শীতকালে সবজি লাউয়ের যতগুণ
দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
শীত মানেই চারিদিকে সবজির ছড়াছড়ি। গাজর, মূলা, পালং, বিট, শিম, বিনস, টমেটো, কড়াইশুঁটি আরো কতকিছু। এর মাঝে উঁকি দেয় অনেকেরই প্রিয় কচি লাউ। শীতের দিনে লাউ চিংড়ি, লাউ ঘণ্ট বা লাউয়ের পায়েস খেতে মন্দ লাগে না।
যদিও আমাদের দেশে সারা বছরই মাচায় ফলে লাউ। এই লাউয়ের বাংলা রূপকথায় দারুণ একটি জায়গাও রয়েছে। সেই সঙ্গে লাউয়ের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি। ফলে একাধিক রোগ সমস্যাও দূরে থাকে।এ ছাড়া লাউয়ের শাকও খেয়ে থাকেন অনেকে।
লাউয়ের পুষ্টি গুণ
প্রতি ১০০ গ্রাম লাউয়ে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট ২.৫ গ্রাম, প্রোটিন ০.২ গ্রাম, ফ্যাট ০.৬ গ্রাম, ভিটামিন-সি ৬ গ্রাম। এতে ক্যালসিয়াম ২০ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ১০ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৮৭ মিলিগ্রাম, নিকোটিনিক এসিড ০.২ মিলিগ্রাম রয়েছে। এ ছাড়া এতে রয়েছে খনিজ লবণ, ভিটামিন বি-১, বি-২, আয়রন।শীতের সবজি লাউয়ের রয়েছে অনেক উপকারিতা। যা গুণে শেষ করা যাবে না। কী সেই উপকারিতা, একনজরে দেখে নেওয়া যাক।
ওজন কমতে সাহায্য করে
কম ক্যালরির খাবার হিসেবে লাউ আদর্শ খাবার। লাউয়ে প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার থাকে এবং খুবই কম ক্যালরি ও ফ্যাট থাকে, কাজেই যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য লাউ একটি আদর্শ সবজি।
মায়ের দুধ বাড়ায়
লাউয়ে পানি বেশি থাকায় এটি মায়ের দুধ তৈরি করতে ও বাড়াতে কাজ করে। যেসব মায়েদের বুকের দুধ কম, তারা নিয়মিত লাউ খেলে দ্রুত ফলাফল পাবেন।
শিশুর নিরাপদ খাবার
বাচ্চার ৬ মাস হলেই মায়েদের চিন্তা কি খাওয়াবে। লাউকে সিদ্ধ করে চটকে ৬ মাসের পর থেকেই শিশুকে দেওয়া যাবে। কারণ এতে আছে ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, লৌহ, জিংক, ফসফরাস যা শিশুর বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশে দারুণ কাজ করে।
হার্টের জন্য ভালো
লাউয়ে কোলেস্টেরলের পরিমাণ শূন্য যা হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এতে বিদ্যমান ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমূহ হার্টের জন্য খুবই স্বাস্থ্যকর। তা ছাড়া রক্তের কোলেস্টেরল কমাতেও সাহায্য করে লাউ।
ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য
ডায়াবেটিস, জন্ডিস ও কিডনি রোগীদের উপকারী সবজি লাউ। ক্যালরির পরিমাণ কম থাকায় ডায়াবেটিক রোগীদের জন্যও লাউ যথেষ্ট উপকারী। লাউ ডায়াবেটিক রোগীদের অত্যধিক তৃষ্ণা কমাতেও সাহায্য করে। এ ছাড়া জন্ডিস ও কিডনির সমস্যার সমাধানেও উপকারী ভূমিকা রাখে লাউ।
হজমে সাহায্য করে
লাউয়ে প্রচুর পরিমাণে দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় ফাইবার ও পানি থাকে। দ্রবণীয় ফাইবার খাবার সহজে হজম করতে সাহায্য করে এবং হজম সংক্রান্ত সকল সমস্যা যেমন- কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট ফাঁপা ও এসিডিটির সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে। যাদের পাইলসের সমস্যা আছে তাদের জন্য লাউ খাওয়া অনেক উপকারী।
শরীর ঠাণ্ডা করে
গরমের সময়ে আমাদের শরীর থেকে যে পানি বের হয়ে যায় লাউ সেটার অনেকটাই পূরণ করে ফেলে। লাউয়ের মূল উপাদান হলো পানি (৯৬%), তাই লাউ খেলে শরীর ঠাণ্ডা থাকে। গরমের সময় লাউ খাওয়া উপকারী বিশেষ করে যারা প্রখর সূর্যতাপে কাজ করেন তাদের হিটস্ট্রোক প্রতিরোধে সাহায্য করে লাউ।
ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে
লাউ পাতা রান্না বা ভর্তা করে খেলে মস্তিষ্ককে ঠাণ্ডা রাখে এবং ঘুমের সমস্যা-সমাধানে সাহায্য করে। এই সবজি দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ইনসোমনিয়া বা নিদ্রাহীনতা দূর করে পরিপূর্ণ ঘুমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
মানসিক চাপ কমায়
লাউয়ের বেশিরভাগ অংশ পানি দ্বারা পূর্ণ, যা শরীরের ওপর তার শীতল প্রভাব ফেলে। ফলে মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে লাউ।
ত্বকের জন্য উপকারী
লাউ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে পেট পরিষ্কার রাখে, ফলে মুখে ব্রণ ওঠার প্রবণতাও কমে যায় অনেকটাই। ত্বকের ভেতর থেকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে লাউ, যাদের ত্বক তৈলাক্ত তাদের ত্বকের তৈলাক্ততার সমস্যা অনেকটাই কমে যায় লাউ খেলে।
প্রাকৃতিক মূত্রকারকের কাজ করে
লাউয়ে প্রচুর পরিমাণে পানি আছে। তাই যাদের প্রস্রাবের জ্বালা-পোড়ার সমস্যা আছে কিংবা প্রস্রাব হলদে হয় তাদের নিয়মিত লাউ খাওয়া উচিত। এ ছাড়া ডায়রিয়া, উচ্চমাত্রার জ্বর এবং অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে বের হয়ে যাওয়া পানি প্রতিস্থাপনে সাহায্য করে লাউ।