে যোগ দেওয়া এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল খেলা মার্সেলো ব্রোজোভিচের মতো তারকাকে নিয়েছে সৌদি লিগ। তাই খেলোয়াড় দলভুক্ত করায় এমএলএস থেকে অনেক এগিয়ে সৌদি লিগ। এই তুলনায় সৌদি প্রো লিগ ১ গোলে মেজর সকার থেকে এগিয়ে থাকবে।
ফুটবলের মান
তবে এত এত তারকা খেলোয়াড় টানাই কিন্তু সর্বোচ্চ মানের ফুটবলের নিশ্চয়তা দেয় না। বিশাল বিনিয়োগ করা চায়নিজ লিগ ও রুশ লিগের মতো অবস্থা তাদের হয় কিনা, সেটা নিয়েও অনেকে শঙ্কিত। তাই সৌদি লিগে একটা ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। উয়েফা প্রেসিডেন্ট আলেকজান্দার সেফেরিন সৌদির আচমকা বিনিয়োগের সমালোচনা করে বলেছেন, তারকা খেলোয়াড়দের পেছনে কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ ঢেলে জাঁকজমক লিগ আয়োজন করে ফুটবলের উন্নতি করা যায় না। বরং এসব অর্থ তৃণমূলে ব্যয় করে মানসম্মত একাডেমি বানিয়ে এবং বিদেশ থেকে ভালো কোচ এনে দেশের ফুটবলের ভিত শক্ত করলে ভালো ফল আসবে।
সেদিক থেকে বরং একটা নিজস্ব গতিতে এগিয়ে চলেছে এমএলএস। বাস্কেটবল ও বেসবল হলো যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় খেলা। এর মধ্যেও সেখানে ফুটবলের একটা ঐতিহ্য রয়েছে। সেই সত্তরের দশকে নিউইয়র্ক কসমসে ফুটবল সম্রাট পেলে খেলেছিলেন। ইউরোপের সেরা ক্লাবগুলোর মতো না হলেও সেখানে ফুটবলের একটা কাঠামো গড়ে উঠেছে। তাই ফুটবলের মানের দিক থেকে এমএলএস ১-০ গোল দেবে সৌদি প্রো লিগকে।
জীবনধারা
লিওনেল মেসির জন্য বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব দিয়েছিল সৌদি আরব। তারপরও এ তারকার সেখানে না যাওয়ার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের উন্নত জীবনের হাতছানি প্রধান কারণ বলে মনে করেন অনেকে। জন্মস্থান আর্জেন্টিনা ও দীর্ঘদিন ক্লাব ফুটবল খেলা ইউরোপে তিনি যে ধরনের জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়েছেন, সৌদি আরবে তেমনটা পাবেন না। বরং সৌদি আরবের নানা বিধি-নিষেধের কারণে তাঁর স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। সুনির্দিষ্ট করে বলতে গেলে, ইউরোপের ‘নাইট লাইফ’ সৌদিতে পাবেন না। সেটা বরং যুক্তরাষ্ট্রে ভালো মতো পাবেন। তাই এমএলএস এখানে ১-০ গোলে এগিয়ে থাকবে।
বেতন-ভাতা ও সম্মানী
লিওনেল মেসি এবং তাঁর দুই বার্সা সতীর্থ বার্জিও বুসকেট ও জর্দি আলবাকে অবশ্যই মোটা পারিশ্রমিক দেওয়ার কারণেই তারা ইন্টার মায়ামিতে গেছেন। যদিও তাদের জন্য সৌদি লিগ থেকে এর চেয়ে অনেক বেশি পারিশ্রমিকের প্রস্তাব ছিল। মেসি ইন্টার মায়ামিতে যোগ দিয়েছেন বার্ষিক ৪৫ মিলিয়ন পাউন্ড পারিশ্রমিকে। অথচ সৌদি লিগের দল আল-নাসরে রোনালদো প্রতি বছর ১৭৫ মিলিয়ন পাউন্ড বেতন পাবেন। যদিও ইন্টার মায়ামির বেতনের প্যাকেজে মেসি ফুটবলারদের আয়ের তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছেন। তবে এমএলএস থেকে সেরা দশে একমাত্র তিনিই রয়েছেন। সৌদিতে করিম বেনজেমা, হেন্ডারসন, ব্রোজোভিচরাও মেসির চেয়ে বেশি বেতন পাবেন। নিশ্চিতভাবেই এ তুলনায় মেসিদের লিগকে ১ গোল দেবে রোনালদোদের সৌদি প্রো লিগ।
দর্শক উন্মাদনা
ইউরোপের মতো ফুটবল নিয়ে এত উন্মাদনা নেই যুক্তরাষ্ট্রে। এর মধ্যে এমএলএসের কিছু ক্লাবের খেলায় খুব একটা দশর্কও হয় না। তাই সেখানে মাঠে বিস্ফোরণোন্মুখ আবহের সৃষ্টি হয় না। তারপরও মেজর সকার লিগের অধিকাংশ ক্লাবের খেলায় ভালোই দর্শক হয়। সেখানে গড়ে প্রতি ম্যাচে ১০ হাজারের বেশি দর্শক উপস্থিত থাকে। সৌদি আরবে লিগ এখনো ঠিকঠাক মতো দাঁড়ায়নি। সেখানে দর্শকের উপস্থিতি খুবই কম। কোন বিশেষ উপলক্ষে মানুষ সেখানে মাঠে যায়। তাই দর্শকের দিক থেকে এমএলএস ১-০ তে এগিয়ে থাকবে।