বিমানবন্দরে মোদির সঙ্গে আসলে কী হয়েছিল

দৈনিকসিলেটডেস্ক
দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে সদ্য-সমাপ্ত ব্রিকস বৈঠকে যোগ দেওয়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে দেশটির ‘দ্য ম্যাভেরিক’ নামে এক গণমাধ্যমের একটি প্রতিবেদন নিয়ে বিতর্ক যেন থামছেই না। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোদির বিমান যখন ওয়াটার্ক্ললুফ বিমান ঘাঁটিতে অবতরণ করে তখন তিনি বাইরে আসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
এর কারণ হিসেবে দ্য ম্যাভেরিক-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোদিকে স্বাগত জানাতে কেবল দেশটির একজন ক্যাবিনেট মন্ত্রীকে পাঠানো হয়েছিল। তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টিকে ভিত্তিহীন ও কল্পনাপ্রসূত বলে মন্তব্য করেছে।
গতকাল সাপ্তাহিক সংবাদসম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বলেন, এটা সম্পূর্ণ ভুল। সত্যি কথা বলতে, এটা কারো বিশুদ্ধ কল্পনার ফল। দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারও এই তথ্য ভুল বলে খারিজ করে দিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট বিমানবন্দরে ছিলেন এবং তিনিই প্রধানমন্ত্রী মোদিকে স্বাগত জানান।
সেইদিনের ঘটনার বিস্তারিত সম্পর্কে গত ২৩ অগাস্ট ডেইলি ম্যাভেরিক একটি খবর প্রকাশ করে। এর শিরোনাম ছিল ‘জটিল ত্রিভুজ প্রেমকাহিনী: রামাফোসার নজর ছিল শি জিনপিংয়ের দিকে, মোদি অসন্তোষ প্রকাশ করে বিমান থেকে নামতে অস্বীকৃতি’।
রিপোর্টে আরও বলা হয়, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা চীনা প্রেসিডেন্টকে বেশি খাতির করেছিলেন আর মোদিকে স্বাগত জানাতে একজন মন্ত্রীকে পাঠিয়েছিলেন। এই কারণে দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছিয়ে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বিমান থেকে নামতে অস্বীকার করেন।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে স্বাগত জানাতে স্বয়ং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা গিয়েছিলেন। পত্রিকাটি আরও লিখেছে, সিরিল রামাফোসা শি জিনপিংকে দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ‘অর্ডার অফ সাউথ আফ্রিকা দিয়ে ভূষিত করেন। সেই উপলক্ষ্যে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের বেশ কিছু যৌথ কর্মসূচী পূর্ব নির্ধারিত ছিল।
পত্রিকাটি আরও লিখেছে, সিরিল রামাফোসা যখন শি জিনপিংকে স্বাগত জানাতে ব্যস্ত ছিলেন, অন্যদিকে ওয়াটারক্লুফ বিমানঘাঁটিতে মোদিকে অভ্যর্থনা জানাতে তার মন্ত্রীপরিষদের একজন সদস্যকে পাঠিয়েছিলেন তিনি। একজন ক্যাবিনেট মন্ত্রী তাকে স্বাগত জানাতে আসায় অখুশি হন মোদি। বিষয়টি যখন বেশ জটিল হয়ে যায়, তখন তড়িঘড়ি ভাইস-প্রেসিডেন্ট পল শিপোক্সা মাশাতিলেকে বিমানবন্দরে পাঠিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন রামাফোসা।
তবে দক্ষিণ আফ্রিকার ভাইস প্রেসিডেন্টের মুখপাত্রও ডেইলি ম্যাভেরিকের প্রতিবেদনটিকে সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন, তিনি বলেছেন ওইরকম কোনো পরিস্থিতিই তৈরি হয়নি।
দেশটির সরকার বলেছে, ব্রিকসের সব সদস্য দেশকে আগে থেকেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে কে কোন রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানাবেন।
এ ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার সংবাদ পোর্টাল নিউজ টুয়েন্টিফোর জানিয়েছে, সেদেশের সরকার বলছে ব্রিকস দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধানদের কে স্বাগত জানাবেন তা আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
প্রতিবেদনে দেশটির ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সহযোগিতা বিভাগ’-এর (পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) মুখপাত্র লুঙ্গা নাচেনগেলেলেকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে যে ভারতকে আগাম জানানো হয়েছিল যে একজন মন্ত্রীই মোদিকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানাবেন।
দ্য সিটিজেন পত্রিকাও লুঙ্গা নাচেনগেলেলের একটি বিবৃতি ছেপেছে, যেখানে তিনি ভারতীয় প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মনোমালিন্যের খবর অস্বীকার করেছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার ভাইস-প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ভুকানি এমদে আবার মোদিকে নিয়ে ডেইলি ম্যাভেরিক-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনটি খারিজ করে দিয়ে সেটিকে ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করেছেন।
‘ভিওন টেলিভিশন’কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ডেইলি ম্যাভেরিকে যা প্রকাশিত হয়েছে তার একটি শব্দও সঠিক নয়।