তাহিরপুরে চারটি গ্রামে বিদ্যালয়ের অভাবে শিক্ষাবঞ্চিত শিশুরা
তাহিরপুর প্রতিনিধি :
যুগযুগ ধরে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টাংগুয়ার হাওর তীরবর্তী বিনোদপুর, পনিয়াখালি, কান্দাপাড়া, রতনপুর চারটি গ্রাম একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ। গ্রাম গুলোর চার পাশে টাংগুয়ার হাওরসহ বিভিন্ন হাওর বেষ্টিত। প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় বর্ষা নৌকা আর হেমন্তকালে পায়ে হেটে যেতে হচ্ছে চার কিলোমিটার দুরে বিদ্যালয়ে। বাড়ি থেকে স্কুল দুরে থাকায় শিশুরাও স্কুলে যেতে চায় না। ফলে শিক্ষা জীবনের শুরুতেই শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ঐসব গ্রামের কোমলমতি তিন শতাধিক শিশু।
এসব গ্রামের ৯৫ ভাগ মানুষই হাওর থেকে মাছ ধরে ও কৃষি কাজ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন বিধায় নিজ সন্তানদের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে আতংকিত অভিভাবকগন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ৪টি গ্রামে প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবারের বসবাস। পরিবার গুলোতে ৫-১০বছর বয়সী শিশু রয়েছে প্রায় তিনশতাধিক। গ্রাম গুলোর পশ্চিম-উত্তরে চার কিলোমিটার দুরে বীরেন্দ্রনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,পশ্চিমে টাংগুয়ার হাওর অপর পাড়ে প্রায় ৬কিলোমিটার দূরবর্তী ইন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,পুর্বদিকে এরালিয়াকোনা হাওরের অপর পাড়ে মন্দিয়াতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পুর্ব-উত্তর দিকে ৫কিলোমিটার দুরবর্তি রঙ্গাছড়া নদীর অপর পাড়ে সোনাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অবস্থিত।
এই অবস্থায় চার গ্রামের প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী দীর্ঘদিন ধরে দুরবর্তী বিদ্যালয়ে গিয়ে লেখাপড়া করলেও শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাওয়ার অনীহা বাড়তে শুরু করেছে। এতে অভিভাবকরা সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন রয়েছেন।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়,বিনোদপুর গ্রামের এনামুল হক ২০০৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর তেত্রিশ শতক দানকৃত জায়গায় গ্রামবাসীর উদ্যোগে এনামপুর ও বিনোদপুর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামকরন করা হয়। ২০০৫ সালের ১লা জানুয়ারি বিনোদপুর গ্রামের জহিরুল ইসলাম বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নিয়ে আরো তিনজন সহকারি শিক্ষিকা নিয়ে বিনা বেতনে এলাকার শিশুদের পাঠদান শুরু করার দুই বছর চলার পর স্কুল পরিচালনা কমিটি গঠন করে ২৫ সেপ্টেম্বর ২০০৭ইং সালে শিক্ষকদের স্থায়ী ভাবে নিয়োগ দেয়।
২০১০সালে এফআইভিডিবির সহযোগীতায় নেদারল্যান্ডস সরকারের আর্থিক অনুদানে ১২লক্ষ ৭২হাজার তিনশত টাকা ব্যায়ে একটি স্কুল ভবন নির্মান করা হয়।২০০৭-১২ সাল পর্যন্ত গ্রাম বাসিন্দাদের অর্থায়নে একজন শিক্ষককে নিয়মিত বেতন প্রদান
করা হয়। প্রধান শিক্ষকসহ বাকি দুজন নিজ এলাকার কোমলমতি শিশুদের কথা বিবেচনা করে দীর্ঘ ৭বছর এখানে বিনা বেতনে পাঠদান করার পর শিক্ষকদের সংসারের অভাব অনটনের কারনে বিদ্যালয়টির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৩ সালে সারাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ হওয়ার সময় প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়টি সরকারিকরণের আশায় পুনরায় চালু করেন এবং স্কুলটির জাতীয়করনের জন্য ১৮ মে ২০১৭ইং তারিখে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে ফাইল জমা দেওয়া হয় যার ডাইরি নং-৪৪৭০ সিরিয়াল নং-৭৭। বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরে কোন উপায়ন্তর না পেয়ে তিনি এলাকার লোকজনকে নিয়ে স্কুলটি জাতীয়করনের লক্ষ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রকৌশলী মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের সহযোগীতা কামনা করলে সংসদ সদস্য ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ইং তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি ডিও লেটার প্রেরন করেন যার ডিও নং প্রমকা/সুনাম-১/০১৩/০৭১৬/১৮ স্মারক নং প্রমকা/সসকা/০১৩/০৪৭/১৮।
সায়লা বেগমসহ গ্রামের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, গ্রামে বিদ্যালয় না থাকায় আমাদের অনেক সহপাঠীরা স্কুলে যায়না আবার অনেকে লেখাপড়াও ছেড়ে দিয়েছে। আমাদের গ্রামে একটি বিদ্যালয় হলে আমরা লেখা পড়া করার সুযোগ পেতাম।
স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন,আমাদের মত নিজেদের পরবর্তি প্রজন্মও স্কুলের অভাবে লেখাপড়া করতে পারছে না। স্কুলটির জাতীয়করনের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানাই।
স্কুলটির জমি দাতা এনামুল হক বলেন,বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য ৩৩শতক জমি দান করে মানুষের দ্বারে-দ্বারে গিয়ে শুধু আশ্বাসই পেয়েছি। মৃত্যুর আগে বিদ্যালয়টির জাতীয়করন দেখে যেতে চাই।
স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহজাহান খন্দকার বলেন, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় শিক্ষার অভাবে শিশু-কিশোর ও যুব সমাজ বিপদগামী হচ্ছে। বিদ্যালয়টি জাতীয়করন হলে সু-শিক্ষা গ্রহণ করে একটি সুন্দর সমাজ গঠন করতে প্রয়োজন।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল খায়ের জানান, যেসবওও জায়গায় স্কুল নেই সেসব জায়গায় স্কুল স্থাপনের জন্য চলতি বছরের এপ্রিল মাসে একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অনেকেই এ প্রকল্পের আওতায় আমাদের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। আমাদের টিম মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করে যাচাই বাছাই করে যেসব জায়গায় স্কুলের বেশি প্রয়োজন সেসব জায়গায় স্কুল নির্মান করা হবে।